Samakal:
2025-03-15@16:39:12 GMT

চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা, সংঘর্ষ

Published: 13th, February 2025 GMT

চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা, সংঘর্ষ

যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কক্ষে ছাত্র-জনতার তালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে চিংড়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।

এদিকে মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার জের ধরে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বুধবার দিনভর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাগরদাঁড়ী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গত ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন। তাঁর ছোট ভাই কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও কাজী মুক্ত ইউপি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় ছাত্র-জনতা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সমবেত হয়। এক পর্যায়ে তারা চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। সংবাদ পেয়ে এলাকাবাসী সেখানে এসে তালা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে উভয় পক্ষের অন্তত ২২ জন আহত হন। পরে এলাকাবাসী তালা ভেঙে ফেলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস হোসেন, সাগরদাঁড়ী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মেহেদী হাসান রনি, ছাত্রদল নেতা সাগর, আকাশ, নাঈম, রকি, গোলাম মোস্তফা এবং ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না ও কাজী মাজহারুল ইসলাম সোনা। অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ও আলাদাভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

যশোর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মজনু হোসাইন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করছেন। এমন খবরে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দেয়। এ সময় চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন এসে হামলা চালায়। এতে তাদের ১৪-১৫ জন আহত হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, তিনি নিয়মিত পরিষদে আসছেন। বুধবার পরিষদ বন্ধ থাকার সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় এলাকার সাধারণ মানুষ তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে জড়ো হলে তাদের ওপর হামলা হয়। এতে তাঁর দুই ভাইসহ সাতজন আহত হয়েছে।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেবেন।  

এদিকে সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে মঙ্গলবার সকালে হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়নের হাকিমপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে আইনজীবীর সহকারী ও বিএনপি কর্মী মোশাররফ হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় ২০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন তাঁর স্ত্রী ময়না খাতুন। 

এ ঘটনার জেরে বুধবার আসামিদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও গোয়াল ঘর থেকে গরু লুট করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দলু ও হানেফ গ্রুপের সমর্থকরা বিএনপি নেতা সাইদের ৫টি, আমিরুলের ৩টি, মইনের ২টি, আমিরুলের ৪টি, আব্দুল জব্বারের ৫টি ও আব্দুল আলীমের ৩টিসহ মোট ৩৭টি গরু নিয়ে গেছে। 

বিএনপি নেতা সাইদের ভাষ্য, লুট করা গরুর দাম প্রায় কোটি টাকা। বাদীপক্ষের লোকজন তাঁর বাড়ি থেকে দুই লাখ ও সারের দোকান থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এ সময় দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বর্তমান গ্রামটি পুরুষশূন্য। 

হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি এম এ রউফ খানের ভাষ্য, গরু লুট বা বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ল ইসল ম জন আহত স ঘর ষ ব এনপ উপজ ল এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে ১২ দিনে শিশুসহ ৮ জন ধর্ষণের শিকার

নরসিংদীতে একের পর একের এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নরসিংদী ১০০ শয্যা সদর হাসপাতালের আরএমও-এর দেওয়া তথ্য মতে মার্চের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। 

এদের অধিকাংশই দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, কেউ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিতা, কেউবা আশেপাশের পরিচিত ও অপরিচিত মানুষদের দ্বারা। 

এরমধ্যে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৫০ বছরেরও বেশি বয়সী নারী রয়েছে। বিভিন্ন ভয়-ভীতি, পারিবারিক মানসম্মান রক্ষার চাপ, সামাজিকতা রক্ষা, পারিপার্শ্বিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে তারা থানা পর্যন্ত যাওয়ার সাহস পাইনি। বিচারের জন্য দাঁড়াতে পারেনি। এর আগেই ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয় ধর্ষণের ঘটনাগুলিকে। 

সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে ১৯ ফেব্রুয়ারি মাধবদীতে। এক গর্ভবতী নারীকে তিনদিন আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে কয়েকজন। ভুক্তভোগী ঐ নারীর স্বামী জামিনের ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে পাঁচদোনা এলাকায় একটি মার্কেটের কক্ষে আটকে ইকবাল, পাপ্পুসহ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজন মিলে টানা তিনদিন পর্যন্ত মর্মান্তিক পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর তিনি বাদী হয়ে মাধবদী থানায় মামলা করলে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আফরোজা ও মৌমিতা বলেন, “বর্তমানে কোথায়ও নিরাপত্ত বোধ করছি না। কোথাও গেলে ভিতর প্রচণ্ড ভয় কাজ করে। কখন জানি কি হয়ে যায়! প্রতিটি মেয়ে এক অনিশ্চিত নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। দেশের মধ্যে একের পর এক ধর্ষণ, মেয়েদের উপর নিম্ন-নির্যাতন চলছেই। ৩-৪ বছরের ছোট্ট মেয়েটিও বাদ যাচ্ছে না ধর্ষকদের কবল থেকে। আমাদের নরসিংদীতেও ধর্ষণের এবং নির্যাতনের খবর পাচ্ছি। তাহলে নারীদের নিরাপত্তা সরকার, দেশ, প্রশাসন কতটুকু দিতে পারছে!”

তিনি আরো বলেন, “ধর্ষণের শিকার কেউ হলে, তার তো কোন দোষ নেই দোষ তো ধর্ষকের। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সেই ধর্ষিতা নারীকে আরো কয়েকশ’ বার ধর্ষণ করে। হাসপাতাল হয়, থানাতে হয়, কোর্টে হয়, সমাজে হয়, আপন ও আশেপাশের মানুষদের দ্বারা হয়। সবাইকে জবাবদিহি করতে হয়। নানান রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় শরীরে কোথায় হাত দিয়েছে! কোথায় কি করেছে!”

নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল আরএমও মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, মার্চের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৮ জন ধর্ষণের শিকার নারী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের কাছে ধর্ষণের ঘটনায় রোগী আসলে সবার আগে তার ট্রিটমেন্টের বিষয়টা নিশ্চিত করি। এরপর ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন মহিলা ডাক্তার দিয়ে সম্পাদন করি। ধর্ষণ শিকার নারীরা প্রথমত চিন্তা করে সামাজিকভাবে হেনস্তাসহ, মান সম্মানের কথা। অনেক সময় দেখা যায় দরিদ্র পরিবারের হলে বা খেটে-খাওয়া মানুষ হলে যারা অভিযুক্ত তারা ভিকটিমের উপর বল প্রয়োগ করে। মীমাংসা করে ফেলে।” 

নরসিংদী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর এলাহী বলেন, “প্রশাসনিক দুর্বলতা, আইনের শাসনের অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি কতটা প্রকট হলে অপরাধীরা বারবার এই ধরনের ন্যাক্কারজনক অপরাধ করার সাহস পায়৷ কতটা পৈশাচিক নির্যাতন করা হয় একজন নারীর উপর। দেখা যায় দিন শেষে সেই ধর্ষণের শিকার নারীরাই বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি ও বিচারের আশায় একেবারেই ভেঙে পড়ে।” 

স্বেচ্ছাসেবক ও জনপ্রিয় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল হোসেন মামুন বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্ষণের খবর পাচ্ছি। নরসিংদীতেও খবর পাচ্ছি ধর্ষণের ঘটনা। একের পর এক। এরকম তো দেশ চলতে পারে না।”

নরসিংদী জেলা হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মিজানুর রহমান বলেন, “এটেম টু রেপ বা ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট বা হ্যারেজমেন্টের রোগী আসে প্রধান দায়িত্ব হলো তার চিকিৎসা জরুরি ভিত্তিতে নিশ্চিত করা। তার নিরাপত্তা প্রদান করা। মানসিক সাপোর্ট দেওয়া।”

নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, “দেখা যাচ্ছে ৪০ বছর ৫০ বছর ৬০ বছরের বৃদ্ধ আট বছরের দশ বছরের একটি শিশু সন্তানকে ধর্ষণের শিকার করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সকল সেক্টরকে সচেতন হতে হবে। ধর্ষণ কমাতে গেলে আমাদেরকে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। ধর্ষণ কি! অমানবিক, অনৈতিক এবং পাশবিক নির্যাতন। এটা যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি। আমাদের পুরো জেনারেশনটাই নষ্ট হয়ে যাবে।” 

নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান বলেন, “নরসিংদী জেলা পুলিশ সর্বাত্মকভাবে ধর্ষণের শিকার নারীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। অপরাধীদের গ্রেফতার করছে। কয়েকদিন আগে মাধবদীতে যে ধর্ষণে অভিযোগ উঠে। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আমরা খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করি। কোন ধর্ষণকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। যখন যেখানে যে অভিযোগ পাচ্ছি, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।”

ঢাকা/হৃদয়/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ