প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশন গঠন
Published: 13th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ কমিশনের সদস্য হিসেবে ৬টি কমিশনের প্রধানরা রয়েছেন। কমিশনটি ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করবে।
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশসমূহ বিবেচনা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন‘’ নামে কমিশন গঠন করা হয়েছে।
কমিশনে সভাপতি হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড.
এছাড়া কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের বিচারপতি এমদাদুল হক ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থবহ সংলাপের বিকল্প নেই
১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এর আগে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে এবং এর পূর্ণাঙ্গ বিবরণও অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
এসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিচ্ছেন, যাতে এর নেতি ও ইতি উভয়ই উঠে এসেছে। সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও অনানুষ্ঠানিক মতামত জানিয়েছে। ১৫ তারিখের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোকেও ডাকা হবে। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারের পদক্ষেপগুলো ব্যাখ্যা করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের মূল চেতনাই ছিল স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোও মনে করে রাষ্ট্রকাঠামোকে গণতান্ত্রিক রূপ দিতে যেসব বাধা আছে, সেগুলোও দূর করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার কথা বলা যায়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার পেছনেও ছিল জনগণের ভোটাধিকার হরণ। পরপর তিনটি নির্বাচন তারা করেছিল জবরদস্তিভাবে।
এ ছাড়া আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোর যেসব মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যক্তির একচ্ছত্র ক্ষমতাচর্চা, সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের একাকার হয়ে যাওয়া, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ। কেবল বিগত সরকার নয়, স্বাধীনতার পর থেকে এই একচ্ছত্র ক্ষমতাচর্চা চলে আসছিল।
এই প্রেক্ষাপটে সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দলই সমর্থন জানিয়েছে। আবার বিএনপিসহ বেশ কিছু দল বলছে, সংস্কার প্রস্তাব তারা অনেক আগেই দিয়ে রেখেছে, যার সঙ্গে সরকার গঠিত কমিশনের প্রস্তাবের মৌলিক পার্থক্য নেই। একই সঙ্গে তারা এই যুক্তিও দিচ্ছে যে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংস্কার করেই নির্বাচন দেওয়া উচিত।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। আর জনগণের রায় নেওয়ার একমাত্র উপায় নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের বিষয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রূপরেখা তৈরি করা। নির্বাচন প্রশ্নে সরকার নিরপেক্ষ থাকবে, সেটাই রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের প্রত্যাশা। সে ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে অর্থবহ সংলাপের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা।
সরকারের পক্ষ থেকে যে আভাস–ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে স্পষ্ট যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি তাদের আছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকেই মোটাদাগে কতগুলো বিষয়ে একমত হতে হবে। কোনো দলের এমন অবস্থান নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে পুরো উদ্যোগই ভেস্তে যায়।
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ আছে, অতীতের আলোচনাগুলো এত সংক্ষিপ্ত ছিল যে তারা তাদের মতামত ঠিকভাবে জানাতে পারেনি। আমরা আশা করব, সরকার তাদের সংলাপ উদ্যোগকে এমনভাবে সাজাবে, যাতে সব দল খোলাখুলি তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। নির্বাচনের বিষয়ে সমঝোতা হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যেসব অস্থিরতা আছে, সেগুলোও ধীরে ধীরে কেটে যাবে আশা করা যায়।