আদালতে তিন আসামি ফাঁসির দাবি স্বজনের
Published: 13th, February 2025 GMT
‘নাশিত আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো। তাকে হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে মানববন্ধনে এসেছি। হত্যাকারীদের আজ আদালতে তোলা হয়েছে। তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই, যেন এমন জঘন্য কাজ আর কেউ করতে না পারে।’ কথাগুলো ফেনী বালিকা বিদ্যানিকেতনের এসএসসি পরীক্ষার্থী জয়া জান্নাতের।
তার মতো আরও কয়েকজন ছাত্রছাত্রী গতকাল বুধবার এসেছিল ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে। এখানে নাশিত হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
বুধবার সকালে ওই আদালতে হাজির করা হয় আলোচিত নাশিত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামি আশরাফ হোসেন তুষার, মোবারক হোসেন ওয়াসিম ও ওমর ফারুক রিফাতকে। দুপুরে তাদের শাস্তির দাবিতে কর্মসূচিতে অংশ নেন নাশিতের স্বজনের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
আহনাফ আল মাঈন নাশিত (১০) গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিকেলে ফেনী থেকে নিখোঁজ হয়। ১২ ডিসেম্বর পৌর এলাকার দেওয়ানগঞ্জে পরিত্যক্ত ডোবায় পাওয়া যায় তার লাশ। শহরের একাডেমি এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করে তার পরিবার। নাশিত একই এলাকার গ্রামার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ ফেনী রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে কর্মরত। ছেলের খোঁজ না পেয়ে তিনি ৯ ডিসেম্বর ফেনী মডেল থানায় জিডি করেন। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মুক্তিপণ বাবদ ১২ লাখ টাকা দাবি করে দুর্বৃত্তরা। তিনি এ বিষয়ে এজাহার করলে ১২ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। পুলিশ আসামি আশরাফ হোসেন তুষারকে আতিকুল আলম সড়ক ও মোবারক হোসেন ওয়াসিম, ওমর ফারুক রিফাতকে বিসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে নিশাতের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বুধবারের মানববন্ধনে নিশাতের স্বজন মো.
ফেনী বালিকা বিদ্যানিকেতনের এসএসসি পরীক্ষার্থী মরিয়ম কবির মীম, আরফা ও গিরিশ অক্ষয় একাডেমি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভ হাজারী বলে, আর কেউ যেন এমন ঘৃণিত ও জঘন্য কাজ করতে না পারে, এ জন্য হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করছে তারা। সর্বোচ্চ শাস্তিই তাদের প্রাপ্য।
ফেনী লাইট হাউজ কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয় নাশিত। সে প্রতিষ্ঠানের কনিষ্ঠ ছাত্রদের একজন জানিয়ে শিক্ষক মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’
মামলার বাদী ও নাশিতের বাবা মাঈন উদ্দিন সোহাগ বলেন, মামলার তারিখে আসামিদের আদালতে আনা হয়। যেহেতু এরা আত্মস্বীকৃত খুনি। তিনি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ এদের সন্দেহের ভিত্তিতে ধরে নিয়ে আসে। তাদের দেখানো জায়গায় লাশ পাওয়া যায়। তারা নাশিতকে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পরে ব্যাগে পাথর দিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা করেছে। এই বর্বরোচিত হত্যার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চান তিনি।
ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবা উদ্দিন খান বলেন, আসামিদের আজ (বুধবার) আদালতে হাজির করা হয়েছে। তাদের হাজতে রেখেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিন আসামি ইতোপূর্বে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জন্য কেউ জামিনের আবেদন করেনি। এটি রোমহর্ষক শিশুহত্যা। বাদীপক্ষ সাক্ষীদের সঠিক সময়ে আদালতে আনতে পারলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
ফেনী আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল করিম বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ ফারহানা লোকমানের আদালতে ওই আসামিদের উপস্থাপন করা হয়। আদালত মামলাটির পরবর্তী দিন আগামী ১৮ মার্চ নির্ধারণ করেছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে নববর্ষেও স্কুলে পাঠদান, প্রধান শিক্ষক বললেন অপরাধের কিছু নেই
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখের দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করলেও সোনারগাঁয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বৈদ্যেরবাজার নেকবর আলী (এনএএম) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে এই স্কুলে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে দেখা গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, যেহেতু বিদ্যালয়টি বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র তাই বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। তাই শিক্ষার্থীদের পড়া যেন পিছিয়ে না যায় সেজন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করানো হচ্ছে। এতে তো অপরাধের কিছু নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বৈদ্যেরবাজার নেকবর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত চলছে পাঠদান কর্মসূচি।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন হাতে বেত নিয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইমুনা ইসলাম জানান, আমাদের শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসতে বললে তো আসতেই হবে। আমাদের ক্লাস করানো হবে বলে বই-খাতা নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর আমাদের এসএসসি পরীক্ষা তাই শিক্ষকরা ক্লাস করানো হবে বলে জানিয়েছেন।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানান, রোববার শিক্ষকরা ক্লাস করানো হবে জানিয়ে আমাদের বই-খাতা নিয়ে স্কুলে আসতে বলেছে তাই আজকে আসছি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক বশির উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হচ্ছে। এখানে আমরা চাকরি করি তাই তাদের নির্দেশনা পালন করতে হবে।
ক্লাস করানোর সময় আরেকজন শিক্ষক জানান, এবার বই দিতে অনেক বিলম্ব হয়েছে। তাই ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে রয়েছে। এজন্য আজকে ক্লাস করানোর নিয়ম না থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসে ক্লাস করানো হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই, আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম। এমন একটি দিনে ক্লাস করানো ঠিক হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।