হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের সদস্যদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকার অভিযোগ তুলেছেন দুই প্রবাসী সহদোর। চক্রটি চলাচলের রাস্তা আটকে দিয়ে তাদের রীতিমতো গৃহবন্দি করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতি থেকে তাদের উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশও।
উপজেলার সমরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা দুই প্রবাসী ভাই আয়াজ আলী ও আরশ আলী এই অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এতে করে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন তাদের পরিবারের কেউ। ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাস্তা বন্ধ করার জন্য ওই বেড়া দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তারা বেড়া অপসারণে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সমরগাঁও গ্রামের মৃত আমীর উল্লার ছেলে আব্দুল বশির ও তার লোকজন ২০১৩ সালে একই গ্রামের প্রবাসী আয়াজ আলী ও তাঁর ভাই আরশ আলীর কাছে জমি বিক্রি করেন। এর পর থেকেই তারা দুই ভাই ওই জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। কিছু বিষয় নিয়ে প্রবাসী দুই ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বশিরের লোকজন আয়াজ-আরশদের পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
এ ব্যাপারে আরশ আলীর স্ত্রী নাছিমা বেগম নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলে এসআই আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। তারা বেড়া তুলে নেওয়ার জন্য আব্দুল বশিরকে অনুরোধ করলেও তিনি পুলিশের কথা আমলে নেননি। এর পর থেকে প্রবাসী পরিবারটি বাড়ির গণ্ডির বাইরে বের হতে পারছে না।
এ ব্যাপারে এসআই মোশাররফ আলী জানান, বেড়া তোলার জন্য চেষ্টা করেও পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু প্রতিপক্ষ আইন লঙ্ঘন করেছে, সেহেতু তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মনু মিয়া জানান, পুলিশসহ তারা চেষ্টা করেও বেড়া সরাতে পারেননি। তারা এলাকায় দাপুটে পরিবারের লোকজন। তারা কোনো বিচার সালিশের তোয়াক্কা করে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
নিয়োগবঞ্চিত ৮৮ জনের পুলিশের এসআই পদে নিয়োগের পথ খুলল
পুরো ফলাফল প্রকাশ না করা এবং পুলিশের উপপরিদর্শকের (নিরস্ত্র) শূন্য পদে ৮৮ জনকে নিয়োগ দিতে নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ওই নিয়োগ প্রশ্নে দুই বছর আগে দেওয়া রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন।
এই রায়ের ফলে পুলিশের উপপরিদর্শকের (নিরস্ত্র) শূন্য পদে ৮৮ জনের নিয়োগের পথ সুগম হলো বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।’
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে বি এম ইলিয়াসের সঙ্গে শুনানিতে আরও ছিলেন আইনজীবী মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।
আইনজীবীদের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে পুলিশের সাব–ইন্সপেক্টর (এসআই–নিরস্ত্র) হিসেবে প্রকৃত শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ৪ মে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ অনুসারে অন্যান্য প্রাথমিক পরীক্ষার পর একই বছরের ৩০ জুলাই লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে ৫ হাজার ৮৩৯ জন উত্তীর্ণ হন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে ১ হাজার ৪০০ শূন্য পদের বিপরীতে ৯২১ জনকে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর সুপারিশ করা হয়। এ অবস্থায় শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ না দেওয়ায় পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর আবেদন করেন রিট আবেদনকারীরা। এতে ফল না পেয়ে নিয়োগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন তাঁরা। এতে প্রতিকার না পেয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগবঞ্চিত ৮৮ জন ২০২৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পুরো ফলাফল প্রকাশ না করা এবং পুলিশের উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) হিসেবে শূন্য পদে রিট আবেদনকারীদের (৮৮ জন) নিয়োগ দিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুল বিচারাধীন অবস্থায় গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি প্রকৃত শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ অবস্থায় রিট আবেদনকারীরা তাঁদের জন্য শূন্য পদ সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৫ মে হাইকোর্ট আবেদন মঞ্জুর (ছয় মাসের জন্য শূন্য পদ সংরক্ষণ) করে আদেশ দেন। অর্থাৎ রিট আবেদনকারীদের (৮৮টি পদ) জন্য সংরক্ষণ করতে বলা হয়। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।
শুনানি নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখে মূল বিষয়বস্তুতে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেন আদালত।
পুরো ফলাফল প্রকাশ না করার বিষয়ে রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত শূন্য পদে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত ও মৌলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ৯২১ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তবে মৌখিক পরীক্ষায় কতজন উত্তীর্ণ হয়েছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তখন এ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমের খবরে আসে। যে কারণে পুরো ফলাফল প্রকাশ না করা ও লিখিত পরীক্ষাসহ পাঁচটি ধাপে উত্তীর্ণ ৮৮ জন নিয়োগ না দেওয়ার বৈধতা নিয়ে রিটটি করা হয়। হাইকোর্ট রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। ফলে ৮৮ জনের এসআই (নিরস্ত্র) শূন্য পদে নিয়োগের পথ খুলল।