ব্রিটিশ কাউন্সিল কালচার অ্যান্ড ক্রিয়েটিভিটি অ্যাওয়ার্ড পেলেন শাহমান মৈশান
Published: 13th, February 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহমান মৈশান ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল কালচার অ্যান্ড ক্রিয়েটিভিটি অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন। ‘ইউকে স্টাডি অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’-এর আওতায় সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতা ক্যাটাগরিতে স্কলার-নাট্যকার-নির্দেশক হিসেবে তিনি এই অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতা ক্যাটাগরিতে ‘ইউকে স্টাডি অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’ তুলে দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যে যাঁরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজ দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাৎপর্যপূর্ণ কাজের মাধ্যমে অবদান রাখেন, তাঁদের ব্রিটিশ কাউন্সিল এই পুরস্কার দেয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেওয়া হয় মেডেল, সনদ ও অর্থ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাহমান মৈশান উত্তর-ঔপনিবেশিক বাংলাদেশে আধুনিক নাট্যরূপ বিষয়ে একজন পণ্ডিত, গবেষক, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক।
তাঁর কাজে নাট্যশিল্প ও অভিনয়ের শিকড়, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনাবিষয়ক সমালোচনাধর্মী উপস্থাপনা প্রতিফলিত হয়। তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির শেক্সপিয়ার ইনস্টিটিউট থেকে রাজনৈতিক শেক্সপিয়ার এবং আন্তসাংস্কৃতিক পারফরম্যান্সের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সৃজনশীলতার নতুন ভাষা তৈরিতে অবদান রাখার জন্য তাঁকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পোদ্যোক্তা ও সমাজসেবক
মৃত্যু এক অমোঘ সত্য। আমাদের এই রৌদ্রছায়াময় নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কে তাকে রুধিবারে পারে? সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা; ১২ মার্চ ২০২৫ চলে গেলেন অনন্তের উদ্দেশে। তিনি শুধু শিল্পোদ্যোক্তা ছিলেন না; জাতি গঠন ও সমাজসেবায় তাঁর অনন্য ভূমিকা ছিল। বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রূপকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পিএলসি (এমটিভি), এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড, এমটিবি সিকিউরিটিজ পিএলসি চেয়ারম্যান এবং ট্যানারির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চামড়া ব্যবসায় তাঁর প্রবেশ ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি হাজারীবাগ এলাকায় গড়ে তোলেন চামড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানি, যা ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো নামে পরিচিত, তা থেকে তাঁর কর্মজীবন শুরু। মোটা বেতন ও সুবিধা ছেড়ে তিনি এ দেশে ফিরে মনোনিবেশ করেন ব্যবসায়।
১৯৭০ সালের উত্তাল সময়ে তাঁর প্রত্যাবর্তন ছিল জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তাঁকে মাঝে একবার ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল। চামড়া ব্যবসায় তাঁর নিজের নামে কোম্পানি খুলে চামড়া শিল্পে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এপেক্সের মাধ্যমে তাঁর ব্যবসায় নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। এক সময় তাইওয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে সৈয়দ মঞ্জুর ব্লুওশান ফুটওয়্যার গড়ে তোলেন। সফিপুরে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের জন্য জুতা তৈরির কারখানা চালু হলো।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী প্রতিষ্ঠা করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। একে একে সম্প্রসারিত হয় এপেক্স ফার্মা, এপেক্স এন্টারপ্রাইজ, এপেক্স ইনভেস্টমেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তাঁর ছিল বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে ও কোয়ান্টাম কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশনের অংশীদারিত্ব।
তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি সমাজসেবায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। তাঁর স্ত্রী নিলুফার মঞ্জুরকে সানবিমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। তিনি ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি,
ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর কর্মময় জীবন পরিব্যাপ্ত ছিল।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স ও রাঁচির বিশপ ওয়েস্ট কট স্কুলে লেখাপড়া শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর হন। বর্ণাঢ্য জীবনে প্রবেশ ও খ্যাতি লাভ ছিল তাঁর অসামান্য যোগ্যতা। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক কর্মবীর। ২০২৫ সালের ১২ মার্চ সিঙ্গাপুর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটায়।
৮৩ বছরে তাঁর একটি পরিণত জীবন অনেক উদ্যোক্তার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর শেষ কথা, আমাকে ঘরে নিয়ে চলো– এটাই তোমার কর্তব্য।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি সম্পর্কে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর ধারণা উঁচু ছিল। নীতিনির্ধারণে তাঁর মতামত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল। বাজেট প্রণয়ন-সংক্রান্ত তাঁর মতামত তাৎপর্যময়।
শুধু ব্যবসায়ী হিসেবে নয়; মানুষ মঞ্জুর এলাহী একজন মানবিক গুণে ছিলেন ভরপুর। দেশের বিকাশমান শিল্পের তিনি ছিলেন অগ্রবর্তী উদ্যোক্তা। তাঁর জীবনাবসান অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাঁর পথ অনুসরণ করে আমাদের শিল্প, অর্থনীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি অনুসরণীয় ও প্রেরণাদাতা।
সাইফুজ্জামান: প্রাবন্ধিক