ঢাকার শেয়ারবাজারের লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়ানোর পরদিনই ফের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫১৯ কোটি টাকার বেশি মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা ছিল আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৯৯ কোটি টাকা বেশি। এর পরদিই গতকাল বুধবার ১২৮ কোটি টাকা কমে ৩৯১ কোটি টাকায় নেমেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, টাকার অঙ্কে লেনদেন সবচেয়ে বেশি কমেছে ব্যাংক, ওষুধ ও রসায়ন, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি এবং কাগজ ও ছাপাখানা খাতের। সম্মিলিতভাবে মঙ্গলবার এসব খাতের মোট ২৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা গতকাল ১৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় নেমেছে।
এর মধ্যে একক খাত হিসেবে সর্বাধিক পৌনে ৪৯ কোটি টাকা কমে ব্যাংক খাতের লেনদেন ৩৪ কোটি টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতের লেনদেন ৮৭ কোটি টাকা থেকে কমে নেমেছে ৪৯ কোটি ৬৩ লাখে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের লেনদেন সাড়ে ১১ কোটি টাকায় এবং কাগজ ও ছাপাখানা খাতের সাড়ে ১৮ কোটি টাকার নিচে নেমেছে।
সার্বিক হিসাবে কমার বিপরীতে টেলিযোগাযোগ, বস্ত্র, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতে লেনদেন বেড়েছে। এর মধ্যে টেলিযোগাযোগ খাতে লেনদেন ৯ কোটি টাকা বেড়ে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ফান্ড খাতের লেনদেন সোয়া ৫ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ১১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল ডিএসইতে কমবেশি সব খাতে দর বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারের তুলনায় দর হারানো শেয়ার সংখ্যা বেশি ছিল। ব্যতিক্রম অবস্থা দেখা গেছে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে। তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি ফান্ডের মধ্যে ২৫টির দর বেড়েছে, কমেছে দুটির। বাকি ১০টির দর ছিল অপরিবর্তিত। গড়ে ফান্ডগুলোর বাজারদর মঙ্গলবারের তুলনায় ২ শতাংশ হারে বেড়েছে। তুলনামূলক বেশি শেয়ারদর হারিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাগজ এবং ছাপাখানা খাতে।
সার্বিক হিসাবে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ১১৭টির শেয়ারদর বেড়েছে। কমেছে ২০৪টির। অপরিবর্তিত ৩৬টির দর। এ এবং বি ক্যাটেগরির বেশির ভাগ শেয়ার দর হারালেও তুলনামূলক জেড ক্যাটেগরিভুক্ত বেশি শেয়ারের দর বেড়েছে।
ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে গতকাল ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাজারদর বেড়েছে ১৬ কোম্পানি ও ৪ মিউচুয়াল ফান্ডের। এর মধ্যে এ ক্যাটেগরির শেয়ার শুধু আরএকে সিরামিক, যার বাজারদর সাড়ে ৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। জেড ক্যাটেগরির ১২ শেয়ারের দর বেড়েছে। এর মধ্যে নূরানী ডাইং, এমারেল্ড অয়েল ও অ্যাপোল ইস্পাত ছিল শীর্ষে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সমস্যা সবই জানা, সমাধানে মানসিকতার বদল জরুরি
শেয়ারবাজার সমস্যা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, শেয়ারবাজারের সমস্যা সবই জানা। এগুলোর সমাধানে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।
শেয়ারবাজারের সমস্যা এবং উত্তরণের পথ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত জানতে ড. আনিসুজ্জামান গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যালয়ে যান। সেখানে বিএসইসি কর্মকর্তা এবং বাজার অংশীজনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বিএসইসি কার্যালয়ে যান তিনি।
শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১৯ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ড. আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। গতকালের বৈঠকে কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম এবং অপর সদস্য এফআইডির অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব উপস্থিত ছিলেন।
ড. আনিসুজ্জামান প্রথমে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান, সিডিবিএলের এমডি এবং ডিএসই ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক, নিরীক্ষক, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উভয় বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএসইসি বা বাজার অংশীজনের কেউই বাজারের জানা সমস্যার বাইরে নতুন কিছু জানাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আপনারা যেসব কথা বলেছেন, তার সবটাই জানা। সমস্যার কথা সবাই জানে। তবে সমাধান কীভাবে চান, সে বিষয়ে শুনতে চাই।’ তিনি সবার কাছে সমাধানের লিখিত প্রস্তাব চেয়েছেন।
শেয়ারবাজার বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণের আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ের বাইরে ব্রোকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কমিটির বৈঠকের প্রস্তাব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বিএসইসির চেয়ারম্যান ডিএসইর পরিবর্তে তা সিএসইতে করার পক্ষে মত দেন। তাঁর কথা, ডিএসইতে এ ধরনের বৈঠক বহু হয়, সে তুলনায় সিএসইতে কম হয়।
সূত্র জানায়, বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কমিটিকে শেয়ারবাজারের বর্তমান আকার এবং এর কাঠামোগত বিষয়ে ধারণা দেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, এ বাজার বর্তমানে বড় ধরনের যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, সেগুলোর অন্যতম হলো– নেগেটিভ ইক্যুয়িটি ইস্যু, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে সুশাসনের অভাব, ভালো আইপিওর অভাব, বিনিয়োগ পণ্যের ঘাটতি এবং বাজার কারসাজিসহ শেয়ারবাজার ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট।
আলোচনায় ডিএসইর চেয়ারম্যান জানান, শেয়ারবাজারের লেনদেন ব্যাপক হারে কমায় লেনদেনে উৎসে কর বেশি থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই উৎসে কর কমানো দরকার। সিএসইর চেয়ারম্যান জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরীক্ষামূলক লেনদেন চালু হবে। প্রাথমিকভাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে স্বর্ণ, তুলা, পাট বা কমিশন যেসব পণ্য কেনাবেচার অনুমোদন দেবে, সেগুলো কেনাবেচা হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপালী চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভালো মূল্য ও কর সুবিধা না থাকায় দেশের বড় ও স্বনামধন্য কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা হলে সবাই সেকেন্ডারি শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা করেন, যেখানে আইপিও নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।
বৈঠকে অন্যরা স্টক এক্সচেঞ্জসহ লেনদেনে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে জানান। তারা নগদ লভ্যাংশ বিতরণে বিলম্ব বা না দেওয়া ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততা এবং আইপিওতে ভালো কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে কর রেয়াত সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করেন।