লেখক ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে চার দশক শিক্ষকতা করেছেন। ওই বিভাগ থেকেই ১৯৬৫ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৬ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ– মুক্তিসংগ্রাম, কালের যাত্রার ধ্বনি, নৈতিক চেতনা: ধর্ম ও আদর্শ ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৪৪ সালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সমকালের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহসম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম

সমকাল: আপনি হয়তো জানেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার চার দশক পূর্তি উদযাপন করছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন আপনি?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: চার দশক দীর্ঘ একটি সময়। এই সময়ে তারা নানাবিধ কাজ করেছে। জাসদ যে সমাজতন্ত্রের কথা বলেছে, তাতে যথেষ্ট বিচার-বিবেচনা ও নিজেদের সিদ্ধান্ত ছিল না। সমাজতন্ত্র কী, সমাজতন্ত্র কী নয়– এ ব্যাপারগুলো তারা বুঝতে পারেনি। 

সমকাল: তাহলে সমাজতন্ত্র না বুঝেই জাসদের উত্থান ঘটল?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ভারতে এসইউসি নামে একটি বামপন্থি দল রয়েছে। সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার। ওই দলের সমর্থক ও দলটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে– এ রকম বেশ কিছু লোক জাসদের মধ্যে ছিল। জাসদের মেনিফেস্টো ইত্যাদি দেখে বোঝা গিয়েছিল, তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেখ মুজিবের চরম পতন ঘটাতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগের ধারা থেকে বেরিয়ে এসে জাসদ স্বতন্ত্রভাবে কাজ শুরু করে। জাসদ গঠনের নেপথ্যে শেখ মুজিবের অদৃশ্য সহায়তা ছিল। তিনি চাইলেই তখন নূরে আলম সিদ্দিকী ও আ স  ম আবদুর রবের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন করে মিলিয়ে দিতে পারতেন। ছাত্রলীগ ভেঙে জাসদ ছাত্রলীগের উদ্ভব ঘটত না। এগুলো জাসদ উত্থানের প্রধান কারণ। পরে বিভিন্ন ভাগ হয়ে বাসদ গঠিত হলো।  

সমকাল: জাসদ থেকে বাসদকে কীভাবে আলাদা করেন আপনি?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাসদের কর্মীরা সমাজতন্ত্রের কথা অনেক বেশি বলেছেন এবং তাদের লেখালেখি ও যোগাযোগও ছিল উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকাণ্ডও এতদূর অগ্রসর হতে পারেনি। 

সমকাল: বিদ্যমান সমাজে বামপন্থি রাজনীতির চ্যালেঞ্জ কী দেখছেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: উত্তরাধিকারভিত্তিক বা বংশানুক্রমিক নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রবিরোধী। বাংলাদেশে আমরা এমন কোনো নেতা পাইনি, যিনি গণতন্ত্রকে লালন করেছেন। দেশ-কালের প্রেক্ষিতে রাজনীতি করে রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। এই প্রক্রিয়া কখনও ছিল না। রাজনীতিতে সব সময় আবেগ ও হুজুগ ছিল। শুধু রাজনীতিতে কেন, আমাদের লেখক-সাহিত্যিকদের দিকে তাকালেও ভিন্ন চিত্র পাওয়া যাবে না। 

সমকাল: আপনি সম্ভবত তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টকে দেখে আসছেন। সংগঠনটির কোনো বিশেষত্ব আপনার চোখে পড়ে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট অল্পদিনের মধ্যেই গড়ে উঠেছে। ১৯৮০-এর দশকে তাদের মধ্যে একটা অন্তর্বিরোধ চলছিল। এ বিরোধ তারা মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে তাদের কাজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এর পরও তারা বারবার অন্তর্বিরোধের কারণে এগোতে পারেনি। একটি হলো ইনার পার্টি স্ট্রাগল বা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব; আরেকটি হলো ইন্ট্রা পার্টি স্ট্রাগল বা নিজেদের বাইরের কারও সঙ্গে বিরোধ। প্রথমটি মীমাংসা করতে পারলে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়। নিজেদের মধ্যকার সমস্যা নিরসন করতে না পারলে চাইলেও এগোনো যায় না। অন্যান্য দল ও গ্রুপের চেয়ে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে আসা দলটি যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটি অনেকটা জীবনঘনিষ্ঠ। এ জন্য সমর্থন পেয়েছে। ছাত্র ফ্রন্ট থেকে লিফলেট, বুকলেটের মাধ্যমে যে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

খালেকুজ্জামানসহ আরও কেউ কেউ যেসব মৌখিক ও লিখিত বক্তৃতা দিয়েছেন, সেসব আমরা পছন্দ করেছি। অনেকের মধ্যে এ ধারণাও দেখেছি, মণি সিংহের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা দেশে প্রচার করা হয়নি। কমিটির মধ্যে শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকছে। এর মধ্যে বাসদই পরিচ্ছন্ন একটি বক্তব্য নিয়ে সামনে এসেছে। 

সমকাল: জাসদ ছাত্রলীগ ভেঙে যাওয়ার নেপথ্যে কী ছিল?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: জাসদ যখন গঠিত হয়, তখন ছাত্রলীগের অনেক কর্মী আমার কাছে আসত ও বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করত। এ সময় জাসদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল শেখ মুজিবকে উৎখাত করা এবং বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আরেকটি হলো, শেখ মুজিবের ছাত্রলীগের বিষয়গুলো যেভাবে বোঝা দরকার ছিল, সেটি বোঝার সুযোগও তারা পায়নি; সেই সুযোগও তাদের দেওয়া হয়নি। কারণ যাঁর নেতৃত্বে তারা চালিত হচ্ছিল, সে পর্যন্ত তাদের সেই সুযোগ দেননি। নতুন আদর্শ নিয়ে তারা যে এগোবে, সেই পরিস্থিতি ছিল না। 

সমকাল: আপনি কি মনে করেন, যে সম্ভাবনা নিয়ে বহু বাম সংগঠনের ভিড়ে ছাত্র ফ্রন্ট জন্ম নিয়েছিল, তা কার্যকর হয়েছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: না, কার্যকর হয়নি। যারা তাদের প্রতিপক্ষ ছিল– আমি শত্রুপক্ষ বলতে চাই না; বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারা জয়ী হতে চায়। এই প্রচেষ্টা তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। একটা দল থেকে মানুষের কল্যাণে যদি একটি বক্তৃতা প্রচার করা হয়, তাহলে সেটি অন্য ছোট-বড় দলও ভালোভাবে নেয়। সেভাবে প্র্যাকটিক্যালি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কাজ করেনি। ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস খোঁজ করলে দেখব, উপজেলা পর্যন্ত তারা যেসব কমিটি করেছে, সেটি অন্য কোনো দল করতে পারেনি। সেদিক দিয়ে বাসদের গুরুত্ব বেড়েছিল। অনেকের সঙ্গে আমিও আশা করেছিলাম, সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কার্যকর হবে এবং জনজীবনে ইতিবাচক কর্মসূচি দিয়ে এগুলো জনসমর্থন পাবে। খুব বেশি সময় লাগবে না। এ রকম কোনো বক্তব্য বা কর্মসূচি জাসদ থেকে দেওয়া হয়নি। ছাত্র ফ্রন্ট চার দশকে আকৃষ্ট করেছে, অগ্রসর হয়নি।

সমকাল: সমগ্র বাম রাজনীতিতেই একটি বন্ধ্যা সময় যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এই বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা কি আছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আমি সম্ভাবনা যতটা অনুসন্ধান করেছি, বোধ হয় বাংলাদেশে আর কেউ এতটা করেনি। এখানে শোষণমুক্ত সমাজ করব, কোনো অন্যায় থাকবে না, অবিচার থাকবে না– এ রকম একটি কথা বলে তরুণ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করেছে। ওই ধারা থেকে তারা আর এগোয়নি। শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, কামাল হোসেনসহ অন্যান্য নেতা অনেক কিছু করেছেন; কিন্তু বামধারা তো তেমন কিছুই করেনি। কমরেড তোহা, কমরেড আবদুল হক, কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার মণি সিংহের দল থেকে বেরিয়ে এসে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের চেষ্টা করেছেন। সেটি ১৯৬২ সালের ঘটনা। তখন কমিউনিস্ট পার্টি শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিল। 

সমকাল: বিশেষ করে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দীর্ঘদিন বামপন্থিদের ভূমিকা উজ্জ্বল ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তা আমরা দেখছি না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: উজ্জ্বল ছিল, কথাটি ঠিক নয়। সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল ছিল। আর কমিউনিস্ট ধারা যে রাজনীতি করেছে, তা ছাত্রদের বাইরে একটু বয়স্ক মানুষদের কনভিন্স করতে পারত না। ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, বয়সে তরুণ; তারা দেশের ভালো চাইবেই। ওই বয়সে দুনিয়াকে অনেক সুন্দর করে দেখার তাড়না থাকেই। ‘ঈশ্বর যা পারেন না, কমিউনিস্ট তা পারবেই’– এ রকম একটি বিশ্বাস তৈরি করা হয়েছিল এবং বিশ্বাস করা হয়েছিল। কিন্তু তার বিকাশও হয়নি, কার্যকরও হয়নি। এখনও রাজনীতিতে শূন্যতা বিরাজ করছে। এখনও সুযোগ আছে, বাস্তবতা মাথায় নিয়ে দলের ভেতরে প্রচেষ্টা থাকলে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব। 

সমকাল: বামপন্থিদের মধ্যে ভাঙন প্রবণতা ব্যাপক বলে মনে হয়। এর কারণ কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ষাটের দশকে আমি নিজেও দেখেছি, দলের ভেতরে আদর্শগত বিরোধ চলছে। মতপার্থক্য এবং ‘আমি সাচ্চা কমিউনিস্ট’– এ ধরনের কথাবার্তার কারণে বারবার ভাঙছে। দেবেন সিকদার বলে একজন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। মণি সিংহের চেয়ে অনেক নিচু পর্যায়ের নেতা ছিলেন। তাঁর মধ্যে আমি প্রকৃত স্পিরিট দেখেছিলাম। তাঁকে আমার অনেক বেশি প্র্যাকটিক্যাল মনে হয়েছিল। তোহা, আবদুল হক, সুখেন্দু দস্তিদারের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। তারা ওপরের নেতা ছিলেন, যারা বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসেছিলেন। তাদের কোনো পরিচ্ছন্ন চিন্তা ছিল না। তারা চরমভাবে শেখ মুজিবের সমালোচনা করতেন। বাস্তবতা হলো, শেখ মুজিবের নেতৃত্বের চেয়ে ভালো নেতৃত্ব তো কমিউনিস্ট পার্টি বা অন্য কোনো দল দিতে পারেনি। 

সমকাল: আপনি কি মনে করেন, বাম পন্থার সেই স্বর্ণযুগ আবার ফিরে আসতে পারে? ছাত্র ফ্রন্ট বা বাম ছাত্র সংগঠনের বিষয়ে কোনো পরামর্শ দেবেন আপনি?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আমি ২০ বছর ধরে ২৮ দফার ভিত্তিতে রাজনৈতিক কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রচার করে আসছি। তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, কামাল হোসেনসহ আহমদ শরীফ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে পুস্তিকাটি দিয়েছি। তারা খুব প্রশংসা করেছিলেন। আমি সেটির ভিত্তিতে দল গঠনের কথা বলেছিলাম। দলের ভেতরে এসব চিন্তাভাবনা হলে গণতান্ত্রিক পথে এগোনো যেত। 

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ। 

আবুল কাসেম ফজলুল হক:  আপনাকেও ধন্যবাদ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ত ব মপন থ চ র দশক বল ছ ল কর ছ ন গঠন র এ রকম সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ছোট রান্নাঘর সাজানোর কৌশল

আজকালকার শহুরে জীবন মানে ছোট বাড়ি, ছোট রান্নাঘর। ছোট রান্নাঘরে কাজ করতে গেলে প্রায়ই মনে হয় রান্নার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এ সংকটে আপনি খুঁজে পেতে পারেন এক স্মার্ট সমাধান এবং সৃজনশীলতা। কিছু সহজ ও কার্যকর কৌশল আপনার ছোট রান্নাঘরকে পরিপাটি রাখতে সাহায্য করবে। 
দেয়ালকে বানান স্টোরেজ স্পেস 
রান্নাঘরের এক কোণে যদি স্টোরেজ বক্স বা ক্যাবিনেট বসানোর সুযোগ না থাকে, তবে দেয়াল হতে পারে আপনার সমাধান। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ ব্যবহার করে রাখুন ছুরি, কাঁটা চামচ, স্ক্যাবার। এভাবে শুধু জায়গা বাঁচবে না, খাবার তৈরির প্রস্তুতিও হবে আরও সহজ। দেয়ালটি যদি খালি পড়ে থাকে, তাহলে কিছু হুক বা শেলফ বসিয়ে রান্নার সরঞ্জাম, প্লেট বা কাপ সাজিয়ে রাখতে পারেন। যদি আপনার রান্নাঘরের দেয়ালে কাঠ বা মেটাল সুরক্ষা থাকে, তাহলে রান্নাঘরের সজ্জার জন্য শেলফ এবং ছোট বক্সও ব্যবহার করতে পারেন। এতে পুরো কিচেনের ধারণা আরও সৃজনশীল দেখাবে।
মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার বেছে নিন
যে কোনো ছোট রান্নাঘরকে কার্যকর এবং ফাংশনাল করা যায় মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার দিয়ে। যেমন এক টেবিল যেখানে ড্রয়ার বা সিটের নিচে থাকবে ছোট্ট স্টোরেজ। এতে শুধু রান্নার সময় প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে সুবিধা হবে না, পাশাপাশি আপনার ক্যাবিনেটের জায়গাও বাঁচবে। এ ছাড়া ফোল্ডেবল বা অর্গানাইজেবল ফার্নিচারও উপকারী। যেমন ফোল্ডিং চেয়ার বা টেবিল, যা আপনি পরবর্তী সময়ে দরকার অনুযায়ী খুলে ব্যবহার করতে পারেন।
তাছাড়া টেবিলের নিচে ক্যাবিনেট বা টোকেন স্টোরেজ রাখলে রান্নাঘরের ছোট জায়গায় আপনি আরও বেশি আয়োজন করতে পারবেন।
কনটেইনারের জাদু 
পুরোনো শাড়ি, প্লাস্টিকের কনটেইনার বা অন্য ধরনের বাক্সে ব্যবহারিক কিছু জিনিস রাখা সম্ভব। ছোট রান্নাঘরে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে বেশ খানিকটা সাহায্য করবে কনটেইনার বা বাক্সগুলো। ট্রান্সপারেন্ট কনটেইনার ব্যবহারের সুবিধা হলো, এটি দিয়ে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন কোনো মসলা বা রান্নার উপকরণ কোথায় রাখা আছে। এ ছাড়া প্রতিরোধক ব্যাগ বা ভ্যাকুয়াম সিলিং ব্যবহার করলে খাবার দীর্ঘদিন সতেজ থাকে এবং রান্নাঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কমে যায়।
ওপেন শেলফিং এবং ডিসপ্লে
গোছানো রান্নাঘরেও কিছুটা স্টাইল থাকা প্রয়োজন। রান্নাঘরের ওপেন শেলফে আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারের আইটেমগুলো রাখলে শুধু তা দেখতে সুন্দরই হবে না, অল্প জায়গায় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর যথেষ্ট অ্যাক্সেস পাবেন।
গ্লাস, প্লেট, বাটি, মসলা বা বেকিং আইটেমগুলো সজ্জিত করতে ওপেন শেলফের ব্যবস্থা খুব উপকারী। পাশাপাশি, ওপেন শেলফকে ব্যবহার করে আপনি আপনার রান্নাঘরের ব্যক্তিগত টাচও যোগ করতে পারেন।
ওয়ার্ক ট্রায়াঙ্গল বজায় রাখুন
রান্নাঘরের তিনটি মূল জায়গা কুকিং, ওয়াশিং এবং স্টোরেজ। এ তিনটি যদি একসঙ্গে ঠিকভাবে বসানো যায়, তবে রান্না করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এ ‘ওয়ার্ক ট্রায়াঙ্গল’ কনসেপ্ট অনুসরণ করলে রান্নার জায়গা ও ওয়াশিং অ্যান্ড স্টোরেজের জায়গায় হাঁটার সময় কম হবে এবং সময়ও বাঁচবে।
তাছাড়া যদি রান্নাঘরে স্পেস সীমিত থাকে, তবে কাউন্টারটপ স্পেস ব্যবহার করে এসব কাজের স্থল আরও কার্যকর করতে হবে।
প্রাকৃতিক আলো এবং আয়না ব্যবহার
ছোট রান্নাঘরের জন্য প্রাকৃতিক আলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানালা দিয়ে আলো প্রবাহিত হোক, এমন ব্যবস্থা করুন। যদি জানালা না থাকে, তবে রান্নাঘরের চারপাশে হালকা রং ও রিফ্লেক্টিভ সারফেস যেমন আয়না বা শাইনিং টাইলস ব্যবহার করুন। এভাবে ছোট জায়গাটি বড় এবং উজ্জ্বল দেখাবে। ছোট রান্নাঘর আরও বেশি পরিপাটি দেখাতে আধুনিক ফ্লোরিং বা লাইটিং ব্যবহার করতে পারেন। রান্নাঘরের আয়না ব্যবহার করার মাধ্যমে জায়গাটাকে দুই গুণ বড় মনে হবে। রান্না শুধু খাবারের ব্যাপার নয়, এটি একটি অনুভূতি, একটি অভিজ্ঞতা। তাই আপনার রান্নাঘরকে যতটা সম্ভব কার্যকর, আনন্দদায়ক এবং স্টাইলিশ করে গড়ে তুলুন। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ