নির্বাচন সামনে রেখে ইসির সঙ্গে বসছেন ডিসিরা
Published: 13th, February 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন ৬৪ জেলার ডিসি ও আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার। ডিসি সম্মেলনে এবার প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), চার কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তারা। প্রতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন ডিসিরা। এবার এ বৈঠক হচ্ছে না।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার সময় ইসির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিসি-এসপিদের বৈঠকের নজির রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইসি সূত্রে জানা যায়, ডিসিরা ভোটার তালিকা হালনাগাদের চলমান কার্যক্রমে জেলা কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয় করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কাজ করছেন উপজেলা কমিটির প্রধান হিসেবে। ফলে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরিতে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ডিসিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ কাজে ইসি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বেশি করে সহযোগিতা চাইতে পারে। ডিসিরা কোনো প্রশ্ন করলে তার জবাব দেওয়া হবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা পোলিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠ প্রশাসনটা সাজান তারা। জেলা পুলিশ সুপাররা আইনশৃঙ্খলার সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন। গত তিন নির্বাচনে পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। এবারের নির্বাচনে যদি ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করতে পারে। মাঠের বর্তমান অবস্থা জানতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য করণীয় কী, সে বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। কারণ, এবারের নির্বাচনকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সমকালকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডিসিদের একটি বৈঠক হবে। তবে কী বিষয়ে আলোচনা, তা এখনও ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভালো বলতে পারবেন।
কমিশনের ইচ্ছায় বৈঠক
জানা যায়, সিইসির আগ্রহ থাকায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রথমবারের মতো এ বৈঠকের আয়োজন করছে। ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ডিসি সম্মেলন হবে। এর মধ্যে ইসির সঙ্গে অধিবেশন হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে ইসি ডিসি-এসপিদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। নির্বাচনের আগমুহূর্তে ইসির সঙ্গে ডিসি-এসপিদের বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু প্রতিবছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ইসির সঙ্গে ডিসিদের বৈঠক হলে দীর্ঘমেয়াদি অনেক পরিকল্পনা নেওয়া যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন এবং ভাষণ দেবেন। এর পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা হবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী, জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রথম কার্য অধিবেশন হবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সম্পর্কে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্য অধিবেশন হবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। এবারের ডিসি সম্মেলনে মোট ৩৪টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে প্রথম দিন ছয়টি, দ্বিতীয় দিন ১২টি ও তৃতীয় দিন ১৬টি অধিবেশন হবে। প্রথম দিন স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে দুটি অধিবেশন হবে। এ সময় প্রতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী, সচিব এবং অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। এবারের সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ৩৫২টি প্রস্তাব এসেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ খালেদ রহীম সমকালকে বলেন, এবার নির্বাচন কমিশন-সংক্রান্ত বিষয়ে একটা অধিবেশন রয়েছে। অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে ডিসিদের খোলামেলা আলোচনা হবে। তবে এ বিষয়ে ডিসিদের নির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব নেই। প্রস্তাব থাকলে আমরা যুক্ত করব।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে না
প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনের সময় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি মাঠ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কিছু নির্দেশনা দেন। কিন্তু এবার রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ডিসি-বিভাগীয় কমিশনাররা সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এবার ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারদের সাক্ষাৎ হচ্ছে না। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার না থাকায় সেই বৈঠকও হচ্ছে না।
জানা যায়, দ্বিতীয় দিন ডিসিরা সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ সময় বিচার বিভাগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন প্রধান বিচারপতি। প্রথম দিনে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর নৈশভোজে অংশ নেবেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ হলে চাল-আম সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা হলে চাল ও আম সরবরাহ বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি। আজ শনিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধের অপচেষ্টার প্রতিবাদে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
নওগাঁ জেলার সর্বস্তরের জনগণ ও নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, বিএনপি, জামায়াত, বাসদ, একুশে পরিষদ নওগাঁসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের চলমান ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নওগাঁ মেডিকেল বন্ধের অপচেষ্টা রুখতে বিএমএ নওগাঁর সভাপতি ইস্কেন্দার হোসেনকে আহ্বায়ক করে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠিত হয়।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুক্তার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁরা জেনেছেন নতুন যে ছয়টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, সেগুলোর মান যে পর্যায়ে উন্নত হওয়ার কথা ছিল সেই পর্যায়ে নাকি আসেনি। যার কারণে সরকার এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের অন্য মেডিকেল কলেজে নিয়ে নেবে। এরপর এই ছয়টি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এখনো বন্ধের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ইস্কেন্দার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমবায়বিষয়ক সম্পাদক, নওগাঁ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজমুল হক প্রমুখ।
সমাবেশে ইস্কেন্দার হোসেন বলেন, ‘নওগাঁ মেডিকেল কলেজ কখনোই মানহীন হতে পারে না। আমাদের এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক আছে। আমার মনে হয় না এটি বাংলাদেশের আর কোনো মেডিকেল কলেজে আছে। এখানে যাঁরা শিক্ষক আছেন তাঁরা সবাই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে ২৬টি মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা হয় সেই পরীক্ষায় বরাবরই নওগাঁ মেডিকেল কলেজ প্রথম স্থান কিংবা দ্বিতীয় স্থানে থাকে। ভালো ফলাফল সত্ত্বেও এই মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের হঠকারিতা। এই কলেজ বন্ধ করা হলে নওগাঁ থেকে চাল, আম সরবরাহ বন্ধ, অনশনসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শুধু ভবন না থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান যাচাইয়ের মাপকাঠি হতে পারে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান মানহীন হলে এর দায়ভার সরকারের। মান উন্নয়ন না করে উল্টো সরকার যে মানহীন আখ্যা দিয়ে মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে যাচ্ছে, এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের বিশাল ঘাটতি তৈরি হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা সংকুচিত হয়ে পড়বে।