চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে আজ রাতে আরব আমিরাতের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। বুধবার অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আট জাতির এই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি, লক্ষ্য, সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি জানান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়াল লক্ষ্যে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রেরণা
শান্ত: শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো একটা স্মৃতি আছে; সেমিফাইনাল খেলেছি। এটা বাড়তি একটা অনুপ্রেরণা দেবে। পাশাপাশি দেশের মানুষের প্রত্যাশা ও খেলোয়াড়দের পরিবারের প্রত্যাশা আছে। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিতে পেরেছি, আশা করছি ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।
নিজের প্রস্তুতি নিয়ে
শান্ত: আমার ম্যাচ খেলতে না পারার ভেতরেও ইতিবাচক দিক ছিল। অতিরিক্ত অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি। কোচরা সাহায্য করেছেন। ফিটনেস নিয়েও কাজ করতে পেরেছি। বিপিএলের সময়ে খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। আশা করছি, সব ঠিক থাকলে টুর্নামেন্টটা ভালো যাবে।
ম্যাচ প্র্যাকটিসের ঘাটতি
শান্ত: শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ভালো একটা ইনিংস খেলেছিলাম আফগানিস্তানের বিপক্ষে। টি২০ বিষয়টি নিয়ে যেটা বললেন, ভালো অবস্থায় নেই। গত বছর রান মোটামুটি করেছি, স্ট্রাইক রেট ওই রকম আপ টু দ্য মার্ক ছিল না। তবে রান মোটামুটি ভালো করেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমি এর চেয়েও ভালো ব্যাটার। আসলে ওই সংস্করণ নিয়ে চিন্তা করছি না। ওয়ানডে ফরম্যাট ভালো যাচ্ছে। অনেক দিন পর ম্যাচ খেলব। ম্যাচ প্রস্তুতিটা এখানে হচ্ছে। গতকাল ম্যাচ সিনারিও প্র্যাকটিস হয়েছে। আজকে হবে। সামনে একটি প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে। আর এই সংস্করণে আমরা ছোটবেলা থেকে অনেক খেলি। সুতরাং মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না।
প্রস্তুতি নিয়ে কোচের অতৃপ্তি
শান্ত: আমার মনে হয় না, কোচ এ রকম কোনো কিছু মিন করেছেন। ফরম্যাট অনুযায়ী দেখলে একটু তো ভিন্নতা আছেই। উইকেট ভালো ছিল, ব্যাটাররা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন ৫০-৬০ রানকে কীভাবে ১০০-১৩০ করতে পারে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। তারই ম্যাচ সিনারি হচ্ছে। একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। ভালো উইকেটেও বেশ কিছু বোলার ভালো বল করেছে। আমার মনে হয় প্রস্তুতির দিক দিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের হাতে সাত দিন সময় তো আছেই। এই সাত দিনে আরও একটু গুছিয়ে নিতে পারব।
রিয়াদ-মুশফিকের রোল
শান্ত: তারা দু’জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। এত বছর ধরে খেলছেন, শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ছিলেন। তাদের এই অভিজ্ঞতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে অধিনায়ক হিসেবে কোনো একক খেলোয়াড়ের ওপর ভরসা করি না। পুরো দল নিয়ে চিন্তা। আমরা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারলে ভালো করা সম্ভব। রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাইয়ের কাছে চাওয়া, তারা যেন নিজেদের অভিজ্ঞতা সবাইকে দেন, তাদের ভাবনা যেন মাঠের ভেতর শেয়ার করেন।
দুবাইয়ে রান চেজ করা বা বড় টার্গেট সেট করা
শান্ত: আমি পাকিস্তানে ৩০০ প্লাস রান আশা করছি। আগে ব্যাট করলে অবশ্যই এ ধরনের স্কোর করতে হবে। ডিফেন্ড করার ক্ষেত্রেও এ রকম রান ডিফেন্ড করতে হবে। দুবাইয়ে একেক সময় একেক রকম হয়। আমার মনে হয়, ২৬০ থেকে ২৮০-এর ভেতরেই থাকবে। এভাবে সংখ্যা অনুমান করা কঠিন। তবে অতীতের স্ট্যাট.
টুর্নামেন্টে দলীয় লক্ষ্য
শান্ত: আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে যাচ্ছি।
বিপিএলে রিশাদের খেলা নিশ্চিত করা
শান্ত: রিশাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আমাদের দেশে রিস্ট স্পিনার বলতে রিশাদই সেরা। আমাদের হাতে ওই রকম বিকল্প নেই। সম্প্রতি ও টি২০ সংস্করণে যেভাবে খেলছে, বিপিএলেও ২-৩ ম্যাচ একাই জিতিয়েছে। খুবই ভালো বোলিং, পাশাপাশি ব্যাটিং; আর ফিল্ডিং তো আছেই। সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। আমি খুবই খুশি যেভাবে বোলিং ও ব্যাটিং করেছে। আমি আরও বেশি কিছু আশা করেছিলাম। সে যতটুকু করেছে, আমি খুশি।
বুমরাহর না থাকা চাপ কমাবে
শান্ত: প্রতিটি দলের প্রত্যেক ক্রিকেটার সামর্থ্যবান। একেক দলে এক্স ফ্যাক্টর থাকে। সে অনেক বড় বোলার। আসলে এভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিকল্পনা করতে চাই না। পুরো দলের প্ল্যান থাকে, কোন বোলারকে কীভাবে হ্যান্ডেল করব বা ব্যাটারকে যেভাবে আটকাব। ওভারঅল একটি টিম প্ল্যান তো থাকেই।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য দলের ওপর চাপ
শান্ত: আমার কাছে বাড়তি চাপ মনে হয় না। ৮ দলই ডিজার্ভ করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, কোয়ালিটি টিম। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দলের ওই সামর্থ্য আছে। আমার মনে হয় না কেউ বাড়তি চাপ অনুভব করবে। কারণ সবাই মনেপ্রাণে এটাই চাচ্ছে। সবাই বিশ্বাস করে ওই সামর্থ্য আছে। আমাদের রিজিকে আল্লাহ কী লিখে রেখেছেন, জানি না। আমরা ওইভাবে মেহনত করছি, সততার সঙ্গে কাজ করছি। প্রত্যেক খেলোয়াড় বিশ্বাস করি, আমরা ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
সাকিব মিস করবে
শান্ত: সাকিবকে অবশ্যই মিস করব। এই প্রশ্ন কেন করলেন আমি জানি না। আমরা সবাই জানি, এই উত্তর অনেক খেলোয়াড় দিয়েছে। অবশ্যই সাকিব ভাইকে মিস করব, থাকলে ভালো হতো– এই উত্তর অনেকবার পেয়েছেন। আমার মনে হয় না এ রকম একটি টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে এ প্রসঙ্গে বলা যৌক্তিক হবে। তবে ওই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেছেন। দলকে জেতাতে অনেক সহায়তা করেছে।
স্কোয়াড নিয়ে খুশি
শান্ত: যে ১৫ জন স্কোয়াডে আছে, সবাইকে নিয়ে খুবই খুশি ও আত্মবিশ্বাসী। যেই খেলবে, একা হাতে ম্যাচ জেতাতে পারে, এই সামর্থ্য সবার আছে।
মিডল অর্ডারে উইকেট না নিতে পারা
শান্ত: মিডল ওভারে উইকেট যদি নিতে পারে স্পিনাররা, দলের জন্য খুব ভালো। তাদের মধ্যে এই সামর্থ্য আছে। গত সিরিজে হয়তো হয়নি। মিডল ওভারে উইকেট নিতে পারিনি। তার মানে এই না সামনে পারব না। অতীতে অনেক ম্যাচে মিরাজ মিডল ওভারে উইকেট নিয়ে জিতিয়েছে, নাসুম, রিশাদ নিয়েছে। সামর্থ্য সবারই আছে। ওই দিনে দায়িত্বটা যে পাবে, দলের জন্য কতটুকু দিচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, তারা ভালো কিছু করবে।
বুমরাহ না থাকায় ভারত সহজ কিনা
শান্ত: একক কাউকে নিয়ে চিন্তা করছি না, তাদের পুরো দলই ভালো। শুধু ভারত নয়, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড– তিনটি দলই ভারসাম্যপূর্ণ। তিনটি দলের সঙ্গেই কষ্ট করে খেলতে হবে।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ভাবনা
শান্ত: শেষ সিরিজটি ইনজুরির কারণে আমরা দু-তিনজন খেলোয়াড় খেলতে পারিনি। এই সুযোগে জাকের আলী অনিকের অসাধারণ একটা সিরিজ গেছে। রিয়াদ ভাই ভালো করছেন। মিরাজ চারে ভালো করছে। আমরা আসলে বুঝতে পেরেছি কোন জায়গায় কাকে ফিট করা যাবে এবং কে কতটুকু ভালো অবস্থানে আছে। এই ইনজুরিটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। সবাইকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে আমরা জানি কে কোথায় ব্যাটিং করবে, কার কী রোল। এটা নিয়ে খুব বেশি একটা সমস্যা হবে না।
বিপিএলে ভালো উইকেটে খেলা
শান্ত: এত অল্পতে খুশি হয়েন না, মাত্র শুরু হলো। বিপিএলে খুব ভালো উইকেট ছিল। ব্যাটাররা খুব ভালোভাবে ব্যাটিং করেছে, বোলারদের কষ্ট হয়েছে। এটা শুরু। আমার মনে হয়, আরও ভালো উইকেট হওয়া সম্ভব। কীভাবে লম্বা সময় ধরে ভালো উইকেটে প্র্যাকটিস করছি, ডিপিএল, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। লম্বা সময় ধরে এমন উইকেট পেলে হেল্প হবে। এবার ভালো উইকেট হওয়ায় ব্যাটাররা কনফিডেন্ট আছে। বোলারদেরও কোথায় বল করতে হবে– এসব ধারণা আগের চেয়ে ভালো।
ব্যাটিং না বোলিংয়ে এগিয়ে
শান্ত: আলাদাভাবে চিন্তা করছি না। একসময় পেস বোলার ছিল না। এখন ভালো পেস বোলিং ইউনিট। রিস্ট স্পিনার ছিল না, এখন আছে। সব মিলিয়ে ব্যালান্স দল। সবাই সবার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে যে কোনো দলকে যে কোনো সময় হারানো সম্ভব।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫
প্রতিপক্ষ | তারিখ | ভেন্যু |
বাংলাদেশ : ভারত | ২০ ফেব্রুয়ারি | দুবাই |
বাংলাদেশ : নিউজিল্যান্ড | ২৪ ফেব্রুয়ারি | রাওয়ালপিন্ডি |
বাংলাদেশ : পাকিস্তান | ২৭ ফেব্রুয়ারি | রাওয়ালপিন্ডি |
সময় | বিকেল ৩টা | বাংলাদেশ সময় |
বাংলাদেশ স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, জাকের আলী, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও পারভেজ হোসেন ইমন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ ব স কর আম র ম ব প এল আম দ র উইক ট স করব
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে বিএনপি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে বিএনপি। দলটি মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে সরকার ততটা আন্তরিক নয়। তারা নির্বাচনকে তুলনামূলক কম গুরুত্ব দিচ্ছে।
সরকারের ওপর চাপ তৈরির অংশ হিসেবে সমমনাসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে বিএনপি। দুই সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকগুলো শেষ করতে চায় তারা। তারপর সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বিষয়ে আবার নিজেদের অবস্থান জানান দেবে দলটি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবং দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকেল ৩টায় ১২ দলীয় জোটের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক এ আলোচনা শুরু হবে। সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলের সঙ্গেও বসবে বিএনপি। সবার মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে দলটি।
বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার নির্বাচনের সময় ও পথনকশা জানতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। সরকারের দিক থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় না পেয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি। পরদিন বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসে বিএনপি। সে বৈঠকের যে প্রতিক্রিয়া দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাতেও আছে অসন্তোষের ছাপ। এর পর রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনায় বসে দলটি। সেখানে শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরেন। এর পর নির্বাচন বিষয়ে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি বিএনপির কাছে প্রতীয়মান, জমিরউদ্দিন সরকার তা তুলে ধরেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতাদের কাছে মনে হয়েছে, সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী জুনের কথা বললেও নির্বাচন নিয়ে আসলে তারা অনেকটা উদাসীন। উপদেষ্টাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বিএনপি নেতাদের কারও কারও মনে হয়েছে, নির্বাচন ২০২৬ সালের জুন পেরিয়ে ডিসেম্বরে চলে গেলেও সরকারের কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনকে সরকার এখনও কার্যত আমলে নিচ্ছে না।
দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে অন্য দলগুলোর অবস্থানও পর্যালোচনা করেন বিএনপি নেতারা। তারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং আগে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর অবস্থান আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তাদের অনেকেই কাছাকাছি অবস্থানে আসছে। আলোচনার মাধ্যমে এদের সবাইকে এক জায়গায় আনার প্রচেষ্টাকে জোরালো করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী রোজার আগে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতারা জামায়াতের এই অবস্থানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। তাই সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি সরাসরি কোনো কর্মসূচি কিংবা বড় আন্দোলনে যেতে চাচ্ছে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে তারা। বিএনপি চায় না এই সরকার ব্যর্থ হোক।
বৈঠকের সূত্র বলছে, নির্বাচন ইস্যুতে সরকার সুনির্দিষ্ট কী পদক্ষেপ নেয়, তা পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি। দলটির শঙ্কা, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও চাওয়া উপেক্ষা করে সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে দেশের চলমান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে ও অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। তাই চাপ তৈরি করে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝাতে চায় বিএনপি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছিল। শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেন। পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেন। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন বিলম্বিত করতে নানা পক্ষ কাজ করছে। নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দু-একজন উপদেষ্টা এবং দু-একটি দলের নানা রকম বক্তব্যে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয় বিএনপির মধ্যে।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এর বেশি হলে তা হবে সময়ক্ষেপণ। দলটি মনে করছে, গুম, খুন ও গণহত্যায় জড়িতদের বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রমও সেভাবে এগোচ্ছে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেগুলো গুছিয়ে আনছে না সরকার।
বৈঠকে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে একাধিক নেতা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে গতিতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করছে, তাতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
এর পর সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে আরও সময় লাগবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তারা যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি করছেন এবং এটি দেওয়া যে জরুরি, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন বলে বৈঠকে তাদের মনে হয়নি। তাদের মনে হচ্ছে, সরকারের ভেতরের কোনো একটি পক্ষ নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। তাই বিএনপি যদি সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত না রাখে তাহলে নির্বাচন জুন নয়, আগামী বছরের ডিসেম্বরেও চলে যেতে পারে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সমকালকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও মানুষের অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা সেই অধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের কথা বলছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা সংকটে পড়তে পারে বলে আমাদের আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারেনি। এ অবস্থায় আমরা সমমনাসহ সব দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনের এগোতে চাই।’
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শব্দ : ৯২০