নিয়মিত জিমেইল ইনবক্স পরিষ্কার রাখা জরুরি। তা না হলে কিছুটা সময় পরেই স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে প্রয়োজনীয় ইমেইল প্রবেশ করবে না। তাই অপ্রয়োজনীয় ই-মেইল ডিলিট করাই শ্রেয়। স্টোরেজ ভর্তি হয়ে যাওয়ার সমস্যা ছাড়া আরও কিছু সমস্যা অনেকের হয়। চাইলে জিমেইল আর্কাইভ করা যায় সহজেই।
জিমেইলে অগণিত ই-মেইলের মধ্যে জরুরি ই-মেইল খুঁজে বের করা দুরূহ। যার যথার্থ সমাধান দেবে জিমেইল আর্কাইভ ফিচার। যেখানে ই-মেইল আলাদা করে সংরক্ষণ করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় সুবিধা যতদিন ইচ্ছা ই-মেইল আর্কাইভ করে রাখা সম্ভব।
প্রথমে জিমেইল ইনবক্স খুলে যেসব ই-মেইল আর্কাইভ করতে চান, সেসব নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি ই-মেইলের পাশের বক্সে ক্লিক করে বা ওপরের দিকে সিলেক্ট অল বক্সে ক্লিক করে সব ই-মেইল নির্বাচন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যখনই সিলেক্ট অল অপশন ক্লিক করবেন, তখন ইনবক্সের ই-মেইল সিলেক্ট হয়ে যাবে। তখন সবই আর্কাইভ হয়ে যাবে। আর্কাইভ অপশনে ক্লিক করে কোনো ফোল্ডার লুকিয়ে রাখতে চান, তাহলে ফোল্ডারে ক্লিক করে আর্কাইভে ক্লিক করলেই কাজ হয়ে যাবে।
ডিভাইস যখন অ্যান্ড্রয়েড
প্রথমে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে জিমেইল অ্যাপ খুলতে হবে। প্রয়োজনীয় ই-মেইলটি আর্কাইভ করতে তা আগে খুলে নিতে হবে। স্ক্রিনের ওপরের ডানদিকে থ্রি-ডট আইকনে ক্লিক করে তারপর মেন্যু থেকে আর্কাইভ নির্বাচন করতে হবে।
আর্কাইভ ইন আইফোন
আইফোন বা আইপ্যাড জিমেইলে অ্যাপ খুলতে হবে। জরুরি ই-মেইলটি আর্কাইভ করতে তার ডানদিকে সোয়াইপ করতে হবে। তখন আর্কাইভ আইকনটি দৃশ্যমান হবে। ওই অপশনে ক্লিক করলেই আর্কাইভ হয়ে যাবে নির্বাচিত সব ই-মেইল। কাজের প্রয়োজনে বাড়তি স্টোরেজ এখন সময়ের দাবি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ল ক কর
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট প্রশাসনের এই অবস্থান কেন!
ছয় দফা থেকে এক দফার আন্দোলন চলছে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। সেখানে উপাচার্যের অপসারণ চান শিক্ষার্থীরা। বুধবার এ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা।
কুয়েটে এ পরিস্থিতির সূচনা হয় দুই মাস আগে। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জের ধরেই এমন হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলার সময় আমরা দেখেছি, রামদা হাতে থাকা যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হলেও প্রশাসন এক প্রকার নীরবই ছিল।
পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন অবশ্য সিন্ডিকেটের বৈঠক করে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে। ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরই মধ্যে বিস্ময়করভাবে, ঘটনার প্রায় দুই মাস পর ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন খুলনার এক ব্যক্তি। অভিযুক্ত প্রায় সবাই ১৮ ফেব্রুয়ারিতে হামলার শিকার হয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েট প্রশাসনের প্ররোচনায় এ মামলা করা হয়েছে। তাদের দাবি, প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া বাইরের কোনো ব্যক্তির পক্ষে এতজন শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় জানা সম্ভব নয়। আরও আশ্চর্যের বিষয়, ১৪ এপ্রিল সোমবার কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় যে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়, তারাও মার খাওয়া শিক্ষার্থী। আন্দোলনকারী একজন শিক্ষার্থী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘কোপ খাইলাম, গুলি খাইলাম, মামলা খাইলাম আবার বহিষ্কারও খাইলাম।’
২৫ ফেব্রুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া কুয়েট প্রশাসন এমনকি ঈদের পরও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে ৭ এপ্রিল ‘কুয়েট ১৯’ পেজ থেকে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন– তারা সবাই ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে উঠবেন। ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর যেখানে ৮-৯ এপ্রিল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছিল, সেখানে কুয়েট প্রশাসন ৮ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের জানায়। প্রশাসন এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। মোবাইল ফোনে অভিভাবকদের বার্তা দিয়ে জানায়– কুয়েট এখনও খোলেনি; তারা যেন তাদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে না পাঠায়। শুধু তাই নয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার একই দিনে কেএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়ে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের আহ্বান জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল, ১৫ এপ্রিল থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম খোলা হবে। তারপরই আমরা দেখলাম, ১০ এপ্রিল কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো।
প্রশাসন ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবাসিক হল বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি; হলের ওয়াইফাই, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়, যাতে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই হলে থাকতে না পারেন। কিন্তু এর মধ্যে হামলার দুই মাস পার হলেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার কিংবা তাদের চিহ্নিত করে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যে সময়ে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল, সে সময় বরং দেখা গেল কুয়েট প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বহিষ্কারাদেশ ও মামলা প্রত্যাহার, হল খুলে দেওয়াসহ ছয়টি দাবি জানান। তারা ১৩ এপ্রিল কুয়েটে এলেও হল খুলে দেওয়া হয়নি। দুই দিন তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান। দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রতিটি বিভাগের সামনে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে হল খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান। এর পরও সাড়া না পেয়ে ছাত্ররা খানজাহান আলী, ড. এমএ রশিদ, শহীদ স্মৃতি, ফজলুল হক, অমর একুশে ও লালন শাহ হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। কুয়েট উপাচার্য ও প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ওঠে।
স্বাভাবিকভাবেই কুয়েটের আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়টির মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) প্রশাসনের ভূমিকা সত্যিই হতাশাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেছে; ভালো কথা। তাদের এ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরাও মেনে নিয়েছে। বস্তুত, সেখানকার সাধারণ শিক্ষার্থীরাও চায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক। এই দাবির বিপরীতে দাঁড়িয়ে যখন ছাত্রদলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন কুয়েট প্রশাসনের উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের বিচার করা। অথচ যে ঘটনাপ্রবাহ আমরা দেখছি, সেখানে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ এবং সে কারণেই কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার মানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হুমকিতে পড়া। বিশেষ করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যখন স্বস্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে; হলগুলো যখন লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতির জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এসেছে; যখন ক্যাম্পাসে পুরোদমে পড়াশোনা হওয়ার কথা, তখন দুই মাস যাবৎ কীভাবে কুয়েট বন্ধ থাকে! উপাচার্য ও কুয়েট প্রশাসনকে অবশ্যই এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ছাত্রদের বহিষ্কারাদেশ ও মামলা উভয়ই অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার জরুরি। এমন উপাচার্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com