রেলপথে পঞ্চগড়ে আগতরা দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন স্টেশনের নাম বিভ্রাটে। জায়গাটি পঞ্চগড় হলেও এ নামে স্টেশন ছিলো না। অনলাইন টিকিট করতে গিয়েও পড়তে হতো ভোগান্তিতে। তবে এবার ভোগান্তির অবসান ঘটেছে। ফিরেছে আগের সেই ‘পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশন’ নামে। 

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রেল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তানজিনা শাহরীন স্বাক্ষরিত নোটিশে এ তথ্য জানা গেছে।

একই নোটিশে পূর্বাঞ্চলের আরো দুইটি স্টেশনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। স্টেশন দুটি হচ্ছে- অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার ও উমেদ নগর স্টেশন।  

এদিকে, স্টেশনটির নাম পরিবর্তন হওয়ার খবরে অনেকে ফেসবুকে আলহামদুল্লিাহ লিখে পোস্ট দিতে দেখা গেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই স্টেশনের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ স্থানীয় অনেকে।

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে পাবর্তীপুর-রুহিয়া এবং পাকিস্তান সময়ে ১৯৬৭ সালে রুহিয়া-পঞ্চগড় রেললাইনটি তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের টানা ১৭ বছরের শাসনামলের সময় পঞ্চগড়-২ আসন থেকে টানা চারবার সংসদ নির্বাচিত হন সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৯ সালে স্টেশনটির নাম পরিবর্তন করে নতুন করে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন’ রাখা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ছিলেন নুরুল ইসলাম সুজনের বড় ভাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্টেশনটির নাম পরিবর্তনের দাবি উঠে। এর ফলশ্রুতিতে সরকারি নীতিমালা ও নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়। স্টেশনটির নাম আবার পূর্বের নামে ‘পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশন’ ফিরে আসে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “পতিত সরকারের সাবেক রেল মন্ত্রী পঞ্চগড়ে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাধারণ মানুষের চিন্তা না করে ঐতিহ্যবাহী পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন তার ভাইয়ের নামে। এটা পঞ্চগড়বাসী গ্রহণ করেননি, চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তাই অভ্যুত্থানের পর স্টেশনের নাম আগের নামে ফেরানো দাবি ওঠে।”

স্টেশনটি থেকে বর্তমানে ঢাকাগামী ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। ট্রেনগুলো হচ্ছে- একতা, দ্রুতযান ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। এছাড়া রাজশাহীগামী বাংলাবান্ধা ও সান্তাহারগামী দোলন এক্সপ্রেস নিয়মিত চলাচল করে। পঞ্চগড়-পার্বতীপুর রুটে কাঞ্চন কমিউটার ট্রেন চলাচল করে।

ঢাকা/নাঈম/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ট শনট র ন ম ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘ সঠিকভাবেই বলেছে, হাসিনার নির্দেশেই সব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে: মির্জা ফখরুল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ‘স্বস্তি’ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে (জাতিসংঘের প্রতিবেদন) আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি যে সত্য ঘটনাগুলো উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। ...তারা সঠিকভাবেই বলেছে যে একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যত গণহত্যা হয়েছে, তাঁর নির্দেশেই হয়েছে এবং যত মানবাধিকার লঙ্ঘন, সব তাঁর নির্দেশেই হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন যে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ফেরত দেবে এবং তাঁকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান সাক্ষাৎ করেন। পরে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সত্য উদ্‌ঘাটিত হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমস্যাটা হচ্ছে, যখন জাতিসংঘ বলে, তখন আমরা ঘটনাগুলো বিশ্বাস করি।। আর যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি, অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। যাহোক, আজ আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, জাতিসংঘের যে পর্যবেক্ষণ কমিটি এসেছে, তাদের যে রিপোর্ট, তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা সঠিকভাবেই বলেছে যে একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

ফখরুল বলেন, যত গণহত্যা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে এবং যত মানবাধিকার লঙ্ঘন, সব তাঁর নির্দেশেই হয়েছে এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া, আজ সেটাই ফুটে উঠেছে যে তাঁর নির্দেশেই এসব ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সুতরাং এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট এবং তিনি এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন, নির্যাতন করেছেন এবং গণহত্যা করেছেন।

শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আজ এখান থেকে বলি, তাঁকে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ফেরত দেবে এবং বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাঁকে এবং তাঁর সহযোগী যাঁরা ছিলেন, সবাইকে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।’

‘আয়নাঘর’, আজ সত্য প্রমাণিত হলো

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের গতকাল ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারা অতীতে যে কথা বলেছিলেন, এখন সেগুলো সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

বিগত দিনগুলোয় বিএনপির লোকেরাই বেশি গুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম জিনিসটাকে আমি ভিন্নভাবে দেখি। গুম হওয়া, হত্যা করা, এটা শুধু সুনির্দিষ্ট কোনো একটা দলের কথা আমি বলতে চাই না। এটা বাংলাদেশের মানুষকে গুম করা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। এ কথা আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি এবং যখন আয়নাঘরের প্রতিবেদনটা বের হয়, নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। তখন কিন্তু বিগত সরকার পুরোপুরি নাকচ করেছে। তারা বলেছে যে এ ধরনের কিছু নাই। কিন্তু প্রথম থেকেই কাজটা চলে এসেছে।’

পতিত আওয়ামী লীগর সরকারের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা মানুষকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, জঙ্গি সংগঠন করছে, এ ধরনের কথা বলে বন্দী করে নির্যাতন করে তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বের করার চেষ্টা করেছেন। কিছু লোককে তারা সেখানে রেখে দিয়েছিল যে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের দিয়ে জঙ্গি নাটক সাজাবে। ট্রেনিং হচ্ছে, বোমা তৈরি করা হচ্ছ, এসব করা হচ্ছে বলে। আজ প্রমাণিত হলো, আমরা যে কথা বলেছি, সেগুলো সত্যি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলকে ধ্বংস করেছে।

‘আ.লীগকে নিষিদ্ধ করা’, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর উল্লেখ করে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে...আমরা বিষয়গুলো আগেই বলেছি যে এ বিষয়ে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এ বিষয়ে বারবার বলে আসছি যে আমরা একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রে সব দলের ওপর আমরা আস্থা রাখি। সেগুলো আমরা অতীতেও চর্চা করেছি। সেভাবেই আমরা মনে করি, কোনো পার্টি থাকবে কি থাকবে না, নির্বাচন করবে কি করবে না, কাজ করবে কি করবে না, সেগুলো জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।’

ব্রিফিংয়ে বিএনপির মহাসচিব জানান, ব্রিটেনের ডেপুটি হাইকমিশনারের (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার) সঙ্গে রুটিন আলোচনা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, নির্বাচন, সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিদেশি মিশন যেগুলো আছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে তাদের কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। এখন যেসব পরিবর্তন হচ্ছে, যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো তারা জানতে চায়। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা দেশেরই পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ভর করে সেই দেশের ভেতরকার রাজনৈতিক অবস্থার ওপর। সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রাজনৈতিক অবস্থা, কবে নির্বাচন হচ্ছে, বর্তমান সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে সম্পর্ক জানতে চেয়েছে।’

ব্রিফিংয়ে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ