ঢাকার ধামরাইয়ে আলাদীনস পার্ক নামে বিনোদনকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পিকনিকের আনন্দ শেষ হলো সেখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে রক্তাক্ত সংঘাতের মধ্য দিয়ে।

পিকনিকে আসা শিক্ষার্থীদের মোবাইল হারানোকে কেন্দ্র করে পার্ক কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হয়েছে। 

ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ঘটনা সম্পর্কে অবহিত। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আহতদের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। তবে ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

কাশেমের মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছে গাজীপুর, রাতেই মশাল মিছিল

ধামরাইয়ের সড়কে ঝরল প্রাণ

সংঘর্ষের মধ্যে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদনকেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালান। আর শিক্ষার্থীদের বহনকারী কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেন পার্কের কর্মচারীরা।

ঢাকার মিরপুরের বনফুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আলাদীনস পার্কে পিকনিক করতে আসেন। 

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের সিতি এলাকায় আলাদীনস পার্কে এই সংঘাত হয়েছে। 

সকাল ১০টার দিকে ঢাকার মিরপুরের বনফুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আলাদীনস পার্কে পিকনিক করতে আসেন।

সকাল ১০টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬৫০ জন ১২টি বাসে আলাদীনস পার্কে আসেন। দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা তাদের মোবাইল ও অন্যান্য জিনসপত্র লকারে রেখে ওয়াটার পার্কে নামেন। তবে পানি থেকে উঠে কয়েকজন শিক্ষার্থী লকার খোলা ও সেখানে মোবাইল খুঁজে পাননি। 

শিক্ষার্থীরা এ জন্য পার্ক কর্মচারীদের দায়ী করলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের মধ্যস্ততায় মীমাংসা হয়, তবে মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিকেল ৫টার দিকে বিনোদনকেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন না নিয়ে সেখান থেকে যেতে রাজি হন না। 

একপর্যায়ে তারা বিনোদনকেন্দ্রের কয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুর করেন। এ সময় বিনোদনকেন্দ্রের কর্মচারীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় সংঘর্ষ বেঁধে যায। 

সংঘর্ষে আহত পার্কের পক্ষের এক তরুণ। ছবি: রাইজিংবিডি

পার্কের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের অন্তত আটটি বাসে ভাঙচুর চালিয়েছেন। সংঘর্ষে ২৫-৩০ শিক্ষার্থী ও ১০-১৫ জন পার্কের কর্মচারী রক্তাক্ত হন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বনফুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নাসির আফজাল বলেন, “আমাদের ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমরা মামলা করব। ক্ষতিপূরণের বিষয় রয়েছে।”

আলাদীনস পার্কের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নকিবুল হাসান রনি বলেন, “আমাদের ১৫-১৬ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সবারই শরীরে রক্তাক্ত জখম। আহত সবাই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

ঢাকা/সাব্বির/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত ব ন দনক ন দ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১টি শহীদ পরিবার ও আহত ৭ ব্যক্তির মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান।

অনুষ্ঠানে তিনটি শহীদ পরিবার ও তিনজন জুলাই যোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তাঁরা হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্তি, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সব সময় ভাবি, যাঁদের কারণে, যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি, তাঁদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের ইতিহাসের স্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না, সে জাতি জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না।’

শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই স্বীকৃতিটা তিনি জাতির পক্ষ থেকে দিচ্ছেন। তাঁদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। আজকে থেকে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরে তাঁদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে নিতে হবে।

সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো, এটা সুবিচার হতে হবে...অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি, তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়? আমরা অবিচারে নামব না।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যাঁরা অপরাধী, তাঁদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যাঁরা অপরাধী নয়, তাঁদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।’

দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন না হয়, সেদিকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি, আপনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আরও আগেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো করতে পারব। আমাদের আন্তরিকতার কম ছিল না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রত্যেকে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। সংকটকালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে, সে কারণে আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা করতে পারিনি। এ কারণে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকার গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন। আহত ব্যক্তিরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। পরিচয়পত্র পাবেন।

প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।

জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসাসুবিধা পাবেন। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন। তাঁরা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন–সুবিধা পাবেন।

‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরকারি-আধা সরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন।

এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগির তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  •  সোনারগাঁয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, ৫ নারী আহত
  • ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এনজিও কর্মকর্তার, আহত ৪
  • আন্দোলনে আহতদের হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছি: আদালতে ডা. এনাম
  • কোনো অবস্থাতেই মাংস-ডিম আমদানি নয়: উপ‌দেষ্টা
  • শহীদ পরিবার ও আহতদের কর্মসংস্থান নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা নাহিদ
  • আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি কোটাতে নয়: তথ্য উপদেষ্টা  
  • সহিংসতা-হানাহানি যেন না হয়, সজাগ দৃষ্টি রাখুন: প্রধান ‍উপদেষ্টা
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু
  • হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১