সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ
Published: 13th, February 2025 GMT
ত্রিশালে সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন’ প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটেছে।
প্রকল্পটির আওতায় ত্রিশাল পৌরসভায় ১১২টি সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতিটি সৌরচুল্লির মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এর কাজ পায় ভোল্ড বেল করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশে উন্নত মানের সামগ্রী ব্যবহারের কথা থাকলেও উল্লেখ করা হয়নি কোন ব্র্যান্ডের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবেন ঠিকাদার।
কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর। চার ধাপে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ১১২টি সৌরচুল্লি স্থাপনে সময় বেঁধে দেওয়া হয় এক বছর। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়ানো হয় সময়। বর্ধিত সময় অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ মের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ২৮টি করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মাত্র ৫৬টি সৌরচুল্লি স্থাপন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হিসাবমতে নির্ধারিত ও বর্ধিত সময়ের এক বছর পৌনে চার মাসে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর মাত্র চার মাসে তারা বাকি কাজ কীভাবে শেষ করবে– এমন প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
প্রকল্পের ৫৬টি সৌরচুল্লি স্থাপনের তালিকা ধরে সরেজমিন অনুসন্ধানে মিলেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য। এর মধ্যে একই নামে প্রথম পর্যায়ের তালিকার ১৯ নম্বরে জয়নাল মেম্বারের বাড়ির সামনে মসজিদে ও দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকার ৬ নম্বরে জয়নাল মেম্বারের বাড়ির মসজিদে দুটি সৌরচুল্লি স্থাপন দেখালেও পাওয়া যায় মাত্র একটি। ওই বাড়ির মিলন মিয়া জানান, একটি সৌরচুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকার ২৬ নম্বরে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসায় গিয়েও চোখে পড়েনি কোনো সৌরচুল্লি। মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা এখলাছ উদ্দিন নিশ্চিত করেন সেখানে সৌরচুল্লি স্থাপন না হওয়ার বিষয়টি।
কয়েকদিন সন্ধ্যার পর আকন্দ বুক হাউজ, মুক্তিযোদ্ধা অফিস ও উপজেলা পরিষদ মোড়সহ কয়েকটি স্থানে দেখা যায়, নিম্ন মানের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ব্যবহারের ফলে ঝকঝকে আলোর পরিবর্তে অল্প আলো জ্বলছে সোলার সড়কবাতিগুলোতে।
পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ চলমান দাবি করলেও চোখে পড়েনি কোনো কার্যক্রম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইদ্রিস আলী কাজ চলমান না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। স্বল্প আলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন্টি আছে, সমস্যা দেখা দিলে মেরামত করে দেওয়া যাবে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা সৌরচুল্লির ধরন অনুযায়ী একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মূল্য যাচাই করে দেখা যায়, ব্যাটারি-লাইটসহ এ ধরনের যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ মূল্য ১৪ হাজার টাকা। এই হিসাবে খুঁটি ও স্থাপন খরচ বাবদ পড়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা, যা অসংগতিপূর্ণ বলছেন ব্যবসায়ীরা।
সোলার ব্যবসায়ী কবির আহমেদের ভাষ্য, প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। কেননা সরবরাহ করা সৌরবিদ্যুৎ সরঞ্জামের মূল্য অনেক বেশি ধরা হয়েছে।
কথা হয় প্রকল্প পরিচালক ও ত্রিশাল পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সানাউল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, দাম নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। যে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে কথা বলতে পারেন। সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা ও জয়নাল মেম্বারের বাড়ির নামের একটি সৌরচুল্লি অন্যত্র স্থাপন করা হয়েছে। চার মাসে বাকি ৫০ শতাংশ কাজ কীভাবে শেষ করবেন? এর সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ প রকল প শ ষ কর পর য য়
এছাড়াও পড়ুন:
'গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, মনটা ভরি গেইল'
‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'
নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেইল। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’
লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'
শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে।