তুলসী গ্যাবার্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান, ট্রাম্পের আরেক বিজয়
Published: 13th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক কংগ্রেস সদস্য তুলসী গ্যাবার্ডের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে মার্কিন সিনেট। গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডে স্বল্প অভিজ্ঞতা থাকা তুলসীর এ মনোনয়ন চূড়ান্ত হয় গতকাল বুধবার। তুলসী গ্যাবার্ডের মনোয়নকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বিতর্কিত মনোনয়ন হিসেবেই দেখা হয়।
সিনেটে ৫২-৪৮ ভোটে তুলসী গ্যাবার্ডের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়। তুলসী গ্যাবার্ড দেশটির ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থার কাজ দেখভাল করবেন। আবার তিনি গোয়েন্দা বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরামর্শ দেবেন। তুলসীর পক্ষে পড়া ৫২ ভোটের সব কটিই রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের। তবে এক রিপাবলিকান সদস্য এ মনোনয়নের বিরোধিতা করেছেন। তিনি মিচ ম্যাককনেল।
তুলসী গ্যাবার্ডের এই বিজয়কে ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই একটি বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনিক নানা পদে তার মনোনীত ব্যক্তিদের দ্রুত সিনেটের অনুমোদন নিশ্চিত করতে চাইছিলেন।
৪৩ বছর বয়সী গ্যাবার্ড সিনেটে অনুমোদনের আগে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিপক্ষকে সমর্থন এবং যে দায়িত্ব তিনি পেতে যাচ্ছেন, সেখানে অভিজ্ঞতা না থাকার বিষয়েই মূলত তাঁকে এসব প্রশ্ন করা হয়। এই কম অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি কীভাবে ১০ হাজার কোটি ডলারের বিশাল ব্যয়ের এই কর্মযজ্ঞ সামলাবেন, সেটাও প্রশ্ন ছিল। তুলসী হাউসে যে চার বছর ছিলেন, সে সময় তিনি কোনো গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করেননি বা গোয়েন্দাসংক্রান্ত কোনো কমিটিতেও ছিলেন না।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের পদটি সৃষ্টি হয় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ারে হামলার পর। মার্কিন কংগ্রেস এই পদ সৃষ্টি করে। মার্কিন সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তাপ্রধানের পদ এটি।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি কর্মসূচির পরিচালক এমিলি হার্ডিং তুলসীর এই মনোনয়নের পর বলেছেন, ‘জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক নির্বাচন খুব বড় বিষয়।’
এমিলি হার্ডিং বলেন, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের গোপন সব নথি পাওয়ার অধিকার আছে। এর পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রধান গোয়েন্দা পরামর্শকও তিনি।
গত নভেম্বর মাসে নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে গ্যাবার্ডের নাম ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তাঁর এই ঘোষণা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। অনেকেই এই বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই মনোনয়নের ফলে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে রাজনৈতিকীরণ ঘটতে পারে। তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
তুলসী গ্যাবার্ডের ব্যাপারে যেসব সমালোচনা ছিল, এর মধ্যে আছে, তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সমর্থক। আবার তিনি সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল। ২০১৭ সালে তিনি বাশারের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলপরী লিখেছেন, ‘কর্মফল নিশ্চয়ই হয়েছে’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার দুই বছর পার হলো। ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে গণরুমে ডেকে তাঁকে রাতভর নির্যাতন করেছিলেন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা–কর্মীরা। সেই রাতের স্মৃতি মনে করে গতকাল বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফুলপরী। বলেছেন, ‘মস্তিষ্ক যত দিন সুস্থ থাকবে, সেই রাত তত দিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।’
ফুলপরী লিখেছেন, ২০২৩ সালের ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারির সময়টায় তিনি অনেক অসহায় ছিলেন। তিনি কিছু করেননি, অথচ ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অপমানের শিকার হয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘জীবনে ফেলা আসা রাতগুলোর মধ্যে ওটা জঘন্যতম রাত। মনে হচ্ছিল, কোনো কোনো মার্ডার করা আসামির রিমান্ড চলছে। সঙ্গে সুইসাইড নোট আর শ্বাসকষ্টের জন্য আমারই ইনহেলার চেয়েও পাইনি। চলছে তো চলছেই, রাত শেষ হয়ে যায়, তা–ও প্রতিহিংসা বিন্দুমাত্র কমে না।’
পৃথিবীর কোনো প্রাণীকে ভয় পাওয়ার জন্য জন্ম হয়নি উল্লেখ করে ফুলপরী লিখেছেন, ‘তারা ভয় দেখায় যে মাঝরাতে হল থেকে বের করে দিব। শেয়াল–কুকুর ছিঁড়ে খাবে। বোকা চন্দ্রবিন্দুরা জানে না আমি ছোট থেকে শিয়াল–কুকুরের সঙ্গেই অন্ধকারে থেকে বড় হয়েছি। ভয় দেখায়ে বিন্দুমাত্র লাভ নাই। যাদের চিনি না, যাদের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই, তারা শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করার জন্য সাধারণ একটা নিরুপায় মনকে দুমড়েমুচড়ে পঙ্গু করে দেয়। মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকারটা হরণ করে নিতে চায়। নিষ্পাপ মনগুলোর হাহাকার, আত্মচিৎকার আপনাআপনিই অভিশাপে রূপ নেয়। তাদের কর্মফল নিশ্চয়ই হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা আবাসিক হলের গণরুমে আটকে রেখে ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতন করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পর সারা দেশে আলোচনার ঝড় ওঠে। গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন রিট করেন।
২০২৩ সালের ২১ আগস্ট ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেত্রীসহ পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী, হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।
ফুলপরী খাতুন এখন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকেন। তিনি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। সেই রাতের ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুই থেকে তিনবার শেখ হাসিনা হলে গিয়েছিলেন। প্রথম এক বছর তাঁর সঙ্গে তেমন কেউ মিশতেন না। তবে এক বছর ধরে তাঁকে ডেকে ডেকে সবাই কথা বলেন বলে জানালেন তিনি।