পছন্দের ইজারাদার বেছে নিতে শিডিউল টেম্পারিং
Published: 13th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় খেয়াঘাট ইজারায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দরপত্র গ্রহণ এবং সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচনে দরপত্র শিডিউলে টেম্পারিং করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দরপত্রে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি। ইজারার দরপত্র নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন নৌকাঘাট ইজারা সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বৃহস্পতিবার নৌকাঘাটগুলোর দরপত্র জমা এবং খোলার তারিখ ছিল। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি দরপত্র জমা হয়। এ কারণে শিডিউল অনুযায়ী দেওয়া সময়সীমা বেলা ৩টার পরিবর্তে বিকেল ৫টায় টেন্ডার বাক্স খোলা হয়। এতে ফাজিলপুর নৌকাঘাটের বিপরীতে চারটি শিডিউল জমা হয়। দরপত্রের খাম খুলে চারটি দরপত্রের মধ্যে মো. জবা মিয়ার দরপত্রকে সর্বোচ্চ দরদাতা ঘোষণা করা হয়। তবে জবা মিয়ার শিডিউলে টেম্পারিং করে মূল্য বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন আরেক দরদাতা সাগর মিয়া। এই মর্মে একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি।
সাগর মিয়ার অভিযোগ, জবা মিয়ার দরপত্রে তিন কোটি ৯৫ হাজার টাকা দরপত্র মূল্য লেখা ছিল। সেখানে টেম্পারিং করে বাড়িয়ে তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ দরদাতা ঘোষণা করা হয়েছে।
শিডিউলে টেম্পারিংয়ের বিষয়টি অবশ্য অস্বীকার করেছেন জবা মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি সঠিক পন্থায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছি। এখনও খেয়াঘাটের দখলনামা পাইনি।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন, দরপত্রে অংকে তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকা লেখা ছিল। কিন্তু সংখ্যায় লেখার সময় ভুলবশত তিন কোটি ৯৫ হাজার লেখা হয়েছে। এটা কোনো ত্রুটি নয়।
এদিকে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এ নিয়ে একটি রিট পিটিশন হয়েছে। ওই পিটিশনের আদেশ অনুযায়ী ফাজিলপুর নৌকাঘাটের ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য উচ্চ আদালতের আরেকটি নির্দেশনা রয়েছে।
রিটকারী সুনামগঞ্জ জেলা নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফাজিলপুর নৌকাঘাটে কখনও মাল ওঠানামা হয় না। নৌকাঘাটটি ইজারা না দেওয়ার জন্য বহুবার প্রশাসনের কাছে তারা আবেদন-নিবেদন করে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। শুনানি শেষে উচ্চ আদালত নৌকাঘাটের ইজারা কার্যক্রমে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। আদেশের অ্যাডভোকেট সার্টিফিকেট ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করে প্রাপ্তি রসিদ সংগ্রহ করেছেন। উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে ফাজিলপুর নৌকাঘাটের শিডিউল গ্রহণ ও উন্মুক্ত করা হয় বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম এ প্রসঙ্গে বলেন, ফাজিলপুর নৌকাঘাট ইজারা কার্যক্রম বন্ধে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার একটি অ্যাডভোকেট সার্টিফিকেট পেয়েছি। আপাতত কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ দরদাতা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। হাইকোর্টে রিটের বিষয়টি সুরাহা হলে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ঘাটের দখলনামা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ চ চ দরদ ত র দরপত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে বাজার ইজারা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১২
নোয়াখালীর কবিরহাটে বাজারের ইজারার দরপত্র মূল্যায়ন শেষে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কবিরহাট উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কবিরহাট উপজেলার বার্ষিক হাটবাজার ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা প্রশাসন। এরপর অনেক নতুন ও পুরোনো দরদাতা দরপত্র জমা দেন। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ওই দরপত্র মূল্যায়ন শেষে বাজার ইজারার প্রথম ধাপের কার্যক্রম শেষ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূদম পুষ্প চাকমা।
সূত্র জানায়, দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের আমিন বাজারের ইজারার সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন একই উপজেলার বাসিন্দা চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান ওরফে আকাশ। তিনি দর দেন ২৩ লাখ টাকা। একই বাজারের দ্বিতীয় নিকটতম দরদাতা ছিলেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব মো. সুজন, তাঁদের পক্ষে দর দেওয়া হয় ২২ লাখ টাকা।
কামরুল হাসানকে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত ঘোষণার পর ইউএনও কার্যালয়ের সামনে দুই পক্ষ প্রথমে বাগ্বিতণ্ডা, পরে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কবিরহাট থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালসহ স্থানীয় একাধিক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান বলেন, প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে সেরা দরদাতা নির্বাচন করা হয়েছে। যাঁরা অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইজারা নিয়েছিলেন, তাঁরা এবার না পেয়ে হামলা করেছেন।
অপর দিকে ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব মো. সুজনের ছোট ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা মিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা তাঁর ভাই সুজনের নামে বাজার ইজারা নেওয়ার কথা বলে তাঁর (সুজনের) কাছ থেকে কাগজে সইও নিয়েছিলেন। কিন্তু ইজারার সময় দেখা যায়, কামরুল হাসান নামের একজন উচ্চ দর দিয়ে বাজার তাঁর নামে ইজারা নিয়ে নিয়ে যান।
মিরাজের অভিযোগ, তাঁরা বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে আগেই পরিষদ এলাকায় লোকজন জড়ো করেন এবং তাঁদের লোকজনের ওপর হামলা করেন। এতে তাঁদের ৯-১০ জন আহত হয়েছেন।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন মিয়া বলেন, ইজারা এক পক্ষ পেয়েছে, আরেক পক্ষ পায়নি। এটা নিয়ে মনোমালিন্য ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে বের করে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ইউএনও পূদম পুষ্প চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ইজারা শেষে ইজারায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সম্ভবত তর্কাতর্কি, হাতাহাতি হয়েছে। তাঁর কার্যালয়ে কিছু হয়নি।