শরীরে অতিরিক্ত পানি দেখা দিলে কী করবেন
Published: 12th, February 2025 GMT
নানা কারণে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে পারে। মানবদেহের টিস্যু বা কলায় অতিরিক্ত পানি জমে ফুলে যাওয়ার নাম ‘ইডেমা’। শরীরের যে কোনো স্থানে পানি জমতে পারে। তবে পা, পেট, হাত ও মুখ– এসব স্থানে ইডেমা বা পানি বেশি দেখা যায়।
যেসব কারণে ইডেমা হয় তা হলো খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ, হার্ট ফেইলিউর, কিডনি রোগ, লিভার সিরোসিস, গর্ভকাল, লিম্ফ বা লসিকা চলাচলে বাধা, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা, কিছু ওষুধ ক্যালসিয়াম ব্লকার, ব্যথানাশক, স্টেরয়েড ইত্যাদি।
কোনো কোনো সময় ইডেমা হার্ট ফেইলিউর, কিডনি রোগ বা লিভার সিরোসিসের মতো জটিল রোগের উপসর্গ বা চিহ্ন হিসেবে দেখা দেয়। হার্ট ফেইলিউর হলে হৃদযন্ত্র সংকোচনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত বের করতে পারে না। ফলে ফুসফুস, পা, পেটে পানি জমে যায়। কিডনি অসুস্থ হলে প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহের অপ্রয়োজনীয় পানি ও লবণ বের করতে পারে না। চোখের চারদিক বা পায়ে পানি জমে ফুলে যায়। লিভার সিরোসিস হলে প্রোটিন উৎপাদন কমে যায়। পানি রক্তনালির ভেতরে না থেকে বাইরে চলে যায়। ওই স্থান ইডেমা হয়ে ফুলে যায়।
উপসর্গ
আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়া, চামড়ার ঔজ্জ্বল্য ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া, আক্রান্ত অঙ্গ ভারী হয়ে চলাচলে সমস্যা দেখা দেওয়া, শ্বাসকষ্টের উদ্রেক হওয়া।
চিকিৎসা
শরীরে অতিরিক্ত পানি জমলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
চিকিৎসার পাশাপাশি যা করতে হবে তা হলো পরিমিতি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে; আলগা লবণ ও লবণাক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে, ধূমপান বর্জন করতে হবে, সাধ্যমতো কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে, তেল-চর্বি-মিষ্টি কম খেতে হবে, উচ্চ রক্তচাপ, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বা ডায়াবেটিস থাকলে ভালোভাবে চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
নিয়মিত চিকিৎসার পাশাপাশি ইডেমা যাতে চরম আকার ধারণ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য কিছু বিষয় মানতে হবে। যেমন– চিকিৎসকের নির্দেশমতো ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ, আলগা লবণ না খাওয়া, যে কোনো সংক্রমণের চিকিৎসা, রক্তশূন্যতা পূরণ, থাইরয়েডের চিকিৎসা, গর্ভকালীন বিশেষ যত্ন, সহনীয় মাত্রায় নিয়মিত ব্যায়াম করা, তেল-চর্বি-মিষ্টি কম খাওয়া, উত্তেজনা প্রশমন করা, ভারী কাজ না করা, ওজন আদর্শ মাত্রায় রাখা এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করা।
লেখক: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ডন
এছাড়াও পড়ুন:
আপনার কিডনি কি সুস্থ আছে
কিডনির রোগ বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বাংলাদেশেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এটি। কিডনির রোগের কারণে শুধু ব্যক্তিগত জীবনই বিপর্যস্ত হয় না; বরং এটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপরও বিশাল অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করে।
কিডনির রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বিশ্বে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনির রোগে আক্রান্ত। এ দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক এ রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হন। আরও ২৪ থেকে ৩০ হাজার রোগী হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে সাময়িক ডায়ালাইসিসের শরণাপন্ন হন। অন্য সব রোগের তুলনায় কিডনি বিকল হওয়ার চিকিৎসাব্যয় বেশি।
কিডনির রোগের কারণ
কিডনির রোগের প্রধান কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, নেফ্রাইটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার, জন্মগত ও বংশগত কিডনির রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও পাথর। প্রায় প্রতিটি কারণই আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার সঙ্গে যুক্ত, যা একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়।
উপসর্গ ও লক্ষণ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৭০ থেকে ৯০ ভাগ নষ্ট হওয়ার আগপর্যন্ত কিডনি বিকল হওয়ার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। তবে যেসব লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে কিডনি আক্রান্ত বলে মনে করতে হবে সেগুলো হলো, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা এর রং পরিবর্তন, পা, গোড়ালি ও চোখের নিচে ফোলা ভাব, অবসাদ ও দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা বমি, বিনা কারণে গা চুলকানো, রাতে বারবার প্রস্রাব, প্রস্রাবে ফেনা বা রক্ত, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘন ঘন প্রস্রাব, মেরুদণ্ডের কোনো এক পাশে বা তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি।
এসব লক্ষণের বাইরে শিশুদের জন্মগত কোনো ত্রুটি আছে কি না, তা পরীক্ষা করানো ও প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা জরুরি।
প্রতিরোধের উপায়
কিডনি একবার সম্পূর্ণ বিকল হলে বেঁচে থাকার উপায় হলো ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন। কিন্তু এর খরচ এত বেশি যে এ দেশের শতকরা ১০ ভাগ রোগীও তা বহন করতে পারেন না। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে এবং আটটি সুস্থ জীবনধারা চর্চার মাধ্যমে প্রায় ৭০ ভাগ পর্যন্ত কিডনি বিকল হওয়া ঠেকানো যায়।
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করতে হলে কারা এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন, তা জানতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বংশে কিডনির রোগ আছে, ধূমপায়ী, মাদকসেবী, অতিরিক্ত ওজন, দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ নিয়েছেন, বারবার কিডনিতে পাথর বা মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ হয়, শিশুকালে কিডনির রোগ থাকলে, এমনকি বয়স ৪০ এর ওপরে—তাঁরা সবাই কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। তাঁদের বছরে দুবার মাত্র দুটি পরীক্ষা করলেই প্রাথমিক অবস্থায় কিডনির রোগ শনাক্ত করা যায়। প্রথমটি হলো প্রস্রাবে আমিষ যায় কি না এবং দ্বিতীয়টি হলো রক্তের ক্রিয়েটিনিন।
সুস্থ জীবনধারা চর্চার আট উপায়
নিয়মিত ব্যায়াম ও সচল থাকা। কমপক্ষে দিনে ৩০ মিনিট এবং সপ্তাহে ৫ দিন জোরে হাঁটা।
পরিমিত সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিয়মিত শাকসবজি ও ফল খাওয়া, চর্বিজাতীয় খাবার ও লবণ কম খাওয়া।
ধূমপান ও মাদক সেবন বর্জন করা।
ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা এবং প্রস্রাবের অ্যালবুমিন পরীক্ষা করা ও রক্তের হিমোগ্লোবিন এ-ওয়ান সি ৭–এর নিচে রাখা।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে (১৩০/৮০-এর নিচে) রাখা। যাঁদের প্রস্রাবে অ্যালবুমিন থাকে, তাঁদের ১২০/৭০–এর নিচে রাখা। সুপ্ত উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না, নিয়মিত পরীক্ষা করা।
ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কিডনির কার্যকারিতা ছয় মাস অন্তর পরীক্ষা করা।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথার ওষুধ সেবন না করা।
পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা, পানিশূন্যতা পরিহার করা।
ডা. এম এ সামাদ, অধ্যাপক, কিডনি রোগ বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল, কলেজ হাসপাতাল