জাতীয়করণ দাবিতে এমপিও শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান
Published: 12th, February 2025 GMT
এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি করার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারা সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, মেডিকেল ভাতা ও উৎসব ভাতা চাচ্ছেন।
বুধবার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট ঘোষিত এই কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত শিক্ষক অবস্থান নিয়েছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া প্রেস ক্লাব ছেড়ে যাবেন না এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তিনি সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে প্রেস ক্লাবের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জোটের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী আবুল বাশার, শাহ আলম, মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের আগেই এমপিও শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতার দাবি বিটিএর
শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ আসন্ন ঈদের আগেই শতভাগ উৎসব ভাতা, পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা মানববন্ধন করছেন। সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আল মামুন জুয়েলের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বিটিএ নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর মাধ্যমে। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে দেওয়া হয় এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল না দেওয়ার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’। আর শিক্ষক হচ্ছেন ‘শিক্ষার মেরুদণ্ড’, সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১২ হাজার ৫০০ প্রারম্ভিক বেতনে শত-শত মাইল দূরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কোন বদলির ব্যবস্থা না থাকা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ইএফটির মাধ্যমে সয়ংক্রিয়ভাবে বেতন প্রদান করা হলেও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গাফলতির কারণে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ৩ থেকে ৪ মাস যাবৎ বেতন ভাতা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
তারা বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া বিগত সরকার কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই সম্পূণ অবৈধভাবে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রতিবাদে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র নেতৃত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করেছিলেন। পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পায়নি। সদ্য বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার ফলে শিক্ষক-কমচারীদের মাঝে হতাশা বিরজ করছে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র পক্ষ থেকে এর সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র অনুমোদিত ১৪৬টি সুপারিশ সম্বলিত শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ থাকলেও বেশ কিছু বছর জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশের কাছাকাছি ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের জোর দাবি জানান।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জাতির বিবেক শিক্ষক হিসেবে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট-২০২৩ পর্যন্ত ২২ দিন লাগাতার অবস্থান ও পরিশেষে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছে। যে কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জসহ অতি বাড়াবাড়ির কারণে বিটিএ’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়াসহ অনেক শিক্ষক-কর্মচারী আহত হন এবং ১ জন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেন। এমনকি আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কারণে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির রোষানলে পড়ে তার নির্দেশে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদকে ষড়যন্ত্র করে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। যা মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত করা স্বত্বেও তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। ডা. দীপু মনির নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও বিরোধিতা স্বত্বেও অবিরাম কর্মসূচি চলাকালীন গত ১ আগস্ট ২০২৩ তৎকালীন সরকারের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর তাদের উত্থাপিত দাবিসমূহ যৌক্তিক বলে বিবেচিত হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে দুটি কমিটি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিশেষ করে আর্থিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ী ভাড়া ও চিকিসা ভাতাসহ বিদ্যমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্যসমূহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় আন্দোলন মূলতবী করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে গেলেও বিগত পতিত সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রতি রক্ষা করেননি।
১০ দফা দাবি হলো—
১. মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্টকরাসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা।
২. আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিসাভাতা প্রদান করা।
৩. ইএফটি সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।
৪. সরকারি স্কুলের ন্যায় বেসরকারি স্কুলের ‘প্রধান শিক্ষক’-এর বেতন স্কেল ৬ষ্ঠ গ্রেডে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ৭ম গ্রেডসহ টাইম স্কেল প্রদান করা।
৫. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সার্বজনীন বদলি প্রথা চালু করা।
৬. সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় পেনশন প্রথা চালু করা এবং চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা প্রদানসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন বন্ধ করা।
৭. শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় ৬৫ বছরে উন্নীতকরা।
৮. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ন্যায় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন জ্বরে আনুপাতিক হারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন করা।
৯. ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় পরিচালনা করা।
১০. স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।