গোপন বন্দিশালার (আয়নাঘর) আলামত নষ্ট করার ফলে অপরাধ প্রমাণে বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা হবে না বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, আয়নাঘরের বিভিন্ন আলামত নষ্ট করে তারা আরেকটি অপরাধ করেছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই।  

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আলামত নষ্ট করে তারা বিচার থেকে বিরত রাখতে পারবে না। বরং এসব আলামত ধ্বংস করে তারা আরেকটি অপরাধ করেছে। আমরা বিচারে তাদের অপরাধ নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারব, এখানে ন্যায়বিচার বা বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা হবে না। 

গতকাল বুধবার বিভিন্ন গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের পর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি আয়নাঘরের সেলগুলো এবং টর্চারের যন্ত্রপাতি তারা ভেঙে ফেলেছে। সেখানে ময়লা-আবর্জনা ও নানা ফার্নিচার রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে, যেন আমরা ঢুকতে না পারি। আর ভিকটিমরা যেখানে ছিল, সেখানে দেয়াল তুলে বন্ধ করে ভেতর থেকে সেলের সব লোহার শিক খুলে ফেলা হয়েছে। আমরা ঢুকে ঠিকই জ্যামিতিক মাপ নিয়ে বুঝতে পারছি, ভেতরে আরও সেল আছে। এর পর আরও সেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। 

তিনি বলেন, আমাদের এসব অপরাধ প্রমাণ করতে কোনো অসুবিধা হবে না। বরং মামলা আরও শক্তিশালী হবে। র‌্যাব-৩-এর সেল হুবহু আছে, বাকি সব জায়গায় আলামত নষ্ট করা হয়েছে। ডিজিএফআই সেলে ব্যাপকভাবে আলামত নষ্ট করা হয়েছে। এটা তারা তাদের অপরাধ ঢাকতে চেয়েছে। তাদের অপরাধের মানসিকতা ছিল, এতদিন তারা যে অপরাধ করেছে, তা আবারও প্রমাণ হলো। কারা এটা করেছে, আমরা এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারিনি, তবে ধরেই নিতে পারি, যারা অপরাধ করেছে তারাই এসব কাজ করেছে। 

এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, আয়নাঘরের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা ভিকটিম রয়েছে, তারা মামলা করতে পারেন। আবার গুম কমিশনের কাছেও তথ্য পেতে পারেন। আয়নাঘর আগেই  সিল করে দেওয়া উচিত ছিল। এখন যে আলামত রয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি। তদন্তে বেরিয়ে আসবে আয়নাঘর কত বছর ধরে চালু ছিল। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সমকালকে বলেন, আয়নাঘরের আলামত নষ্ট করলেও যে পরিমাণ আলামত এখন পাওয়া গেছে, বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সমকালকে বলেন, আলামত ধ্বংস করাটা পেনাল কোড অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফলে আলামত নষ্ট করার কারণে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনাটা জরুরি। 

প্রেস সচিব যা বললেন

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আলামত নষ্ট করা হয়েছে কিনা, সেটা গুম কমিশন দেখছে। যে মামলাগুলো হচ্ছে, সেগুলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররাও দেখছেন। প্রতিটি ‘আয়নাঘর’ এভিডেন্স হিসেবে সিলগালা করা থাকবে। কারণ, আমাদের লিগ্যাল প্রসেসে এগুলো লাগবে। গুম কমিশন বলবে, আদৌ নষ্ট হয়েছে কী হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি যে, প্লাস্টার করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় রুম ছোট ছিল, দেয়াল ভেঙে বড় দেখানো হয়েছে। এটা ইচ্ছায় নাকি অনিচ্ছায়, সেটা গুম কমিশন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার করবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পাসপোর্ট পেতে মাইকেল চাকমার আবেদন সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক মাইকেল চাকমার পাসপোর্ট পেতে করা আবেদন সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাঁর করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন।

পাসপোর্ট পেতে নির্দেশনা চেয়ে গত সপ্তাহে ওই রিট করেন মাইকেল চাকমা। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান ও মনিরা হক শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

পরে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম অনুসারে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন মাইকেল চাকমা। এ জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার তারিখ ছিল ২৬ জানুয়ারি। নির্ধারিত দিনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় তিনি রিট করেন। আদালত রুল দিয়েছেন। একই সঙ্গে আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে পাসপোর্টের জন্য করা আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া পাসপোর্ট ইস্যু করার ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না নিয়ে মৌখিকভাবে রিট আবেদনকারীকে ফিরিয়ে দেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান মাইকেল চাকমার এই আইনজীবী।

‘আয়নাঘর’ থেকে মাইকেল চাকমা মুক্তি পেয়েছেন বলে গত বছরের ৭ আগস্ট জানায় ইউপিডিএফ। এর আগে বিগত সরকারের আমলে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নিখোঁজ হয়েছিলেন মাইকেল চাকমা। গুমের এই অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গত ডিসেম্বরে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ঘুষকে’ অফিসিয়ালি বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনা
  • আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় রোববার
  • আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় রোববার
  • আবরার হত্যা: হাইকোর্টের রায় রবিবার
  • বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় কাল
  • আদালতে স্তরে স্তরে ‘বকশিশ’ নির্ধারণ
  • টিউলিপের বিরুদ্ধে জাল সই ব্যবহার করে বোনের নামে ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের অভিযোগ
  • বোনকে ফ্ল্যাট দিতে সই জালিয়াতি করেন টিউলিপ
  • ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রুল
  • পাসপোর্ট পেতে মাইকেল চাকমার আবেদন সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ