ত্রিশালে সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন’ প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটেছে।

প্রকল্পটির আওতায় ত্রিশাল পৌরসভায় ১১২টি সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতিটি সৌরচুল্লির মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এর কাজ পায় ভোল্ড বেল করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশে উন্নত মানের সামগ্রী ব্যবহারের কথা থাকলেও উল্লেখ করা হয়নি কোন ব্র্যান্ডের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবেন ঠিকাদার।

কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর। চার ধাপে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ১১২টি সৌরচুল্লি স্থাপনে সময় বেঁধে দেওয়া হয় এক বছর। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়ানো হয় সময়। বর্ধিত সময় অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ মের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ২৮টি করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মাত্র ৫৬টি সৌরচুল্লি স্থাপন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হিসাবমতে নির্ধারিত ও বর্ধিত সময়ের এক বছর পৌনে চার মাসে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর মাত্র চার মাসে তারা বাকি কাজ কীভাবে শেষ করবে– এমন প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

প্রকল্পের ৫৬টি সৌরচুল্লি স্থাপনের তালিকা ধরে সরেজমিন অনুসন্ধানে মিলেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য। এর মধ্যে একই নামে প্রথম পর্যায়ের তালিকার ১৯ নম্বরে জয়নাল মেম্বারের বাড়ির সামনে মসজিদে ও দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকার ৬ নম্বরে জয়নাল মেম্বারের বাড়ির মসজিদে দুটি সৌরচুল্লি স্থাপন দেখালেও পাওয়া যায় মাত্র একটি। ওই বাড়ির মিলন মিয়া জানান, একটি সৌরচুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকার ২৬ নম্বরে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসায় গিয়েও চোখে পড়েনি কোনো সৌরচুল্লি। মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা এখলাছ উদ্দিন নিশ্চিত করেন সেখানে সৌরচুল্লি স্থাপন না হওয়ার বিষয়টি।

কয়েকদিন সন্ধ্যার পর আকন্দ বুক হাউজ, মুক্তিযোদ্ধা অফিস ও উপজেলা পরিষদ মোড়সহ কয়েকটি স্থানে দেখা যায়, নিম্ন মানের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ব্যবহারের ফলে ঝকঝকে আলোর পরিবর্তে অল্প আলো জ্বলছে সোলার সড়কবাতিগুলোতে।

পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ চলমান দাবি করলেও চোখে পড়েনি কোনো কার্যক্রম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইদ্রিস আলী কাজ চলমান না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। স্বল্প আলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন্টি আছে, সমস্যা দেখা দিলে মেরামত করে দেওয়া যাবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা সৌরচুল্লির ধরন অনুযায়ী একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মূল্য যাচাই করে দেখা যায়, ব্যাটারি-লাইটসহ এ ধরনের যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ মূল্য ১৪ হাজার টাকা। এই হিসাবে খুঁটি ও স্থাপন খরচ বাবদ পড়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা, যা অসংগতিপূর্ণ বলছেন ব্যবসায়ীরা।

সোলার ব্যবসায়ী কবির আহমেদের ভাষ্য, প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। কেননা সরবরাহ করা সৌরবিদ্যুৎ সরঞ্জামের মূল্য অনেক বেশি ধরা হয়েছে।
কথা হয় প্রকল্প পরিচালক ও ত্রিশাল পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সানাউল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, দাম নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। যে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে কথা বলতে পারেন। সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা ও জয়নাল মেম্বারের বাড়ির নামের একটি সৌরচুল্লি অন্যত্র স্থাপন করা হয়েছে। চার মাসে বাকি ৫০ শতাংশ কাজ কীভাবে শেষ করবেন? এর সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ প রকল প শ ষ কর পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ ছাড়া সৌদি ক্যাম্পে বাফুফেতে অসন্তোষ!

জাতীয় ফুটবল দলের সবকিছু দেখার কমিটি আছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে। জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান স্বয়ং বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। এই কমিটিতে আছেন সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসানসহ সাবেক ফুটবলাররাও। সব আলোচনার ভিত্তিতেই জাতীয় ফুটবল দলকে সৌদি আরবে ক্যাম্প করতে পাঠিয়েছে বাফুফে। কিন্তু এই ক্যাম্পে দলের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ বাফুফের অভ্যন্তরেই। 

প্রশ্ন ওঠার বড় কারণ, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে গিয়ে কোনো শক্তিশালী দেশের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে না পারায়। এত অর্থ ব্যয় করে সৌদি ক্যাম্প করার চেয়ে ঢাকায় অনুশীলন করলে আরও লাভ হতো বলে মনে করেন অনেকে। ওই অর্থ দিয়ে ঢাকায় কোনো দেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি নেওয়া যেত বলে বিশ্বাস ফুটবল-সংশ্লিষ্টদের।

২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্প শুরু করেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। ঢাকায় কয়েক দিন অনুশীলনের পর ৫ মার্চ সৌদি আরবে চলে যায় দল। সেখানে যাওয়ার পর সুদানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। তায়েফের আল ওয়েদাতের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে। অথচ ভারত আসল লড়াইয়ের আগে ১৯ মার্চ এই শিলংয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ খেলছে। আর বাংলাদেশের প্রস্তুতি বলতে সৌদি ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচ। 

ম্যাচ না খেলে সৌদি আরবে এভাবে ক্যাম্প করাটা ভালোভাবে নেননি অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল সমকালের কাছে নিজের অসন্তোষ এভাবে প্রকাশ করেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত এর পর থেকে সৌদি আরবে তখনই দল পাঠাব, যদি বড় কোনো দেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা পাই। অন্যথায় বাংলাদেশে অনুশীলন করিয়ে বিভিন্ন দেশকে এখানে এনে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানোর পক্ষে আমি। যে টাকা খরচ করে সৌদি আরবে দল পাঠাব, সেই অর্থ দিয়ে দেশের মাটিতে কোনো দলকে এনে খেলালে আমাদের লাভ হতো। এই বিষয়টি আমি ভবিষ্যতে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভাতে বলব। সামনে যে দলের সঙ্গেই খেলা, তার আগে ঢাকায় কোনো দলকে এনে ম্যাচ খেলাব।’ কোচ ক্যাবরেরার পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন এই কর্তার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ