রাজধানীর কড়াইল বস্তির পূর্ব পাশে লেকের ধারে মাটির রাস্তা। এর এক পাশে লেক, আরেক পাশে বস্তি। টিঅ্যান্ডটি নৌকাঘাট থেকে মাটির রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে যেতে আনুমানিক ৫০ গজ পর সাজনাতলা। সেখানে তিন যুবক দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। প্রত্যেকের হাতে সিগারেট। পাশ কাটিয়ে কয়েক পা এগোতেই তাদের একজন হাঁক ছাড়লেন। ‘কাঁঠাল পাতা কার কয়টা লাগবে? আছে মাত্র কয়েকটা। পরে চাইলেও পাবেন না।’
এই চিত্র ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার। কড়াইল বস্তিতে মাদকদ্রব্য সেবন করেন এমন চারজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হেরোইনকে ‘কাঁঠাল পাতা’ বলে ডাকা হয়। সাধারণ মানুষ যাতে না বুঝতে পারে, সে জন্য এই সাংকেতিক নাম। ইয়াবাকে বলা হয় ‘পট’ বা ‘গুটি’। গাঁজার নাম ‘ঘাসপাতা’। কাগজে মুড়িয়ে তিন ধরনের পুরিয়া করে হেরোইন বিক্রি করা হয়। পুরিয়াভেদে এর মূল্য ৫০০, ১ হাজার ২০০ ও ৬ হাজার টাকা। হেরোইনের চাহিদা মাঝে হ্রাস পেলেও বছরখানেক ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, বস্তিসংলগ্ন এই লেকের পাশের মাটির রাস্তায় হেরোইন বেচাকেনার চারটি স্পট রয়েছে। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হেরোইন বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া বস্তির বিভিন্ন জায়গায়ও রয়েছে গাঁজার স্পট। তবে ইয়াবা বিক্রির নির্দিষ্ট স্পট নেই। ইয়াবা বিক্রেতারা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কিংবা মোবাইল ফোনে অর্ডার পেয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। এই কাজটি করা হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে, যাতে ধরা না পড়ে।
বিশাল এলাকা নিয়ে বনানী থানার এই বস্তি কড়াইল নামে পরিচিত হলেও এর মধ্যে রয়েছে পৃথক নামের বস্তি। বেলতলা বস্তি, এরশাদনগর, গোডাউন, বউবাজার, বেদে, মোশারফ বাজার ও জামাইবাজার বস্তিকে একসঙ্গে কড়াইল বস্তি বলা হয়। এই এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং সেবন চললেও যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে পুলিশ দুয়েকটি অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর কিছু হয় না। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমই নেই বস্তি এলাকায়।
বস্তিতে প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সাধারণ বাসিন্দারা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে নিয়ে মাদক আতঙ্কে থাকেন, কখন না জানি মাদকে জড়িয়ে পড়ে! তাদের ভাষ্য, বস্তির ভেতর খুব সহজেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকসেবীরা বস্তির সরু গলিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করেন। কিছু গলি আছে, সেগুলোতে সন্ধ্যার পর মাদকের তীব্র গন্ধে হাঁটার উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের নিষেধ করার মতো সাহস নেই কারও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামাইবাজার বস্তির পঞ্চাশোর্ধ্ব এক রিকশাচালক জানান, তাঁর দুই ছেলে। ঘরের পেছনের গলিতে প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি হতো। বছর দুয়েক আগে তাঁর ১৬ বছরের ছোট ছেলে ইয়াবা সেবন শুরু করে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ইয়াবা পাওয়া সহজ না হলে হয়তো আমার ছেলে ওই পথে পা বাড়াত না। এখনও তাকে ফেরাতে পারিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেকের পাশের মাটির রাস্তায় সজনে গাছের নিচে যারা হেরোইন বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তারা বস্তির চিহ্নিত মাদক কারবারি মো.
সরেজমিন জানা যায়, জামাইবাজার বস্তিসংলগ্ন নৌকাঘাটের পাশে মাটির রাস্তাসংলগ্ন মো. জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকান। দোকানে বসেই সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা-বিস্কুটের আড়ালে তিনি হেরোইন বিক্রি করেন। দোকানে সিগারেটের খালি প্যাকেটে হেরোইনের পুরিয়া রাখা হয়। এ ছাড়া দোকানসংলগ্ন বাসায়ও থাকে। পরিচিত ক্রেতা ছাড়া তিনি বিক্রি করেন না।
তাঁর ছোট ভাই জিল্লুর রহমানও একই কারবারে জড়িত। সম্প্রতি জিল্লুর যৌথ বাহিনীর হাতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরশাদনগর বস্তির মসজিদের গলিতে গাঁজা বিক্রি করেন সাগরের স্ত্রী জরিনা এবং রাজার গলিতে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন বিক্রি করেন মো. কাঞ্চন। বেলতলা বস্তির আমির, আবুল ও এরশাদের ছেলে রুবেল গাঁজা-ইয়াবা বেচেন। মাছ বাজারের আফাজ ও আসেক, ঝিলপাড়ের ইব্রাহিম ও সাইদুল ইসলাম এবং বউবাজারের খামারবাড়ির শাহীন, ডাক্তারবাড়ির গলির রাসেল ও মোশারফ বাজারের শহিদুল ইয়াবার অন্যতম ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ সমকালকে বলেন, অভিযান চালানো হয়। মামলাও হয়েছে বেশ কিছু। আবার অভিযান চালাব।
বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার বলেন, বস্তি এলাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের কাজ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। গত সোমবারও গাঁজাসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ র ইন ব ক র
এছাড়াও পড়ুন:
বইমেলায় এস এম জাহিদ হাসানের ‘চলতি পথের বাঁকে’
বইমেলা ২০২৫ এ অনার্য পাবলিকেশন্স লি. প্রকাশ করেছে এস এম জাহিদ হাসানের ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘চলতি পথের বাঁকে’। এস এম জাহিদ হাসানের লেখায় উঠে এসেছে বাংলার সংস্কৃতি, গৌরবময় ঐতিহ্য আর বিশেষ ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিধন্য সব স্থানের সর্বশেষ পরিস্থিতি।
জাহ্নবী চৌধুরানীর সন্তোষ ভাসানীর গল্প বলে, আশি দুয়ারী বাড়িতে একজন মানুষও নেই!, বাড়ির নাম ‘উত্তর তরফ’, দিগন্ত বিস্তৃত মিঠামইন, এগারোসিন্দুর পাড়ে, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি, চিত্র পাড়ে সুলতানের নাও— সহ মোট ২৮টি ভ্রমণগদ্য রয়েছে এ বইতে।
এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতিই আমাদের পরিচয়। সংস্কৃতি, ঐতিহ্যই বলে দেয় আমরা কে, কোথায় ছিলাম, কোন দিকে যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি। আমার পিতা ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের একজন শিক্ষক ও সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষ। শৈশবে তার মুখে বাংলাদেশের অনেক গুণী ব্যক্তিত্বের জীবনী সম্পর্কে জেনেছি। একটু বড় হয়ে বই পড়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থান, স্থাপনা ও গুণী ব্যক্তিদের আরও বিশদে জানার চেষ্টা করেছি। যত জেনেছি তাদের প্রতি তত ভালোবাসা ও অনুরাগ জন্মেছে। কৈশোরে যুক্ত ছিলাম সংস্কৃতি সংগঠন ‘খেলাঘর’-এর সঙ্গে। এর ফলে সাংস্কৃতিক অনেক পুরোধা ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কর্মজীবন শুরু করার পর থেকে কাজের সুবাদে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। চলার পথে যেখানেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের খোঁজ পেয়েছি, সেখানেই ছুটে গিয়েছি দেখার জন্য। এই সব স্থাপনার সৌন্দর্য, গাম্ভীর্য আমাকে বিমোহিত করেছে। কিন্তু যখন দেখেছি অনেক স্থাপনা সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো আমাকে ব্যথিত করেছে। ব্যক্তিগত ভালোলাগা, দায়বোধ আর পাঠককে জানানোর ইচ্ছা থেকে এইসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মৃতিধন্য স্থান সম্পর্কে লিখতে শুরু করি।’’
আরো পড়ুন:
লেখককে ছুটতে হয় নতুন চিন্তার খোঁজে: ফজলুল কবিরী
বইমেলায় শফিক হাসান’র ভ্রমণগ্রন্থ ‘দেখি বাংলার মুখ’
লেখক আরও বলেন, ‘‘এ কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, যা দেখেছি তার সামন্যই লিখতে পেরেছি। বিষয়টি এরকম আকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলে থাকে অনেক বড় চাঁদ কিন্তু জানালা দিয়ে যেটুকু আলো আমার ঘরে পৌঁছায় সেটুকুই আমার। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্য, স্থাপনা সম্পর্কে আমাদের দেখা সৌন্দর্য আর অনুভূতির আলোটুকু পাঠকের মনে ছড়িয়ে পড়ুক, এইটুকুই প্রত্যাশা। যাদের অনুসন্ধিৎসু মন তাদের এই বই ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।’’
চলতি পথের বাঁকে বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।
বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৩০০ টাকা।
বইমেলায় স্টল নম্বর: ৩০৪, ৩০৫,৩০৬, ৩০৭
ঢাকা/লিপি