সুনামগঞ্জের তাহিরপুর-নিয়ামতপুর সড়ক মেরামতের জন্য জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কাজের কার্যাদেশ হয় ২০২৩ সালের ৭ জুন। একই বছরের ২১ জুন প্রথম দফায় কাজের ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিল তুলে নেওয়া হয়।

কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধরের বদান্যতায় এই বিল তুলে নেন সাব-ঠিকাদার সিলেটের যুবলীগ নেতা আবদুল হান্নান। নির্ধারিত মেয়াদ এক বছরেও তিনি সড়কের অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যেই গত বছরের জুনে আরও আট কোটি টাকার বিল তোলেন হান্নান। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর হদিস মেলেনি তাঁর। ফলে বেকায়দায় পড়েছে কার্যাদেশ পাওয়া মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আমদ ও কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স। বাধ্য হয়ে সম্প্রতি তারা নিজেদের উদ্যোগেই কাজ শুরু করেছে। কাজের মেয়াদ আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও এর মধ্যে সব শেষে হবে কিনা, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

সিলেটের বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়ক মেরামতকাজেরও একই অবস্থা। এই সড়কের অধিকাংশ কাজ শেষ হলেও মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ও তৈয়বুর রহমান পড়েছেন বেকায়দায়। তাদের এই কাজটিরও সাব-লিজ পান ঠিকাদার হান্নান। তিনি পলাতক থাকায় এই কাজের জন্যও মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময় বর্ধিতের আবেদন করেছে। একইভাবে এ কাজের বিপরীতে শুরুতে তিন কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেন হান্নান।

সড়ক ও জনপথের (সওজ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নিয়ামতপুর-তাহিরপুর ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ‘বন্যা পুনর্বাসন প্রকল্পের’ আওতায় ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০২৩ সালের ৭ জুন কার্যাদেশ পায় ফেনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আমদ ও কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স। তাদের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ নেন মেসার্স এম এ হান্নান এন্টারপ্রাইজের মালিক সিলেট যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান। কার্যাদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন তিনি। কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ সওজের সহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধর বিলটি প্রস্তুত করে দেন। অভিযোগ ওঠে, সহদেবকে ম্যানেজ করে কাজের আগেই হান্নান বিল উত্তোলন করেন। পরবর্তী সময়ে হান্নান ৪০ ভাগ কাজ শেষ না করেই উত্তোলন করেন আরও দুই দফায় আট কোটি টাকার বিল। এ অবস্থায় সরকার পরিবর্তন হলে হান্নান ভারতে পালিয়ে যান। 

সম্প্রতি সওজ মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষের তাগিদ দেয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করে। ফলে নিজেদের উদ্যোগেই কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাকি কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম জানান, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগেই মাটি ফেলা হয়েছে। এখন দু’পাশে ব্লক দিয়ে কার্পেটিং এবং পাথর ও বালু দিয়ে উঁচু করা হবে।

এদিকে অভিযোগ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধর বলেন, ‘তখন জুন ক্লোজিং ছিল। সে কারণে বিল প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু আবদুল হান্নানকে পেমেন্ট দেওয়া হয়নি। আবহাওয়ার কারণে তখন কাজের কিছু বিলম্ব হয়।’ আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সুনামগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ড.

মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ জানান, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত  কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। গুণগত মান ঠিক রেখে ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। 

একইভাবে ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়ক মেরামতের কাজ পায় যৌথভাবে মেসার্স অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ও তৈয়বুর রহমান। সেই কাজটিও সাব-কন্ট্রাক্টে নেন ঠিকাদার হান্নান। ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কাজের মধ্যে ৮০ ভাগ কাজে করেন তিনি। বিপরীতে শুরুতে বিল উত্তোলন করা হয় চার কোটি টাকা। সরকার পরিবর্তনের পর আর কাজ শুরু করেনি মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা গত নভেম্বরে সময় বর্ধিত করার আবেদন করেছে। কারণ, কাজ শেষ না হওয়া বাকি চার কোটি টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার সঙ্গে কথা বলতে তাঁকে ফোন করা হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ন মগঞ জ শ ষ কর বর ধ ত

এছাড়াও পড়ুন:

অগ্রিম বিল তুলে পালিয়েছেন সাব-ঠিকাদার যুবলীগ নেতা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর-নিয়ামতপুর সড়ক মেরামতের জন্য জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কাজের কার্যাদেশ হয় ২০২৩ সালের ৭ জুন। একই বছরের ২১ জুন প্রথম দফায় কাজের ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিল তুলে নেওয়া হয়।

কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধরের বদান্যতায় এই বিল তুলে নেন সাব-ঠিকাদার সিলেটের যুবলীগ নেতা আবদুল হান্নান। নির্ধারিত মেয়াদ এক বছরেও তিনি সড়কের অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যেই গত বছরের জুনে আরও আট কোটি টাকার বিল তোলেন হান্নান। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর হদিস মেলেনি তাঁর। ফলে বেকায়দায় পড়েছে কার্যাদেশ পাওয়া মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আমদ ও কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স। বাধ্য হয়ে সম্প্রতি তারা নিজেদের উদ্যোগেই কাজ শুরু করেছে। কাজের মেয়াদ আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও এর মধ্যে সব শেষে হবে কিনা, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

সিলেটের বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়ক মেরামতকাজেরও একই অবস্থা। এই সড়কের অধিকাংশ কাজ শেষ হলেও মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ও তৈয়বুর রহমান পড়েছেন বেকায়দায়। তাদের এই কাজটিরও সাব-লিজ পান ঠিকাদার হান্নান। তিনি পলাতক থাকায় এই কাজের জন্যও মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময় বর্ধিতের আবেদন করেছে। একইভাবে এ কাজের বিপরীতে শুরুতে তিন কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেন হান্নান।

সড়ক ও জনপথের (সওজ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নিয়ামতপুর-তাহিরপুর ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ‘বন্যা পুনর্বাসন প্রকল্পের’ আওতায় ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০২৩ সালের ৭ জুন কার্যাদেশ পায় ফেনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আমদ ও কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স। তাদের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ নেন মেসার্স এম এ হান্নান এন্টারপ্রাইজের মালিক সিলেট যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান। কার্যাদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন তিনি। কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ সওজের সহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধর বিলটি প্রস্তুত করে দেন। অভিযোগ ওঠে, সহদেবকে ম্যানেজ করে কাজের আগেই হান্নান বিল উত্তোলন করেন। পরবর্তী সময়ে হান্নান ৪০ ভাগ কাজ শেষ না করেই উত্তোলন করেন আরও দুই দফায় আট কোটি টাকার বিল। এ অবস্থায় সরকার পরিবর্তন হলে হান্নান ভারতে পালিয়ে যান। 

সম্প্রতি সওজ মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষের তাগিদ দেয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করে। ফলে নিজেদের উদ্যোগেই কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাকি কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম জানান, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগেই মাটি ফেলা হয়েছে। এখন দু’পাশে ব্লক দিয়ে কার্পেটিং এবং পাথর ও বালু দিয়ে উঁচু করা হবে।

এদিকে অভিযোগ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধর বলেন, ‘তখন জুন ক্লোজিং ছিল। সে কারণে বিল প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু আবদুল হান্নানকে পেমেন্ট দেওয়া হয়নি। আবহাওয়ার কারণে তখন কাজের কিছু বিলম্ব হয়।’ আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সুনামগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ জানান, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত  কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। গুণগত মান ঠিক রেখে ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। 

একইভাবে ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়ক মেরামতের কাজ পায় যৌথভাবে মেসার্স অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ও তৈয়বুর রহমান। সেই কাজটিও সাব-কন্ট্রাক্টে নেন ঠিকাদার হান্নান। ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কাজের মধ্যে ৮০ ভাগ কাজে করেন তিনি। বিপরীতে শুরুতে বিল উত্তোলন করা হয় চার কোটি টাকা। সরকার পরিবর্তনের পর আর কাজ শুরু করেনি মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা গত নভেম্বরে সময় বর্ধিত করার আবেদন করেছে। কারণ, কাজ শেষ না হওয়া বাকি চার কোটি টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার সঙ্গে কথা বলতে তাঁকে ফোন করা হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দায়সারা উচ্ছেদ নয়, স্থায়ী সমাধান চান ব্যবসায়ীরা