এবার নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন কাফির, মামলা
Published: 13th, February 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচার, ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে কাফি নিজে এই আবেদন করেন। সেই সঙ্গে কলাপাড়ায় থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদনে কাফি উল্লেখ করেছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ধানমন্ডি ৩২-এ গুমের আস্তানা ধ্বংসে জনগণের সঙ্গে সামনের সাড়িতে থাকায় পরিকল্পিতভাবে তার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং পুড়ে যাওয়া ঘর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা না হলে তিনি একাই রাজপথে দাঁড়াবেন। প্রয়োজনে বিপ্লবী সরকারের ডাক দেওয়া হবে বলেও আবেদনে উল্লেখ করেছেন তিনি।
কলাপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘কাফির ঘর পোড়ানোর ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।’’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘কাফির আবেদন পেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
এর আগে, বুধবার দুপুরে নিজের পোড়া বাড়ির সামনে সংবাদ সম্মেলনে জড়িতদের বিচার, ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তার দাবি করেন নুরুজ্জামান কাফি। এ সময় তাকে বিমর্ষ মনে হচ্ছিল।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার গভীর রাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া গ্রামে কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বত্তরা। অগ্নিকাণ্ডে বাড়িটির বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। তবে, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
ঢাকা/ইমরান/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল প ড় বর বর
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি গাছ কাটায় নীরব প্রশাসন
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সড়কের পাশে সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ১৫ দিন পেরোলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মানাখান এলাকায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রিতা আক্তার নামে এক নারী সরকারি গাছ কাটেন। কিন্তু এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে উল্টো চারজন সাংবাদিক, পুলিশ ও বন বিভাগের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তিনি। ২ মার্চ শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার ও নড়িয়ার ইউএনওর কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে রিতা দাবি করেন, ওই ব্যক্তিরা তাঁর কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করেছেন।
রিতা তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর বাড়ির সামনে সরকারি রাস্তার পাশের একটি গাছ কাটছিলেন। সে সময় বন বিভাগের নৈশপ্রহরী জামাল মিয়া ও চার সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হন। সাংবাদিকরা হলেন– নড়িয়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বৈশাখী টেলিভিশনের শরীয়তপুর প্রতিনিধি আবদুল খালেক ইমন পেদা, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর ছৈয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংবাদ দিগন্ত প্রতিনিধি নুরে আলম জিকু এবং আনন্দ টিভির প্রতিনিধি জামাল হোসেন।
অভিযোগে বলা হয়, ওই চার সাংবাদিক ও বন বিভাগের কর্মচারী তাঁকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৩২ হাজার টাকা আদায় করেন এবং রাতের মধ্যে গাছ কেটে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। ঘটনার পরদিন ১ মার্চ গভীর রাতে নিয়মিত টহলের সময় নড়িয়া থানার এসআই রাজীব হোসেন সরকারি গাছ কাটার অভিযোগে তাঁকেসহ কয়েকজন শ্রমিককে আটক করেন। কিন্তু অভিযুক্ত সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ২ মার্চ সকালে বন বিভাগের কর্মকর্তা জামাল মিয়া ও অভিযুক্ত সাংবাদিকরা আবারও তাঁর বাড়িতে গিয়ে আরও টাকা দাবি করেন এবং মামলা করার হুমকি দেন। পরে তিনি শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার ও নড়িয়ার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
নড়িয়ার ইউএনও আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মার্চ এলজিইডির প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রভাবশালীরা প্রায়ই সরকারি গাছ কেটে নিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তামিম বলেন, প্রশাসনের নীরবতায় প্রভাবশালীরা নির্বিঘ্নে সরকারি গাছ কাটছে। অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।
ঘটনাটি নতুন মোড় নেয় গত বুধবার, যখন রিতা আবার একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়ে তাঁর আগের অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর অভিযোগ মিথ্যা ছিল এবং পুলিশ বা সাংবাদিকরা তাঁর কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি।
এ বিষয়ে ইউএনও আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, প্রথমে অভিযোগ করার পর এখন তা প্রত্যাহার করায় বিষয়টি সন্দেহজনক। তিনি কোনো চাপে পড়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন কিনা, সেটি তদন্ত করা হবে।
গাছ কাটার ঘটনায় প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, গাছ যেহেতু এলজিইডির সম্পত্তি, তাই তাদের নিয়মিত মামলা করতে বলা হয়েছে। গত সপ্তাহে মামলা করা হয়নি। তবে এই সপ্তাহে মামলা করা হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাংবাদিকরা দাবি করেছেন, তারা নির্দোষ এবং রিতা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। নড়িয়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল খালেক ইমন পেদা বলেন, তারা সাংবাদিক হিসেবে সরকারি গাছ কাটার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিতা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন। তবে এখন তিনি নিজেই অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। অথচ প্রশাসন গাছ কাটার ঘটনায় এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিতা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রথমে তিনি ব্যস্ত থাকার কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।