ছাত্রী হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে নির্বিকার চবি প্রশাসন
Published: 12th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘ ৭ বছর পর মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শুধু ছাত্র হলগুলোতে। ছাত্রী হলগুলো রয়েছে বহাল তবিয়তে।
জানা গেছে, ছাত্রী হলগুলোতে খালি থাকা অল্পকিছু আসনে বরাদ্দ দিলেও কার্যত আগের আবাসিকতা নিয়েই হলে থাকছেন ছাত্রীরা। এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হল’ এর নামফলক ভাঙতে যাওয়ার ঘটনায় ছাত্র, শিক্ষক ও সাংবাদিকের উপর ওই হলের কিছু ছাত্রী হামলা করে। এতে অভিযোগটি আরো জোরাল হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রী হলগুলোতে নতুনভাবে আসন বরাদ্দ না দেওয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠনের অনুসারীরা এখনো অবস্থান করছেন। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পতিত সরকারের নামফলক ভাঙতে গেলে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। এসব ছাত্রীরা এখনো হলে প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। মেধার ভিত্তিতে ছাত্রী হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হলে যোগ্যরা আবাসিকতা পাবেন। এজন্য তারা নতুনভাবে আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নিসা বলেন, “৫ আগস্টের পর ছাত্রদের হলগুলোতে আসন বরাদ্ধ দিলেও ছাত্রী হলগুলোতে আসন খালি করা হয়নি। বরাদ্দ দেওয়ার কোন উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। পূর্বে যারা ছিলেন, তারাই স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন। পূর্বপরিচিতির মারফতে অনেকের আসনের প্রয়োজন না থাকলেও বরাদ্দ পেয়েছেন। ফলে যাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক এবং পরিবারের অবস্থানও দূরে, তারা আসন পাচ্ছেন না।”
তিনি আরো বলেন, “অনেক ছাত্রীর পড়াশোনা শেষ হলেও তারা সিট দখল করে আছেন। এতে নবীনরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই ছাত্রী হলেও সঠিক আসন বরাদ্দ জরুরি। ৫ আগস্টের পরপরই যদি ছাত্রী হলের সমস্যা সমাধান হতো, তাহলে এখন শিক্ষক লাঞ্চনার মতো সমস্যাগুলো এড়ানো যেত।”
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী বলেন, “মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরো ভিন্নভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের পূর্বে এমন অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন, যারা রাজনৈতিক দলের প্রভাবে বা রেফারেন্সে সিট পেয়েছিলেন। তবে অফিসের সব নিয়ম মেনে হল প্রশাসন তাদের আবেদনের মাধ্যমে সাময়িক থাকার অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে বৈধতা দেয়। আগের সবাইকে রেখে কিছু সিট খালি থাকা সাপেক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়।”
রেফারেন্সে সিট দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সিট বরাদ্দের পর আমাদের হাউজ টিউটররা ব্লক পরিদর্শনের মাধ্যমে অনেকগুলো খালি সিটের তালিকা করেন। কিন্তু বরাদ্দ না দিয়ে আগের মতই রেফারেন্সে মেয়েদের হলে তুলছেন। ফলে আমরা যারা অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলাম, তাদের আর সুযোগ হচ্ছে না।”
তিনি আরো বলেন, “একদিকে আবাসন সংকট, অন্যদিকে অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আমরা চাই দ্রুত এর সমাধান হোক এবং নিয়ম মেনে সঠিকভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হোক।”
ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গাজী ইমরান বলেন, “দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর ছাত্র হলগুলোতে নতুনভাবে সিট বরাদ্দ দিলেও ছাত্রী হলে অল্পকিছু ছাড়া তেমন বরাদ্দ হয়নি। এমনটা হওয়া ঠিক হয়নি। ছাত্রীদের মধ্যে যারা স্বৈরাচারের দোসর, তারাও এখনো হলে থাকছেন। ফলে শিক্ষক, সাংবাদিকের উপর যে হামলা হয়েছে, তাতে তারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে। ছাত্রী হলেও মেধা, দূরত্ব ও আর্থিক বিবেচনায় সিট বরাদ্দ দেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক ড.
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ট বর দ দ দ ন বর দ দ দ অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
১১ সড়ক খুঁড়ে ঠিকাদারের খবর নেই বছরের পর বছর
চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কয়েক বছর আগে সংস্কার কাজ শুরু হয় যশোর সদরের ১১টি সড়কে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কগুলোর কয়েকটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চার-পাঁচ বছর আগেই। তবে এত বছরেও মাত্র ৫০-৬০ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদাররা। ম্যাকাডাম পদ্ধতিতে ইটের খোয়া ও বালু ফেলে রোলার ব্যবহার করলেও বছরের পর বছর কার্পেটিং (পিচের প্রলেপ) না করায় সড়কগুলোর অনেক স্থানেই আবার খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ইটের গুঁড়া ও বালুতে পথচারী ও সড়কের পাশের বসতবাড়ির লোকজন হচ্ছেন নাস্তানাবুদ। আর বৃষ্টি হলে কাদায় চলা দায় হয়ে পড়ছে।
এলজিইডি অফিস থেকে জানা গেছে, যশোর উপশহরের তৈলকূপ বাজার সড়কের কাশিমপুর ভায়া দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ পান ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৬ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পাঁচ বছরে সংস্কার হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। একই বছরের ৬ আগস্ট সংস্কার শেষ হওয়ার কথা ছিল দেয়াড়া ইউনিয়নের নতুনহাট থেকে দত্তপাড়া পর্যন্ত ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কে। তবে এই কাজও হয়েছে ৬০ শতাংশ। সদর উপজেলারই হুদার মোড় থেকে হাপানিয়া ভায়া ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হানিফ ট্রেডিং অ্যান্ড স্টিল হাউস। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই কাজ শেষের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ।
এ ছাড়া বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সেবানন্দপুরের খেয়াঘাট সড়কের ৪ দশমিক ১১৩ কিলোমিটার ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল, কিসমত-হৈবতপুরে শূন্য দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ২০২১ সালের ২০ আগস্ট, কিসমত হৈবতপুরে ২ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ২০২০ সালের মে মাসে, বলাডাঙ্গা-মথুরাপুর সড়কের ২ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং মালঞ্চী কোল্ডস্টোর থেকে আরবপুর ইউপি সড়ক ২০২১ সালের জুলাইয়ে, শর্শনাদাহ-ভবানীপুর সড়কের এক দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক ২০২৪ সালের জুনে, একই বছরের সেপ্টেম্বরে মনোহরপুর যোগীপাড়া থেকে ওসমানপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক এবং ডিসেম্বরে চুড়ামনকাটি সড়ক সংস্কারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এই সময়ে কাজ শেষ হয়েছে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।
দীর্ঘদিনেও সড়কগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। আরবপুরের ইজিবাইক চালক মহসিন আলী বলেন, রাস্তায় ইট দিয়ে পাঁচ-ছয় বছর ফেলে রাখছে। যেমন ধুলাবালি ওড়ে, আবার গর্তে পড়ে বিভিন্ন সময় গাড়ি উল্টে যায়। একটু বৃষ্টি হলে তো চলার কোনো উপায়ই থাকে না।
সালতা গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, এই রাস্তা দিয়ে ২০-২৫ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। ইটের খোয়া বিছানোর পর চার থেকে পাঁচ বছর ফেলে রাখায় খানাখন্দের পাশাপাশি অনেক স্থানে রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে গেছে।
হৈবতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠিকাদাররা এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। এর পর খোয়া দেয়। কিন্তু কার্পেটিং করার সময় খোঁজ পাওয়া যায় না।
শর্শনাদাহ গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, শর্শনাদাহ-ভবানীপুরের সড়ক দিয়ে কৃষক সবজি-ধান আনা-নেওয়া করে। কয়েক বছর ধরে এই রাস্তা সংস্কারের নামে ফেলে রাখায় কৃষকরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
আনন্দ বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার দাবি করেন, নানা সংকটের কারণে রাস্তার কাজ করতে দেরি হয়েছে। তবে ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন। আরেক ঠিকাদার আব্দুর রউফের দাবি, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। এ জন্য কাজে দেরি হয়েছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করবেন।
যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী চৌধুরী মোহাম্মদ আসিফ রেজা বলেন, কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের অবহেলায় কাজ শেষ হয়নি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখায় জনসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত বাকি কাজ শেষ করা হবে।
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানান, যশোরে অনেক সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ না করে ঠিকাদাররা ফেলে রেখেছেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো কাজগুলো শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদাররা দ্রুত কাজ শুরু না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।