দক্ষিণাঞ্চলের ত্রাস ‘সফি বাতাইন্না’ গ্রেপ্তার
Published: 13th, February 2025 GMT
নোয়াখালী জেলা পুলিশের তালিকাভূক্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বনদস্যু ও ভূমি দস্যু আবুল কালাম ওরপে সফি বাতাইন্নাকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার ভোরে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের জিয়ার চর এলাকায় তার আস্তানা সফি নগর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে তার চতুর্থ স্ত্রী হাসিনা বেগমকে (৫০) ও গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। তার কাছ থেকে একটি দেশীয় রামদা ও একটি চাকু পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। চরজব্বর থানার ওসি মো.
চরজব্বর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আবুল কালাম সফি প্রকাশ সফি বাতাইন্না দুই যুগের বেশি সময় ধরে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চল সুবর্ণচর ও মেঘনা নদী এলাকায় রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। ২০০০ সালের দিকে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল উজাড় করে গড়ে তুলেছিল অপরাধের সাম্রাজ্য। চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, খাস জমি দখল করে বিক্রিসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ড ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। ২০০৩ সালের দিকে তিনি গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তীতে জামিনে এসে আবার সংগঠিত হয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে হয়ে উঠেন ভূমিহীন নেতা। এতে তার সঙ্গে প্রধান কমান্ডার হিসেবে যুক্ত ছিলেন তার জামাতা কুখ্যাত সন্ত্রাসী একাধিক হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতির মামলার আসামি জসিম উদ্দিন রায়হান প্রকাশ রানা বাহিনী। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনকে জিম্মি করে রানা হয়ে যান ইউপি মেম্বার। শ্বশুর জামাই মিলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আশ্রয়ে গড়ে তুলেন নিজেদের আধিপত্যের মসনদ। গত ১৫ বছরে তাদেকে গ্রেপ্তার করতে সাহস করেনি পুলিশ, তাদেরকে ধরতে পুলিশ তার এলাকায় গেলেই মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলে পড়তো। আবার আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকিও মোকাবিলা করতে হতো প্রশাসনকে।
উপজেলার ভুক্তভোগী খামার মালিক জয়নাল আবেদীন জানান, ২০০২ সালে আমাদের তিল তিল করে গড়ে তোলা গরুর খামার থেকে ৩৮টি গরু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তার কাছে গরুগুলো ফেরত আনতে গেলে আমাদের আটকে রেখে উল্টো নগদ টাকা আদায় করে আমাদের ছেড়ে দেয় এবং প্রাণনাশের ভয় দেখায়। প্রাণের ভয়ে আর গরুর জন্য যেতে পারিনি। আমরা তার উপযুক্ত শাস্তি কামনা করছি।
চরজব্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মো. আবদুল্যাহ ওরপে আবদুল্যা চেয়ারম্যান বলেন, সফি বাতাইন্না সুবর্ণচর উপজেলার চিহিৃত ভূমিদস্যু ও ডাকাত সর্দার। তিনি এলাকায় খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি করত। তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন প্রয়াত নুব্বা ছোরা ও বশর মাঝি। ওই দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মেঘনা নদীতে ডাকাতি করতেন। সফির জামাতা রায়হান মেম্বার তার অন্যতম সহযোগী ছিল। আবদুল্যাহ চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত বছর সফি বাতাইন্না নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তার সহযোগিতা নিয়ে স্থানীয় চর জুবলী ইউনিয়নের চর মহি উদ্দিন এলাকায় ২০০ একর জমি দখল করে ভূমিহীনদের কাছে বিক্রি করেন। সফি বাতাইন্না শ্রমিকদল কর্মী হত্যা মামলার আসামি।
সাবেক সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী গত বছর ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের খুলশী থানা পুলিশের হাতে দেশি বিদেশি বিপুল পরিমাণ মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকায় এই ব্যাপারে তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, ৬ মামলার আসামি সফিকে গ্রেপ্তারের জন্য মঙ্গলবার রাতে তার আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হলে তার অনুসারীরা মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে যৌথ বাহিনীকে হামলা করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তাকে সুকৌশলে তার স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ভূমিদখল, আগ্নেয়াস্ত্র ও বন মামলা রয়েছে।
ওসি শাহীন মিয়া আরও বলেন, চরজব্বার থানা ছাড়াও একাধিক থানায় মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা করা হয়েছে। তাকে ও স্ত্রী হাসিনা বেগমকে অস্ত্র মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ব ত ইন ন এল ক য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার নতুন নীতিমালা
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার নীতিমালা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় ব্যাংকগুলো আগের পুঞ্জীভূত মুনাফা হতে কোন নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা থেকে কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন এ তথ্য জানায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটায় সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবিলা করে ব্যাংকগুলো যাতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে, সে উদ্দেশ্যে ব্যাংকগুলোর মুনাফা যথাসম্ভব অবণ্টিত রেখে মূলধন কাঠামো অধিকতর শক্তিশালী ও সুসংহত করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় ২০২১ সালে মার্চে এক সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার নীতিমালা জারি করে। যা অদ্যাবধি কার্যকর রয়েছে।
বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি, আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ব্যাংকসমূহের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় লভ্যাংশ বিতরণের জন্য অত্যাবশ্যকই পরিপালন করতে হবে যেসব শর্ত সেগুলো হলো—
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ২২ ও ধারা ২৪ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত এ সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। কেবলমাত্র বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে। পূর্বের পুঞ্জীভূত মুনাফা হতে কোন নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা যাবে না।
সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতিজনিত আরোপিত দণ্ডসুদ ও জরিমানা অনাদায়ী থাকা যাবে না। ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ ও বিনিয়োগের হার মোট ঋণ ও বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের অধিক হবে না। ঋণ, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে কোন প্রকার সংস্থান ঘাটতি থাকা যাবে না।
প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে কোন প্রকার ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ করা হলে প্রদত্ত ডেফারেল সুবিধা বহাল থাকা অবস্থায় কোন প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে না।
ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও
নতুন নীতিমালার শর্তগুলো সম্পূর্ণ পরিপালনকারী ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও এর হার দ্বারা নির্ধারিত হবে। এক্ষেত্রে, ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও বলতে ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ এবং ব্যাংকের কর পরবর্তী মুনাফা অনুপাতকে নির্দেশ করে।
নতুন নীতিমালার শর্তগুলো সম্পূর্ণ পরিপালনকারী ব্যাংকগুলো নিচের শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ প্রদান করতে পারবে। তবে ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কোনক্রমেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের অধিক হবে না। যে সকল ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে।
সেক্ষেত্রে, তাদের ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের অধিক হবে না এবং লভ্যাংশ বিতরণ পরবর্তী মূলধন পর্যাপ্ততার হার (ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের হার) কোনভাবেই ১৩.৫ শতাংশের নিচে নামতে পারবে না। যে সকল ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটান কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২.৫ শতাংশের অধিক কিন্তু ১৫ শতাংশের কম মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে।
সেক্ষেত্রে, তাদের ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশের অধিক হবে না এবং লভ্যাংশ বিতরণ পরবর্তী মূলধন পর্যাপ্ততার হার (ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের হার) কোনভাবেই ১২.৫ শতাংশের নিচে নামতে পারবে না। প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর যে সকল ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের হার ১২.৫ শতাংশের কম তবে ন্যূনতম রক্ষিত মূলধন ১০ শতাংশের বেশি হবে সে সকল ব্যাংক, তাদের সামর্থ্য অনুসারে কেবলমাত্র স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে।
নীতিমালা অনুসারে লভ্যাংশ প্রদানকারী ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক/সিইও’র স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
ঢাকা/এনএফ/এনএইচ