সিরিয়ায় তেহরানের প্রভাবের পতন ও লেবাননে ব্যাপকভাবে তেহরানের প্রভাব কমে যাওয়ার পর ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আর কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ডানপন্থী ইহুদিবাদী লবিগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে যুক্তি এত দিন দিয়ে এসেছে, সেটার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

এই লবিগুলো, পূর্ববর্তী যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, নেতানিয়াহু ও ইসরায়েল সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে একদা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জোর তদবির করেছিল। তার কারণ হলো, সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে তারা সবাই লাভবান হতে পারত, কিন্তু এতে সবচেয়ে বড় পরাজয়টা সৌদি আরবের হতো।

যাই হোক, সৌদি আরব সম্প্রতি যেসব নীতি নিয়েছে এবং বিবৃতি দিয়েছে (বিশেষ করে গাজা খালি করা নিয়ে ট্রাম্পের উন্মাদের মতো বক্তব্যের পর) তাতে স্পষ্ট যে দেশটি খুব শক্তভাবে আরব অবস্থানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে যে বড় ধরনের আঞ্চলিক পরিবর্তন ঘটে গেল, সেটা শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবের পক্ষে গেল। ট্রাম্প যে চাপ তৈরি করেছেন, এতে আরব দেশগুলো একসঙ্গে সৌদি আরবের এ অবস্থানকে আরও বিকশিত করতে পারে।

সিরিয়া ও লেবানন থেকে ইরানের প্রভাব কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ শূন্যতা আরব অঞ্চলে সৌদি আরবের নেতৃত্ব নেওয়ার একটা জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। সৌদি আরব যদি এটিকে অর্জনযোগ্য লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে অন্য কোনো দেশের পক্ষে এ ভূমিকা নেওয়া সম্ভব হবে না।

এটা সত্য যে সিরিয়ায় তুরস্ক একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু সিরিয়ার ভবিষ্যৎ দেশটির আশপাশের আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থনের ওপরও নির্ভরশীল। এ সমর্থন ছাড়া সিরিয়ার পক্ষে দুই পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এর মানে হলো, সিরিয়া একসময় ইরানি অর্ধচন্দ্রের কেন্দ্র হিসেবে সৌদি আরবকে হুমকিতে রাখত। ধীরে ধীরে সেই সৌদি আরবই আরব বৃত্তের কেন্দ্র হয়ে উঠে আঞ্চলিক নেতৃত্ব দেওয়ার পথ তৈরি করছে।

এখন সৌদি আরব যখন সিরিয়ায় ইরানের সঙ্গে জিতে গেছে এবং পূর্ব দিকে পশ্চাদপসরণ করেছে, তখন সৌদি আরবের কি দরকার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার কারণে একটা দখলদার রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। সেটা করলে প্রকৃতপক্ষেই সৌদি আরবের অবস্থান ও আঞ্চলিক নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ ছাড়া এর জন্য সৌদি আরবের ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণারও দরকার নেই অথবা যুক্তরাষ্ট্রকে অবজ্ঞা করতেও হচ্ছে না।

এর জন্য ২০২২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগকে সামনে আনা প্রয়োজন। এখন সেই উদ্যোগ ঘিরে একটা সম্মিলিত সৌদি আরব ও আরব ডিসকোর্সের বিকাশ ঘটানো জরুরি। যদিও এ উদ্যোগ ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে খুব সামান্যই প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু সেখানে যে জোরালো ও শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান ছিল, সেটার সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না।

ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও ফিলিস্তিন সংকটের কারণের পক্ষে দাঁড়ানো আঞ্চলিক প্রভাব তৈরি করার প্রবেশ দরজা। মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট গামেল আবদেল নাসের, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও এমনকি ইরানও দেখিয়েছে যে আন্তরিক না হলেও ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্তত মৌখিক সমর্থন আঞ্চলিক বৈধতা অর্জনের জন্য আরব নেতাদের জন্য জরুরি।

ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবহেলা এবং তাদের পরিত্যাগ করলে বিপরীত বাস্তবতা তৈরি করে। এই অঞ্চল, এখানকার রাজনীতি, এখানকার রাজনীতিবিদ এবং অন্য সবাই নতুন একটি স্তরে প্রবেশ করেছে। ফলে ফিলিস্তিনকে এখন শুধু প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

আরব শান্তি উদ্যোগের ওপর ভিত্তি করে সৌদি আরব যদি ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানের একটি জোরালো নীতি গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে, তাহলে আরব বিশ্বের সবার কাছে তারা নিজেদের একটা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

তবে এর অনেক কিছুই ইউরোপ কিংবা চীনের বাস্তবতার ওপরও নির্ভর করে।

প্রকৃতপক্ষে চীন একটা ক্রমবর্ধমান বিকাশের পথে রয়েছে। ২০৪৯ সালের মধ্যেই বিশ্বের রাজধানী হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে বেইজিং। সে কারণে এখানে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে কী কারণে একটি ক্ষয়িষ্ণু পরাশক্তির (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে তার ভবিষ্যৎকে জুড়ে দেবে সৌদি আরব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এমন কোনো ঐশ্বরিক সত্তা নন, যাঁর কাছে আমাদের সবকিছু সমর্পণ করে দিতে হবে এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিকে সাজাতে হবে। তাঁর বিদায়ের আগপর্যন্ত সব কটি দেশের সরকার ও এনজিওগুলো টিকে থাকার সামর্থ্য রাখে। কানাডা, পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার এবং গাজা পরিষ্কার করে ফেলার তাঁর নীতি ও শিশুসুলভ বিবৃতি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও তাঁর বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জার্মানি, কানাডা, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো ট্রাম্পের বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ তালিকায় চীনও যুক্ত আছে।

আরব বিশ্ব থেকে মিসর, জর্ডান ও সৌদি আরব এই প্রত্যাখানের ঐক্যতানে যুক্ত হয়েছে। সৌদি আরবের অবস্থান অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর জন্য সুরক্ষার পরিবেশ তৈরি করে।

খালিদ আল-হারব কাতারের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির লিবারেল আর্টস অনুষদের অধ্যাপক

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরব র স অবস থ ন র জন ত র জন য আরব য

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ হলে চাল-আম সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি

নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা হলে চাল ও আম সরবরাহ বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি। আজ শনিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধের অপচেষ্টার প্রতিবাদে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

নওগাঁ জেলার সর্বস্তরের জনগণ ও নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, বিএনপি, জামায়াত, বাসদ, একুশে পরিষদ নওগাঁসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের চলমান ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নওগাঁ মেডিকেল বন্ধের অপচেষ্টা রুখতে বিএমএ নওগাঁর সভাপতি ইস্কেন্দার হোসেনকে আহ্বায়ক করে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠিত হয়।

নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুক্তার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁরা জেনেছেন নতুন যে ছয়টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, সেগুলোর মান যে পর্যায়ে উন্নত হওয়ার কথা ছিল সেই পর্যায়ে নাকি আসেনি। যার কারণে সরকার এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের অন্য মেডিকেল কলেজে নিয়ে নেবে। এরপর এই ছয়টি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এখনো বন্ধের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

নওগাঁ মেডিকেল কলেজ রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ইস্কেন্দার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমবায়বিষয়ক সম্পাদক, নওগাঁ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজমুল হক প্রমুখ।

সমাবেশে ইস্কেন্দার হোসেন বলেন, ‘নওগাঁ মেডিকেল কলেজ কখনোই মানহীন হতে পারে না। আমাদের এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক আছে। আমার মনে হয় না এটি বাংলাদেশের আর কোনো মেডিকেল কলেজে আছে। এখানে যাঁরা শিক্ষক আছেন তাঁরা সবাই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে ২৬টি মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা হয় সেই পরীক্ষায় বরাবরই নওগাঁ মেডিকেল কলেজ প্রথম স্থান কিংবা দ্বিতীয় স্থানে থাকে। ভালো ফলাফল সত্ত্বেও এই মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের হঠকারিতা। এই কলেজ বন্ধ করা হলে নওগাঁ থেকে চাল, আম সরবরাহ বন্ধ, অনশনসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শুধু ভবন না থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান যাচাইয়ের মাপকাঠি হতে পারে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান মানহীন হলে এর দায়ভার সরকারের। মান উন্নয়ন না করে উল্টো সরকার যে মানহীন আখ্যা দিয়ে মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে যাচ্ছে, এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের বিশাল ঘাটতি তৈরি হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা সংকুচিত হয়ে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ