সিলেট বন বিভাগের উদ্যোগে ও তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪০ হাজার জলজ বৃক্ষ হিজল ও করচ রোপণ করেছে শিক্ষার্থীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং হাওরপারের গ্রামগুলোকে ঢেউয়ের আঘাত থেকে সুরক্ষা দিতে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

বুধবার টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় ৬৫ একর জমিতে এ বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেয় তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় এবং জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.

মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, বনায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং জলজ প্রতিবেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে। পাশাপাশি দুর্যোগ প্রশমন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স সার্ভিসেস (সিএনআরএস) এর সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী ইয়াহিয়া সাজ্জাদ বলেন, হাওর এলাকায় হিজল ও করচ গাছ রোপণের জন্য স্থানীয়দের দীর্ঘদিন ধরে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বর্ষার পানির ঢেউয়ে এই গাছের কোনো ক্ষতি হয় না এবং এগুলো বাড়তে কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয় না, যা পরিবেশবান্ধব একটি সমাধান।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন, পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি, যাতে তারা পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ রক্ষায় বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে এবং চলতি বছর ৪০ হাজার জলজ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো তারা যেন এসব গাছের যত্ন নেয় এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়। প্রয়োজনে প্রতিটি গাছে শিক্ষার্থীদের নামসংবলিত নেমট্যাগ লাগানো হবে, যাতে তারা গর্ব করে বলতে পারে—এ গাছটি আমি লাগিয়েছি।

বনায়ন প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হবে, জলজ প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, পাখির নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি হবে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিন্দুধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। 

এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যকে অভিযোগপত্রের একটি কপি দিয়েছেন।

অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পোস্টটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা হয়। 

আরো পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ

৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (আব্দুর রহমান, আইন বিভাগ ১৮তম আবর্তন) লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখোনে ‘হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি অ্যাগ্রেসিভলি রেপড, (গালি) ইন আ রুড ওয়ে। (গালি)।’ বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে। এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজ বা শিক্ষাঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বর্তমানে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান ও সম্প্রীতির স্থান। এখানে এমন কোনো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত নয়, যা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে।

অভিযোগপত্রে তাদের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এম এ হোসাইন নামের একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লেখা ছিল ‘জনশ্রুতি আছে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?’

পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।

আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, “আব্দুর রহমান যেভাবে ফেসবুকে আমাদের ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে? আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলাতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারো যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”

আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, “আমি এই বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সম্পূর্ণ না জেনে আমি তো কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের, সেহেতু আমরা ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শৃংখলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ