নাটকের মঞ্চে এক তরুণ হাঁকছেন– ‘এই, পানি লাগবে? পানি!’ এমন সময় হঠাৎ তাদের পাশে আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণ-যুবাদের দিকে নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ ও দুর্বৃত্ত। মঞ্চের আলো ঝাপসা হয়ে যায়। সেখানে দেখা গেল লাল-সবুজের পতাকা পরা তরুণ-তরুণীদের। তারা একটু আগেই বৈষম্যের অবসান চেয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিল। 

মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌর শিশুপার্কের মঞ্চে দেখা যায় এই দৃশ্য। ১০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চটিতেই ফুটিয়ে তোলা হয় গত বছরের জুলাই-আগস্টে উত্তাল বাংলাদেশকে। সেখানে তরুণ-তরুণীদের কণ্ঠে ভেসে আসে– ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে/ লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে/ রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়/ আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম/ দালালি না রাজপথ, রাজপথ-রাজপথ/ মেধা না কোটা, মেধা-মেধা/ জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এর মতো স্লোগান। তাদের অভিনয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে দেন পৌর শিশুপার্কে আসা অনেক দর্শক।

এক পর্যায়ে ছাত্ররা ‘পলাইছে রে পলাইছে, স্বৈরাচার পলাইছে/ পলাইছে রে পলাইছে, খুনি হাসিনা পলাইছে’ বলে বিজয় মিছিল শুরু করে। তখন মাতোয়ারা দর্শক করতালি দিতে থাকেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত এই নাটকের নাম ‘রক্তগন্ধা জুলাই’। এটির রচয়িতা কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস। নাটকটিতে অভিনয় করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ১৮ শিক্ষার্থী। 

কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রাজশ্রী মজত সিজা মনে করেন ‘৩৬ দিনের ঘটনা তো আর ৩৬ মিনিটে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে যা কিছু পরিবেশন হয়েছে, এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রায় পুরো রূপ-চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক নারী বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেত। নাওয়া-খাওয়া, ঘুম ছিল না। তখন তো নিজ চোখে আন্দোলন দেখিনি। শুধু টিভিতে খবর দেখতাম। মঞ্চে যখন আবু সাঈদের ওপর নির্মমভাবে গুলি চালালো, তখন নিজের ছেলের কথা মনে হয়ে কেঁদে ফেলেছি।’

নাটকটি মঞ্চস্থ হয় তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসব ও গ্রামীণ মেলার অংশ হিসেবে। মঙ্গলবার সকালে এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো.

তৌফিকুর রহমান, যা চলবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত।

নাটকে সন্তানহারা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ফাবিহা ইবনাথ। তাঁর ভাষ্য, কীভাবে আবু সাঈদ-মুগ্ধরা শহীদ হয়েছেন; তাদের চিন্তাধারা কী ছিল; তাদের স্বজনরা কতটা শোকাহত হয়েছে– সবার মাঝে সেই চেতনা জাগ্রত করতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা থেকেই মূলত নাটকে অভিনয় করা।

পুলিশ চরিত্রে ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য আপন আহমেদ। তিনি বলেন, পুলিশের তো জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা। কিন্তু হাসিনার নির্দেশে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে তারা ছাত্রদের হত্যা করেছে। সব যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশকে জনগণের পক্ষে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন আপন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলী বলেন, এটা শুধু নাটক নয়; জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রূপ। সব অপরাধীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন বিভিন্ন মাধ্যমে চলবে। 

দেশের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস নিয়ে চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন কবি ও নাট্যকর লিটন আব্বাস। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনে সারাদেশের মানুষ অন্ধকার ও আতঙ্কে ছিল। হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ ও অঙ্গহানির মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা, তা এই নাটকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে তিন দিনের নাট্যোৎসবের আয়োজন। মঙ্গলবার রাতে ‘রক্তগন্ধা জুলাই’ মঞ্চস্থের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সূচনা হয়। নাটকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। এসব দেখে অনেক দর্শক আবেগে কেঁদেছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই গণঅভ য ত থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফায়জার ঈদ পোশাকে ‘প্রতিবাদ’

ফ্যাশন হাউস মানাসের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ। বাংলা ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর এদেশের তাঁতিদের বোনা পোশাক তার ভীষণ প্রিয়। তাঁতিদের বোনা কাপড়ের জমিনে বাংলা ভাষার বিখ্যাত কবি, লেখকদের কবিতা ও গান জুড়ে দিয়ে তৈরি করেন মানাসের শাড়ি, কামিজ, টপস, লং শার্ট ইত্যাদি। মানাস সাধারণত ঋতুভিত্তিক পোশাক তৈরি করে থাকে। বাংলার জমিনের রূপে মুগ্ধ এই ডিজাইনার মাটি রঙের অনের পোশাক তৈরি করে থাকেন। এবার উৎসবের পোশাকেও দেখা গেলো মাটি রং আর পতাকার মতো গাঢ় সবুজ রঙের উপস্থিতি। 

শাড়ি কিংবা কামিজ যেন ফায়জার লেখার খাতা। পোশাকের জমিনে গান কবিতার পাশাপাশি এবার স্থান করে নিয়েছে প্রতিবাদের অক্ষরমালা। ঈদে মানাসের শাড়ি, লং শার্ট, কামিজের বুকের ওপর, পিঠের মাঝে স্থান পেয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। ফায়জা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘এই অস্থিতিশীল সময়কে উৎসবমুখর করার পরিবর্তে উৎসবে প্রতিবাদকে প্রতিপাদ্য করেছে মানাস।’’

আরো পড়ুন:

লোপার ঈদ কালেকশনে যা থাকছে 

ঈদে ফিউশনধর্মী পোশাক এনেছে ‘খাদি বাই নুভিয়া’

কটন ও সিল্ক ফেব্রিকে তৈরি হয়েছে মানাসের ঈদ পোশাক। কটন শাড়ির দরদাম শুরু ৩২০০ টাকা থেকে। একটি কটন শাড়ির দাম ৭০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে সিল্কের শাড়ির দাম একটু বেশি। সিল্কের শাড়িগুলোর দাম ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। কামিজ এবং টপস-এর দরদাম ২৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। 

ঈদের দিন কেমন পোশাক পরবেন এই ডিজাইনার?— এই প্রশ্নের জবাবে ফায়জা আহমেদ বলেন, ‘‘ঈদে মানাসের যে নতুন কালেকশন থাকছে সেখান থেকে যে কথাটাকে আমি আমার মনের কথা মনে করি, প্রতিবাদের ভাষা মনে করি সেই শব্দগুলো লেখা শাড়ি পরবো বলে ভেবেছি।’’

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিয়াম চমক, বুবলীর ঝলক
  • দিবার ঈদ কালেকশনে যা থাকছে
  • দোল পূর্ণিমায় শেষ হলো একদিনের লালন স্মরণোৎসব
  • ক্ষমা করিস না মা, দ্রোহ হয়ে ছড়িয়ে পড়িস
  • তরুণরাই মোড় পরিবর্তনের দিশারি
  • সাংবাদিকদের বেতন বাড়াতে আরেকটি আন্দোলন করা উচিত: প্রেস সচিব
  • তিন দিন কর্মস্থলে আসছেন না এডিসি রাশেদ, ফোন বন্ধ
  • পুলিশের সেই এডিসি রাশেদ তিন দিন ধরে অফিসে আসছেন না
  • পুলিশের সেই এডিসি রাশেদ ‘আত্মগোপনে’
  • ফায়জার ঈদ পোশাকে ‘প্রতিবাদ’