দেশের বৃহৎ বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কি আবারও ভাঙছে? জানি, বামপন্থার প্রতি ন্যূনতম টান আছে, এমন মানুষের কাছে প্রশ্নটা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, ক্ষুব্ধ হওয়ার মতোও। এমনকি ভিন্ন আদর্শ পোষণ করেন, তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে বামপন্থার গুরুত্ব বোঝেন, এমন মানুষকেও প্রশ্নটা হয়তো বিচলিত করছে।

তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে সিপিবির নেতাকর্মী ও সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া খেয়াল করলেই বোঝা যায়, তাদেরও মনে এ শঙ্কা বিরাজ করছে।

সিপিবির গণসংগঠন বলে পরিচিত দেশের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনে সংঘটিত একেবারে সর্বসাম্প্রতিক ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। ৬ ফেব্রুয়ারি শুরু তিন দিনের সম্মেলনে পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচন করতে গিয়ে কার্যত দু’ভাগ হয়ে গেছে সংগঠনটি। দু’পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নিজ নিজ পছন্দের কমিটি বানিয়েছে। এমনকি এ নিয়ে প্রথমে বাগ্‌বিতণ্ডা, পরে হাতাহাতিও হয়েছে। এক পক্ষ কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করে নেওয়ায় দু’পক্ষের সম্পর্ক এখনও বেশ তিক্ত। 

সিপিবির কোনো কোনো নেতা বলছেন, দলের বয়োজ্যেষ্ঠরা দু’পক্ষকে অচিরেই মিলিয়ে দেবেন। তবে মূল দলের নেতৃত্বের ফাটলই উদীচীর এ বিভক্তির উৎস কিনা, ভেবে দেখা প্রয়োজন। যে কারণে উদীচী আদৌ অখণ্ড থাকবে কিনা, তা নির্ভর করতে পারে সিপিবির আগামী কংগ্রেসের ওপর। 

প্রসঙ্গত, ৩ অক্টোবর সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল– শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল্যায়ন প্রশ্নে দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি। এমনকি এক পক্ষ বর্তমান নেতৃত্বের পদত্যাগ ও বিশেষ কংগ্রেস আয়োজনের দাবিও জানিয়েছে। প্রতিবেদনমতে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১০ আগস্ট সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় গণঅভ্যুত্থানের মূল্যায়ন প্রশ্নে মতভেদ প্রকাশ্য হয়। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনকে ‘চরম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ক্যু’ হিসেবে দেখালে অন্য অংশ আপত্তি জানায়। সংখ্যালঘু অংশ গণঅভ্যুত্থানে ‘জনতার আকাঙ্ক্ষা বিশেষত গণতান্ত্রিক দেশ ও সমাজ নির্মাণের প্রত্যাশা’য় প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক সংগ্রাম অগ্রসরের প্রস্তাব দেয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়। 

দু’পক্ষের বিরোধ এমন পর্যায়ে যায় যে, দলের সংখ্যাগুরু অংশকে অন্য পক্ষের সঙ্গে এক প্রকার আপসরফা করতে হয়। তারই অংশ হিসেবে গত বছরের ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি এ বছরের মে মাসে দলের ত্রয়োদশ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয় (সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গত ১০-১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের তারিখ এ বছরের জুলাই মাসে নেওয়া হয়েছে)। আরেকটি সিদ্ধান্তে দলের প্রেসিডিয়াম ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেখানে প্রাধান্য ছিল ওই ‘সংখ্যালঘু’ অংশের।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সিপিবির কংগ্রেস হয় চার বছর পরপর। সর্বশেষ কংগ্রেস হয়েছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেই হিসাবে পরবর্তী কংগ্রেস হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি বা তার কিছু আগে-পরে। বিগত কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিপিবির বর্তমান ৪৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ২৭ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে; অন্য পক্ষে ২১ জন। প্রথম পক্ষ চাইলে শুরুতেই অন্য পক্ষ থেকে কয়েকজনকে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান দিতে পারতেন। তা হলে হয়তো দু’পক্ষের বিরোধ এতদূর গড়াত না। সত্য হলো, তারা যতক্ষণ পেরেছেন অন্য পক্ষকে ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ ফোরামের বাইরে রেখেছেন। আজকে যখন বিশেষত গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতায় তা আর পারা যাচ্ছে না, তখন আপাত বিদ্রোহী পক্ষকে আইনত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও ওই দুই ফোরামে জায়গা দিতে হয়েছে। 

কারণ যাই হোক, এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। সিপিবির মতো দলের ভাঙন শুধু বামপন্থি মহলেই হতাশা ছড়াবে না; দেশের সামগ্রিক রাজনীতির ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

সিপিবির মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার প্রয়াস সত্ত্বেও উদীচীর সাম্প্রতিক বিভক্তি কেন ভিন্ন কিছু বলে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। রাজনীতি সচেতন মানুষও জানেন, এদেশে কোনো দলের ভাঙন প্রক্রিয়ার শুরু অঙ্গ বা গণসংগঠনে ভাঙনের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ উদীচীর বিভক্তি রোগ নয়, তা রোগের উপসর্গ মাত্র। এটাও মনে রাখা দরকার, ২০২১ সালে সিপিবিরই আরেক গুরুত্বপূর্ণ গণসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন দু’ভাগ হয়েছিল, যা এখনও ঘোচেনি। এখানেও পর্যবেক্ষকরা সিপিবির ওই অভ্যন্তরীণ বিরোধের ছায়া দেখেন। এর আরেকটা কারণ হলো, সিপিবির দু’পক্ষ পরস্পরকে যে ভাষায় আক্রমণ করছে, অনুরূপ বুলি-বচন গণসংগঠনগুলোর পক্ষ-বিপক্ষ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও চালাচালি হয়। মূল দল বা গণসংগঠন– সর্বত্র এক পক্ষ নিজেকে বলছে বিপ্লবী, অন্য পক্ষকে বলছে আপসকামী। এমনকি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সিপিবির সংখ্যালঘু অংশ অন্য পক্ষকে আওয়ামী লীগের বিটিম বলতেও কসুর করে না। আবার সংখ্যাগুরু অংশ অপর পক্ষকে বলে বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ। 

শুধু কি তাই? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সিপিবি নতুন করে শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যালঘু অংশের প্রাধান্য স্পষ্ট। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শ্রমিক এবং ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের মধ্যে সিপিবির প্রভাব এখন একেবারে কম নয়। এ ইউনিটগুলোতে দলের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের তেমন দেখা যায় না, যতটা দেখা যায় দলের সাবেক একজন সভাপতির অনুসারীদের। বলা হয়ে থাকে, সিপিবির মধ্যে যারা নিজেদের অভ্যুত্থানপন্থি মনে করেন, তাদের নেতৃত্বে আছেন ওই সাবেক সভাপতি। জানা যায়, সিপিবির প্রভাবাধীন বাংলাদেশ কৃষক সমিতিতে ঐতিহ্যগত কারণে অন্য দলের লোক থাকলেও সেখানেও ওই অভ্যুত্থানপন্থিরা প্রভাব বলয় সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘সিপিবিতে পরিপূর্ণ গণতন্ত্রচর্চা হয়। ফলে নানা বিষয়ে মত-দ্বিমত থাকে। তবে আলাপ-আলোচনা শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত গ্রহণ করা হয়।’ (সমকাল, ৩ অক্টোবর, ২০২৪) যে কোনো গণতন্ত্রপ্রিয় ও আশাবাদী মানুষই তাঁর এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাবেন। সেই আশার গুড়ে যেন বালি না পড়ে। অবশ্য তা তখনই সম্ভব হবে যখন সিপিবির দু’পক্ষই সিদ্ধান্ত গ্রহণের এ সর্বজনস্বীকৃত গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলবে।

এটি ঠিক, এক সময়ে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় শক্তিশালী কার্যক্রম থাকলেও বিশেষত ১৯৯০-এর দশকে বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে বিপর্যয়ের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নানা দুর্বলতার কারণে দলটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তার পর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দলটি ইতোমধ্যে একটু সোজা হয়ে দাঁড়ালেও ১৯৯০-পূর্ববর্তী সুবর্ণ সময় আর ফিরে পায়নি। 

বিদ্যমান কঠিন পরিস্থিতিতে সব উদারমনা মানুষ সিপিবি ও অন্যান্য বামশক্তির দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই কে শুদ্ধ, কে অশুদ্ধ– সে প্রশ্ন আপাতত স্থগিত করে সিপিবির উভয় পক্ষ যে কোনো মূল্যে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখবেন এবং ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে গোটা বাম-উদারনৈতিক শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ করে বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো রক্ষার লড়াইয়ে নামবেন, এটাই দেয়ালের লিখন। এর অন্যথা হলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল; সাবেক ছাত্রনেতা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় কম ট র র ক ন দ র য় কম ট র জন ত স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

আমেরিকা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি কে চালাবে

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার পর থেকে আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডা এবং সে এজেন্ডা আমেরিকা, আর্থিক বাজার ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে নিয়মিতভাবে মন্তব্য করে আসছি।

ট্রাম্প আসার পর অস্থিরতার অভাব হয়নি, তবে তা ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত। কারণ, ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া যে অগোছালো ও অপ্রত্যাশিত হবে, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল।

আমি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে উল্লেখ করেছিলাম, ট্রাম্পের আগ্রাসনের জবাবে অন্যান্য অর্থনীতি যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ও আর্থিক বাজারের ওপর নির্ভরতা কমায়, তাহলে এটি ইতিবাচক একটি দিক হতে পারে। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও আশার কথা হলো, ইউরোপ ও চীন ইতিমধ্যেই এ ধরনের পরিবর্তনের দিকে এগোতে শুরু করেছে। জার্মানি তাদের ‘ঋণসীমা’ কিছুটা শিথিল করে অতিব্যবস্থাপনার বাইরে গিয়ে জরুরি বিনিয়োগের অনুমতি দিচ্ছে। আর চীন বলছে, তারা অভ্যন্তরীণ ভোক্তা খরচ বাড়ানোর উপায় খতিয়ে দেখছে।

যে দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এটা পরিষ্কার, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যযুদ্ধের নীতি একটু কমায়ও, তারপরও নতুন ধরনের বাণিজ্যিক ব্যবস্থার দরকার হবে। অনেক দেশ এখন নিজেদের মধ্যে বেশি বাণিজ্য করতে চাচ্ছে এবং দ্রুত বাড়তে থাকা সেবা খাতে যেসব নিয়মকানুন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, সেগুলো কমাতে তারা নতুন চুক্তি করার চেষ্টা করছে।

একটি জোট হিসেবে জি-৭-এর বাকি দেশগুলো (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাজ্য) একত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান শক্তিশালী। এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ‘ইচ্ছুকদের জোট’-এর অন্য সদস্যদের যোগ করলে ট্রাম্পের আনা অনেক ক্ষতিই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতে পারে।

একইভাবে যদি চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ভারত ও অন্যান্য বড় উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বয় করে পুনর্গঠন করতে পারে, তাহলে তা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে।

এ ধরনের পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও হুমকির প্রভাব কিছুটা কমাতে পারবে। তবে এ কাজগুলো সহজ হবে না, যদি সহজ হতো, তাহলে ইতিমধ্যেই হয়ে যেত। আজকের বাণিজ্য ও আর্থিক কাঠামো গড়ে উঠেছে নানা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে এবং চীনের উপকারে আসতে পারে, এমন যেকোনো পরিবর্তন ট্রাম্প প্রশাসন ঠেকাতে চাইবে।

বড় বড় অন্য অর্থনীতিগুলো কীভাবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায়, বিনিয়োগ সক্রিয় করে এবং নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ব্রুগেল নামের থিঙ্কট্যাংক ও নেদারল্যান্ডসের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আয়োজিত এক সম্মেলনে (গ্লোবালাইজেশন ও ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজন) আমি আবার মনে করিয়ে দিলাম, ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কতটা একপাক্ষিকভাবে হয়েছে।

২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক নামমাত্র জিডিপির একটি সরল বিশ্লেষণে দেখায়, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরো জোন ও ভারত—এই চারটি দেশ মিলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রায় ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী, যার মধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনই প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ার করেছে।

এ তথ্য আবারও প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকির জবাব হিসেবে অন্যত্র আরও বেশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি করতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশ কমে যাওয়ার ক্ষতি একা পুষিয়ে দিতে সক্ষম একমাত্র দেশ চীন।

কিন্তু যদি চীন একা কাজ না করে? ধরো, ইউরোপ যেমন এখন বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াচ্ছে, এতে শুধু ইউরোপ নয়, বরং যুক্তরাজ্যের মতো অন্য দেশগুলোরও উপকার হবে। আর ভারতও গত কয়েক বছরে অনেক দেশের তুলনায় বেশি গতিতে এগোচ্ছে, তাই ওরাও চাইলে দেশের ভেতরে চাহিদা বাড়ানোর কিছু সুযোগ পেতে পারে। তাহলে যদি এই দেশগুলো একসঙ্গে মিলে পরিকল্পনা করে আর একে অপরের সঙ্গে নীতি ঠিক করে নেয়, তাহলে কি আরও ভালো কিছু হতে পারে না?

এ ধরনের সমন্বয় হয়তো ২০০৯ সালের লন্ডন জি-২০ সম্মেলনের মতো বিশাল বৈশ্বিক প্রভাব ফেলবে না, যেখানে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট ও তার পরিণতি মোকাবিলায় ব্যাপক সংস্কার ও নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে যদি এই দেশগুলো বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে তারা নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয় ও অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে সেটি বিশ্বজুড়ে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সর্বশেষ কথা হলো, ব্রুগেল সম্মেলনে উপস্থাপিত একটি বিষয় আমার মনে গেঁথে আছে। এটি ছিল ব্রুগেলের সিনিয়র ফেলো আন্দ্রে সাপিরের উপস্থাপিত একটি চার্ট। সেই চার্টে জাপানের অর্থনৈতিক উত্থান এবং চীনের বর্তমান উত্থানের মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধরা হয়। ১৯৯০-এর দশকে জাপানের জিডিপি যখন যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল, তখন আমেরিকার বড় একটি ভয় ছিল—তারা পিছিয়ে পড়বে। এখন চীনকে নিয়েও একই ভয় দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু আসলে যুক্তরাষ্ট্র কী চায়? তারা কি শুধু এই প্রমাণ দিতে চায়, নামমাত্র হিসাবে তাদের অর্থনীতি সবচেয়ে বড়, নাকি তারা নিজেদের নাগরিকদের জন্য ধনসম্পদ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায়?

এই দুটি বিষয় এক নয়। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের যে বিষয়টি বোঝার দরকার, তা হলো অন্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন আসলে আমেরিকানদেরও আরও বেশি সম্পদশালী করে তুলতে পারে। হয়তো একদিন আমেরিকার নাগরিকেরা এমন কোনো নেতৃত্ব বেছে নেবে, যারা এই মৌলিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাটি বুঝতে পারবে। তবে আপাতত তারা হয়তো আরও অনেক বছর অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় ভুগতেই থাকবে।

জিম ও’নিল গোল্ডম্যান স্যাকস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণঅভ্যুত্থানে হত্যা: ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি ড্রোন শো’র মাধ্যমে শ্রদ্ধা
  • সুরে-গানে-তালে বৈশাখকে বরণ করল রাবি
  • দাবি আদায়ে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা
  • আমেরিকা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি কে চালাবে
  • শোভাযাত্রায় তরমুজের মোটিফ দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি
  • ৩০ দিনের বেশি আমেরিকায় থাকলে নাম নথিভুক্ত না করলে জরিমানা
  • ৩০ দিনের বেশি সময় আমেরিকায় থাকলে নাম নথিভুক্ত না করলে জরিমানা
  • রাবিতে বর্ষবরণের শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা, আয়োজন সীমিত
  • ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ দাবি যুক্তরাষ্ট্রের