বলয় ভাঙা-গড়ার চেষ্টায় আরিফুল-মুক্তাদির
Published: 13th, February 2025 GMT
সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলী ঘিরে একসময় জমজমাট ছিল সিলেট বিএনপির রাজনীতি। এক পর্যায়ে তাদের অনুসারী নেতাকর্মী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। দাঁড়িয়ে যায় বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ। সাইফুর রহমান মারা গেলে সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির হাল ধরেন। আবুল কাহের শামীম, ডা. শাহরিয়ার হোসেন, নাসিম হোসেইনসহ সাইফুর রহমান বলয়ের অনেকেই আরিফুল হকের সঙ্গে থাকায় ধীরে ধীরে তিনি নিজের অবস্থান মজবুত করেন।
অন্যদিকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর একক কোনো নেতা এ বলয়ের নেতৃত্ব দিতে পারেননি। তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, জেলা বিএনপির সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গাফফার, সিনিয়র সহসভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সামসুজ্জামানসহ একাধিক নেতা ইলিয়াস আলীর গ্রুপে ছিলেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর সরাসরি মাঠে নামেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তাঁর বাবা সাবেক এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পরিচয়ে রাজনীতিতে নেমে চমক দেখান। তিনি ২০১৮ সালে সিলেট-১ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচন করেন; লাভ করেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আরিফুল হক চৌধুরীও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত হন। এক দশক ধরে এ দুই নেতাকে ঘিরে চলছে সিলেট বিএনপির রাজনীতি। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতাই বলয়ের ব্যাপ্তি বাড়ানোয় সচেষ্ট। এমনকি গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মী আছেন ফেরার অপেক্ষায়। ক্ষমা চেয়ে আবেদন করার পাশাপাশি তারা মুক্তাদির ও আরিফুলের কাছেও ধরনা দিচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আরিফুল হকের গ্রুপে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড.
অন্যদিকে মুক্তাদিরের বলয়ে আছেন মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, যুবদলের নজিবুর রহমান নজিব, ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, জেলা যুবদল সভাপতি মোমিনুল ইসলাম মোমিনসহ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের চার শীর্ষ নেতাসহ অনেকে।
সম্প্রতি আরিফুলের ডেরা ছেড়ে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, মইন উদ্দিন সুহেল, সৈয়দ মিসবাহসহ কয়েকজন মুক্তাদিরের গ্রুপে ভিড়েছেন। অন্যদিকে মুক্তাদির বলয় থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামালসহ কয়েকজন আরিফুলের ডেরায় গেছেন। এর মধ্যে আগামী সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কয়েস লোদী মনোনয়ন চাইতে পারেন। মুক্তাদির সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। একই আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন আরিফুল হক। তবে আরিফুলকে সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে ভাবতে পারে দল; রাজি না হলে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার জন্য বলতে পারে। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের যত কমিটি হয়েছে, তাতে আধিপত্য রয়েছে খন্দকার মুক্তাদির বলয়ের। আরিফুল গ্রুপের নেতাকর্মী কমিটিতে খুব একটা ঠাঁই পাননি। সে জন্য অনেকে গ্রুপ বদলিয়েছেন বলে একাধিক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন। তারা জানান, সিলেট কৃষক দলের কমিটি ছাড়া অন্য কোনোটির শীর্ষ পদে আরিফুল হকের লোক নেই। একসময়ে আরিফুলের সঙ্গে থাকা বহিষ্কৃত সাবেক সিটি কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে মুক্তাদিরের সঙ্গে দেখা গেছে। সম্প্রতি তাঁর উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে মুক্তাদিরকে অতিথি করেন শামীম। ওই দিন খন্দকার মুক্তাদির বলেন, শামীমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি বিএনপির রাজনীতিতেই আছেন। অপরাধ ক্ষমা করলে তিনি দলে ফিরবেন।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করায় গত সিটি নির্বাচনের ৪৩ প্রার্থীকে এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে বিএনপি, যারা দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীর মধ্যে শামীম ছাড়াও রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌহিদুল হাদী, সাবেক কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব তুহিন, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রুকশানা বেগম শাহনাজ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন পনির।
জানা গেছে, রাজনৈতিক পালাবদলের পর দণ্ড মওকুফের জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেছেন বহিষ্কৃত নেতারা। শিগগির তাদের দলে ফেরানো হতে পারে। তাদের নিজ নিজ গ্রুপে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন আরিফুল ও মুক্তাদির। অনেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
আরিফুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কারও সঙ্গে আমার বিরোধ নেই। আন্দোলন করতে গিয়ে যারা নির্যাতিত হয়েছে, যারা পরীক্ষিত কর্মী, তাদের কমিটিতে রাখা নিয়ে আমি সব সময় কথা বলেছি। সে জায়গা থেকে কারও সঙ্গে দূরত্ব হতে পারে। এখনকার প্রজন্মের ছেলেদের রাজনীতি সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে। আমি তাদের সেই ধারণার পরিবর্তন করতে সব সময় রাজনীতি চর্চার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব কিংবা দলে বিভক্তির বিষয়টি স্বীকার না করে বলেন, আমরা অতীতে এক হয়ে আন্দোলন করেছি। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। দেশ ও দলকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ল হক চ ধ র ব এনপ র স ন ত কর ম র র জন ত আর ফ ল র র রহম ন ক দল র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় প্লাস্টিক পণ্যের আন্তর্জাতিক মেলা শুরু বুধবার
ঢাকার পূর্বাচলের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আগামী বুধবার চার দিনব্যাপী ১৭তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলা শুরু হচ্ছে। এই মেলায় দেশি–বিদেশি আট শতাধিক স্টল থাকবে। এতে স্বাগতিক বাংলাদেশ, চীন, জার্মানি, ভারত, ইতালি, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) এবং হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইয়োকার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস যৌথভাবে মেলাটির আয়োজন করছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে বিপিজিএমইএর কার্যালয়ে আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাণিজ্যসচিব মো. আবদুর রহিম খান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, সার্ক চেম্বার কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
বিপিজিএমইএর সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, মেলায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেজিং উপকরণ, প্লাস্টিক মোল্ড, ক্রোকারিজ, খেলনাসামগ্রী, ওষুধশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ, প্লাস্টিকের আসবাব, মেলামাইন পণ্য, তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় পণ্য, পিপি ওভেন ব্যাগ ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শন করবে। অন্যদিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো প্লাস্টিক ইনজেকশন মোল্ডিং মেশিন, পিপি ওভেন ব্যাগ মেশিন, প্যাকেজিং মেশিন, ফ্লেকসোগ্রাফিক প্রিন্টিং মেশিন, পেট ব্লো মেশিন ও প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির মেশিন বা যন্ত্র প্রদর্শন করবে।
বিপিজিএমইএ জানায়, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার ছিল ৬২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। বিশাল এই বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশ থেকে ১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। এমন তথ্য দিয়ে বিপিজিএমইএর সভাপতি বলেন, দেশ-বিদেশে প্লাস্টিকের বাজার বড় হচ্ছে। অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস খাতের প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। রপ্তানিতে এ খাতের সম্ভাবনা থাকলেও তৈরি পোশাকের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না।
সামিম আহমেদ বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে নগদ সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে গত বছর সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশে নির্ধারণ করায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবে পড়েছে। এ ছাড়া প্লাস্টিকের খেলনার ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন, ফেরদৌস ওয়াহেদ ও শাহেদুল ইসলাম, বর্তমান পর্ষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন, সহসভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক, পরিচালক এ টি এম সাঈদুর রহমান প্রমুখ।