সৌদি আরবের সামনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ
Published: 13th, February 2025 GMT
সিরিয়ায় তেহরানের প্রভাবের পতন ও লেবাননে ব্যাপকভাবে তেহরানের প্রভাব কমে যাওয়ার পর ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আর কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ডানপন্থী ইহুদিবাদী লবিগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে যুক্তি এত দিন দিয়ে এসেছে, সেটার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
এই লবিগুলো, পূর্ববর্তী যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, নেতানিয়াহু ও ইসরায়েল সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে একদা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জোর তদবির করেছিল। তার কারণ হলো, সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে তারা সবাই লাভবান হতে পারত, কিন্তু এতে সবচেয়ে বড় পরাজয়টা সৌদি আরবের হতো।
যাই হোক, সৌদি আরব সম্প্রতি যেসব নীতি নিয়েছে এবং বিবৃতি দিয়েছে (বিশেষ করে গাজা খালি করা নিয়ে ট্রাম্পের উন্মাদের মতো বক্তব্যের পর) তাতে স্পষ্ট যে দেশটি খুব শক্তভাবে আরব অবস্থানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যে বড় ধরনের আঞ্চলিক পরিবর্তন ঘটে গেল, সেটা শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবের পক্ষে গেল। ট্রাম্প যে চাপ তৈরি করেছেন, এতে আরব দেশগুলো একসঙ্গে সৌদি আরবের এ অবস্থানকে আরও বিকশিত করতে পারে।
সিরিয়া ও লেবানন থেকে ইরানের প্রভাব কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ শূন্যতা আরব অঞ্চলে সৌদি আরবের নেতৃত্ব নেওয়ার একটা জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। সৌদি আরব যদি এটিকে অর্জনযোগ্য লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে অন্য কোনো দেশের পক্ষে এ ভূমিকা নেওয়া সম্ভব হবে না।
এটা সত্য যে সিরিয়ায় তুরস্ক একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু সিরিয়ার ভবিষ্যৎ দেশটির আশপাশের আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থনের ওপরও নির্ভরশীল। এ সমর্থন ছাড়া সিরিয়ার পক্ষে দুই পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এর মানে হলো, সিরিয়া একসময় ইরানি অর্ধচন্দ্রের কেন্দ্র হিসেবে সৌদি আরবকে হুমকিতে রাখত। ধীরে ধীরে সেই সৌদি আরবই আরব বৃত্তের কেন্দ্র হয়ে উঠে আঞ্চলিক নেতৃত্ব দেওয়ার পথ তৈরি করছে।
এখন সৌদি আরব যখন সিরিয়ায় ইরানের সঙ্গে জিতে গেছে এবং পূর্ব দিকে পশ্চাদপসরণ করেছে, তখন সৌদি আরবের কি দরকার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার কারণে একটা দখলদার রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। সেটা করলে প্রকৃতপক্ষেই সৌদি আরবের অবস্থান ও আঞ্চলিক নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ ছাড়া এর জন্য সৌদি আরবের ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণারও দরকার নেই অথবা যুক্তরাষ্ট্রকে অবজ্ঞা করতেও হচ্ছে না।
এর জন্য ২০২২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগকে সামনে আনা প্রয়োজন। এখন সেই উদ্যোগ ঘিরে একটা সম্মিলিত সৌদি আরব ও আরব ডিসকোর্সের বিকাশ ঘটানো জরুরি। যদিও এ উদ্যোগ ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে খুব সামান্যই প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু সেখানে যে জোরালো ও শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান ছিল, সেটার সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না।
ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও ফিলিস্তিন সংকটের কারণের পক্ষে দাঁড়ানো আঞ্চলিক প্রভাব তৈরি করার প্রবেশ দরজা। মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট গামেল আবদেল নাসের, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও এমনকি ইরানও দেখিয়েছে যে আন্তরিক না হলেও ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্তত মৌখিক সমর্থন আঞ্চলিক বৈধতা অর্জনের জন্য আরব নেতাদের জন্য জরুরি।
ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবহেলা এবং তাদের পরিত্যাগ করলে বিপরীত বাস্তবতা তৈরি করে। এই অঞ্চল, এখানকার রাজনীতি, এখানকার রাজনীতিবিদ এবং অন্য সবাই নতুন একটি স্তরে প্রবেশ করেছে। ফলে ফিলিস্তিনকে এখন শুধু প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
আরব শান্তি উদ্যোগের ওপর ভিত্তি করে সৌদি আরব যদি ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানের একটি জোরালো নীতি গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে, তাহলে আরব বিশ্বের সবার কাছে তারা নিজেদের একটা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
তবে এর অনেক কিছুই ইউরোপ কিংবা চীনের বাস্তবতার ওপরও নির্ভর করে।
প্রকৃতপক্ষে চীন একটা ক্রমবর্ধমান বিকাশের পথে রয়েছে। ২০৪৯ সালের মধ্যেই বিশ্বের রাজধানী হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে বেইজিং। সে কারণে এখানে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে কী কারণে একটি ক্ষয়িষ্ণু পরাশক্তির (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে তার ভবিষ্যৎকে জুড়ে দেবে সৌদি আরব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এমন কোনো ঐশ্বরিক সত্তা নন, যাঁর কাছে আমাদের সবকিছু সমর্পণ করে দিতে হবে এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিকে সাজাতে হবে। তাঁর বিদায়ের আগপর্যন্ত সব কটি দেশের সরকার ও এনজিওগুলো টিকে থাকার সামর্থ্য রাখে। কানাডা, পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার এবং গাজা পরিষ্কার করে ফেলার তাঁর নীতি ও শিশুসুলভ বিবৃতি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও তাঁর বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জার্মানি, কানাডা, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো ট্রাম্পের বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ তালিকায় চীনও যুক্ত আছে।
আরব বিশ্ব থেকে মিসর, জর্ডান ও সৌদি আরব এই প্রত্যাখানের ঐক্যতানে যুক্ত হয়েছে। সৌদি আরবের অবস্থান অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর জন্য সুরক্ষার পরিবেশ তৈরি করে।
খালিদ আল-হারব কাতারের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির লিবারেল আর্টস অনুষদের অধ্যাপক
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আরব র স অবস থ ন র জন ত র জন য আরব য
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন নোবিপ্রবি উপচার্য
সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্ন করার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। নোবিপ্রবিতেও সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই এবং এক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স। এসব নিয়ে নোবিপ্রবির পরিবেশ বিঘ্ন করার চেষ্টা যারাই করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে নববর্ষের শোভাযাত্রা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
নতুন চুক্তি করতে তুরস্ক সফরে নোবিপ্রবি উপাচার্য
গাজায় নির্যাতিতদের পক্ষে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “আশা করি এই নববর্ষ আমাদেরকে নতুন উদ্যোমে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়েকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব হচ্ছে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নীতি বিরুদ্ধ কিছু করব না।”
এর আগে, বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে শেষ হয়।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজীদ হোছাইন চৌধুরীসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দপ্তর সমূহের কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী