সময়মতো ফোর্সড সেল না করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে
Published: 13th, February 2025 GMT
শেয়ারবাজারে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো নিয়ম মেনে ফোর্সড সেলের উদ্যোগ না নিলে তার জন্য ঋণগ্রহীতা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে। এমন সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার উন্নয়নে গঠিত টাস্কফোর্স। সম্প্রতি টাস্কফোর্স মার্জিন ঋণ বা প্রান্তিক ঋণসংক্রান্ত বিধিবিধান সংশোধনে তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সেখানে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্তমানে শেয়ারের দরপতনের কারণে কোনো ঋণগ্রহীতার পত্রকোষ বা পোর্টফোলিও ভ্যালু বা মূল্য ১২৫ শতাংশে নেমে এলে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের মাধ্যমে ঋণ সমন্বয়ের বিধান রয়েছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা বলছেন, এ বিধান কার্যকরে কোনো ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে এবং তার জন্য কোনো বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই ক্ষতির দায় নিতে হবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একজন বিনিয়োগকারী ২০০ টাকায় কোনো একটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। তার জন্য ওই বিনিয়োগকারী নিজে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, বাকি ১০০ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন বাজারে দরপতনের কারণে ওই শেয়ারের দাম ১২৫ টাকায় নেমেছে। তাহলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে ওই শেয়ার বিক্রির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই উদ্যোগ কার্যকর হলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তার ঋণের ১০০ টাকা সমন্বয়ের পরও ঋণগ্রহীতা বিনিয়োগকারী ২৫ টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান যদিও শেয়ারের বাজারমূল্য ১২৫ টাকায় নামার পরও কোনো ধরনের ফোর্সড সেলের উদ্যোগ না নেন এবং তাতে বিনিয়োগকারীর যত টাকা ক্ষতি হবে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে। অর্থাৎ শেয়ারের দাম ১২৫ টাকায় নামার পর ফোসর্ড সেল না করে ১১০ টাকায় নামার পর যদি ওই শেয়ার বিক্রি করা হয়, তাহলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে ১৫ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
নতুন এই বিধানের সুপারিশের কারণ হিসেবে টাস্কফোর্সের যুক্তি হলো যদি সময়মতো ফোর্সড সেল করা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটি করা না হলে বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিনিয়োগকারীরা যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য এ বিধানের সুপারিশ করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার উন্নয়নে আইনকানুন সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশের জন্য গত ৭ অক্টোবর ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। তবে এ-সংক্রান্ত সরকারি চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় গত ১০ জানুয়ারি। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের অংশীদার এ এফ নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক আল-আমিন।
টাস্কফোর্স গত মঙ্গলবার তাদের সুপারিশ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসই) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের হাতে জমা দেন। তাতে শেয়ারের বিপরীতে ঋণসুবিধার বিষয়ে নানা সুপারিশ করা হয়। ১০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ যাদের, তাদের ঋণসুবিধা না দেওয়ার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সূচক নেমেছে আবারও ৫ হাজারের নিচে
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ১২৫ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমে গেছে। তাতে সূচকটি ছয় মাসের ব্যবধানে আবারও ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭৩ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৮৯৯ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
এদিকে গত ৯ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিদিনই ডিএসইতে সূচক কমেছে। সূচকটি ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমে আসায় নতুন করে বাজারে আবারও আতঙ্ক ভর করেছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী লেনদেন থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। ফলে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারের লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমেছে। ডিএসইতে গত সপ্তাহ শেষে দৈনিক গড় লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে এই বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৩৯৯ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৫৫ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ।
ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২৪টি বা ৮২ শতাংশেরই দাম কমেছে। দাম বেড়েছে ৫৭টির বা ১৪ শতাংশের, আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির বা ৪ শতাংশের। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ছাড়া সব খাতের কোম্পানিরই দরপতন হয়েছে গত সপ্তাহে। ফলে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভের দেখা পাননি বিনিয়োগকারীরা। সার্বিকভাবে বাজারে রিটার্ন ছিল ২ শতাংশের বেশি ঋণাত্মক।
মন্দা বাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি শাহজিবাজার পাওয়ার। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬ টাকা বা প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ৪০ পয়সায়। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল একই খাতের কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার। এটির শেয়ারের দাম ৫ দিনে ২ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৪০ পয়সায়।
গত সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বিচ হ্যাচারি। গত সপ্তাহে বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশই ছিল কোম্পানিটির দখলে। প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যদিও সপ্তাহ শেষে দাম কমার শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সাড়ে ৩৮ টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫৮ টাকা ৩০ পয়সায়। আগের সপ্তাহে যার দাম ছিল প্রায় ৯৭ টাকা।
টানা দরপতনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছেন একদল বিনিয়োগকারী। তাঁরা দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) নেতৃত্বেরও অপসারণ দাবি করেন।