‘ছোটবেলায় মাকে হারাইছে আবুল কাশেম। বছর পাঁচেক আগে মরছে তার বাপে। দাদার কাছেই সে বড় হইছে। তিন বছর আগে সেও মারা গেছে। এখন সুইটি নামে ছোট এক বোন আছে। কাশেমের মতো এমন অসহায় পোলাকে নির্মমভাবে কারা মারল! আমার এই এতিম ভাতিজার খুনিদের বিচার হবে তো?’ 

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় আহত আবুল কাশেমের (১৭) মৃত্যুতে আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন তাঁর ফুফু নাসিমা আক্তার। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁর মৃত্যু হয়।

গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ কলমেশ্বর গ্রামের প্রয়াত হাজি জামাল চিশতি ও রেখা আক্তার দম্পতির ছেলে আবুল কাশেম। গত শুক্রবার রাতে ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হকের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। খবর পেয়ে গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে যান। এ সময় তাদের ওপর হামলা হয়। এতে আবুল কাশেমসহ ১৫ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো.

ফারুক জানান, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে আবুল কাশেমের মৃত্যু হয়। সন্ধ্যার পর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে আবুল কাশেমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দক্ষিণ কলমেশ্বর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাত ৮টার দিকে কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ফুফু নাসিমা আক্তার আহাজারি করছেন। তাঁকে ঘিরে আছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তারা জানান, স্থানীয় একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন আবুল কাশেম। মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজও করতেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিয়েছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফুফু নাসিমা বলেন, ‘পোলাডা নিজেই রান্না কইরা খাইত। পৈতৃক সূত্রে একখণ্ড জমি পাইছিল। সেখানে তিন-চারটা রুম বানাইয়া ভাড়া দিছিল। এর থেকে যা আসত, তাই দিয়া চলত। মাঝেমধ্যে কাজও করত। পোলাডারে ওরা বাঁচতে দিল না।’

তিনি জানান, প্রয়াত জামালের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান আবুল কাশেম। তার সৎভাইয়েরা মরদেহ আনতে ঢাকায় গেছে। 

এদিকে রাত ৮টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গাজীপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সেখানে আবুল কাশেমের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।

আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কাশেম শহীদ হয়ে গেছেন। প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।’ পরে আরেক পোস্টে তিনি ঘোষণা দেন, রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জানাজা হবে। এর পর আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল হবে শহীদ মিনার থেকেই। দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে, গ্রামে কাশেমের গায়েবানা জানাজা এবং আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে খাটিয়া মিছিল করার আহ্বান জানান হাসনাত। 

এদিকে আবুল কাশেমের কফিন নিয়ে বুধবার রাতে মিছিল হয়েছে। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছিল। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতারা।

গতকাল রাত ৯টার কিছু আগে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে আবুল কাশেমের মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয়। এর পর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো মরদেহটি রাখা হয়। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়।

জানাজা শুরুর আগে কাতারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম মরদ হ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঘন কুয়াশায় তিন ট্রাকের সংঘর্ষ, আহত ৫

ঘন কুয়াশায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বটতৈল আনসার ক্যাম্পের সামনে তিনটি ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে প্রাণহানির কোনো ঘটনা না ঘটলেও অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চৌড়হাস হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আল-মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘সকালে ঘন কুয়াশায় মহাসড়কের পাশে একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ঝিনাইদহ থেকে ছেড়ে আসা কুষ্টিয়াগামী একটি ট্রাক পেছন থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা দেয়। একই সময় পেছনে থাকা আরো একটি ট্রাক দুই ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে ৫ জন আহত হয়েছেন।’’

আরো পড়ুন:

নড়াইলে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২

ফরিদপুরে অটোবাইকে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২

ঢাকা/কাঞ্চন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ