মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ‘দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ ফোনালাপ হয়েছে। উভয় নেতা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বিবিসি। 

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে জানান, তিনি এবং পুতিন তাদের নিজ নিজ দলকে তাদের নিজ দলকে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার নির্দেশ দিতে সম্মত হয়েছেন এবং একে অপরকে নিজ নিজ রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ায় ১০৪ ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের হামলা

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৩, আহত ৩০

এরপর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ‘দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য শান্তি’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন।

বিবিসি বলছে, যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষা সচিব উভয়েই বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি কিয়েভের জন্য একটি বড় হতাশার কারণ হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, তিনি শুক্রবার মিউনিখে ইউক্রেন সংক্রান্ত একটি প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, “এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করার সময় এসেছে, যেখানে ব্যাপক ও সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু এবং ধ্বংস ঘটেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করি!”

ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের জন্য কোনো তারিখ জানাননি। তবে পরে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করব।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেন এবং এখনই শান্তি আলোচনার সময় এসেছে বলে মনে করেন।

পেসকভ জানান, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ফোনালাপ হয়েছে। এসময় রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্পকে।

ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ইউক্রেনের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

ট্রাম্প জানান, তিনি তার প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের সঙ্গে একমত, যিনি বুধবার ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, সামরিক জোটে ইউক্রেনের যোগদানের কোনো সম্ভাবনা নেই।

ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি এটি সম্ভবত সত্য।”

এদিকে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার বলেন, কিয়েভের প্রতি লন্ডনের সমর্থন ‘অটল’ রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদক জেমস ওয়াটারহাউজ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনের প্রতি আগের মতো সহানুভূতিশীল নয় এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের বক্তব্য মস্কোর জন্য লাভজনক হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদকের মতে, ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটভুক্ত করতে অস্বীকার করা হয়েছে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে, ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না এবং ভবিষ্যতে একটি স্থবির ফ্রন্ট লাইন কীভাবে পুলিশিং করা হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। এই বিষয়টি রাশিয়ার দীর্ঘদিনের আগ্রাসনের সুবিধা বাড়াবে।

জেলেনস্কি দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছিলেন যে, “ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হতে পারে না।’ তবে ট্রাম্প এবং পুতিন তার অনুপস্থিতিতেই আলোচনা করেছেন। তবে তিনি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনা ‘ভালো ও বিস্তারিত’ ছিল এবং তিনি মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে লেখেন, “ইউক্রেনের চেয়ে শান্তি আর কেউ বেশি চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে আমরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং একটি স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য শান্তি নিশ্চিত করতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করছি।”

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় নেতাদের মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে ফোনালাপ হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দ্যা গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূমির বদলে রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা বিনিময়ের প্রস্তাব দেন। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “রাশিয়া কখনো তার ভূখণ্ড বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেনি এবং করবে না।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সেখান থেকে উৎখাত করা হবে বা ধ্বংস করা হবে।

প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন চালায়। এই যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখল করেছে এবং সারা দেশে আকাশ থেকে হামলা চালাচ্ছে।

ইউক্রেন এর জবাবে আর্টিলারি, ড্রোন হামলা এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে স্থল যুদ্ধ চালাচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন র প র ইউক র ন য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চবির শাটলে সিনিয়রকে জুনিয়রদের হামলা, বিচার দাবি

তুচ্ছ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে এক সিনিয়রের ওপর জুনিয়রদের হামলার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে এ বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীর ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন তারা।

ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ৫৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শুভংকর দে।

আরো পড়ুন:

অপহৃত শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে গোপন স্থানে ডেকেছে অপহরণকারীরা

খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ

অভিযুক্তরা হলেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের (আইএমএল) রোহান তাহিন, সোহেল ও মামুনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আমরা ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৫৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তুচ্ছ ঘটনায় বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের শাটলে আমাদের শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শুভংকর দে এর সঙ্গে চবির আইএমলএল বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তর্ক শুরু হয়। এর একপর্যায়ে শুভংকরের ওপর ওই শিক্ষাবর্ষের রোহান তাহিন, সোহেল, মো. মামুনসহ কয়েকজন মিলে বর্বরোচিত হামলা করে এবং শাটল থেকে মারধর করে নামিয়ে দেয়।”

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। বর্তমানে তার চলমান চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাও অনিশ্চিত। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আসাদ নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, “শাটলে সিটে বসার পর পায়ের সঙ্গে পা লাগা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এটি নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভাইটি কথা কাটাকাটির মাঝে জুনিয়র ছেলেকে তীব্রভাবে বল প্রয়োগ করলে জুনিয়র ছেলেটিও পাল্টা বলপ্রয়োগ করে। এরপর জুনিয়র ছেলেটির কিছু সহপাঠী এসে সিনিয়র ভাইয়ের ওপর চড়াও হয়। এর মধ্যে দুইজন ছেলে খুবই আক্রমণাত্মক ছিল।”

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “আমাদের কাছে আজ অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেন।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ