শ্যামনগরে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবিনাশ মুণ্ডাকে জিম্মি করে ৪৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে এক ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সদর থেকে কৌশলে তাঁকে গৌরিপুর এলাকায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। এক পর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পেয়ে রাত ৮টার দিকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা অবিনাশকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনা ক্যাম্পাসের ছাত্র অবিনাশ উপজেলার কালিঞ্চি গ্রামের গোবিন্দু মুণ্ডার ছেলে। এ ঘটনায় ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আজিজুর রহমানের নামে শ্যামনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গৌরিপুর গ্রামের মামুন নিজেকে সাতক্ষীরা পলিটেকনিক কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে পরিচয় দেন।

অবিনাশের ভাই দীনবন্ধু মুণ্ডা জানান, বুধবার সকালে অবিনাশ শ্যামনগরে যান। পূর্ব পরিচিত আজিজুর রহমানের সঙ্গে বিআরটিসি বাস কাউন্টারে বসে কথা বলার সময় আব্দুল্লাহ আল মামুন সেখানে যান। অবিনাশকে গৌরিপুর এলাকায় নিয়ে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। মোবাইল ফোনে তাঁর চিৎকার শুনিয়ে দুই দফায় ৪৩ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া অবিনাশের মোবাইল ফোন এবং তাঁর কাছে থাকা আরও ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাত ৮টার পরে তাঁকে হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়। এ ঘটনায় দু’জনের বিরুদ্ধে তিনি শ্যামনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে স্থানীয় বিএনপির এক নেতা টাকা ও মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অবিনাশ জানান, পলিটেকনিক কলেজে পড়ার সময় আজিজুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। মামুনের ডাকে সাড়া দিয়ে শ্যামনগর যাওয়ার পর বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তাঁকে গৌরিপুর গুচ্ছগ্রামে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে মারধর করে টাকা ও ফোন ছিনিয়ে নেয়।

এ বিষয়ে আজিজুর রহমান জানান, তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। কে জড়িত– জানতে চাইলে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। প্রধান অভিযুক্ত মামুন বলেন, ‘আমি সাতক্ষীরা চলে এসেছি। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে’। তাঁর পক্ষে স্থানীয় বিএনপি নেতারা দু’পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। টাকা ও মোবাইল ফেরত দেওয়া হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানা পুলিশের কাছে জেনে নিন। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অভিক বলেন, বাদী ও বিবাদী দু’পক্ষ থানার বাইরে বিষয়টি মীমাংসা করে নেবেন বলে জানিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য মনগর আজ জ র র ছ ত রদল অব ন শ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে: টিউলিপ

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি ও ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন যে, এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে কোনো প্রসঙ্গ বা মন্তব্যের মাধ্যমে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি না। এটা পুরোপুরি আমাকে হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি ভুল কিছু করেছি।’ খবর-বিবিসি

বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে সোমবার লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় তারা মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়েছে। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনও এর জবাব দেয়নি।’

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে করা তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে রোববার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কিনা, সে-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অন্য অভিযোগে শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের একজন সহকারী পরিচালক। মামলায় শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। 

এর আগে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান টিউলিপ। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।

টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। কেয়ার স্টারমার অফিসিয়াল চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিককে বলেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার সময় এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করেছেন- তিনি আপনার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি এবং আর্থিক অসঙ্গতির কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ