চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘ ৭ বছর পর মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শুধু ছাত্র হলগুলোতে। ছাত্রী হলগুলো রয়েছে বহাল তবিয়তে।

জানা গেছে, ছাত্রী হলগুলোতে খালি থাকা অল্পকিছু আসনে বরাদ্দ দিলেও কার্যত আগের আবাসিকতা নিয়েই হলে থাকছেন ছাত্রীরা। এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হল’ এর নামফলক ভাঙতে যাওয়ার ঘটনায় ছাত্র, শিক্ষক ও সাংবাদিকের উপর ওই হলের কিছু ছাত্রী হামলা করে। এতে অভিযোগটি আরো জোরাল হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রী হলগুলোতে নতুনভাবে আসন বরাদ্দ না দেওয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠনের অনুসারীরা এখনো অবস্থান করছেন। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পতিত সরকারের নামফলক ভাঙতে গেলে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। এসব ছাত্রীরা এখনো হলে প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। মেধার ভিত্তিতে ছাত্রী হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হলে যোগ্যরা আবাসিকতা পাবেন। এজন্য তারা নতুনভাবে আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নিসা বলেন, “৫ আগস্টের পর ছাত্রদের হলগুলোতে আসন বরাদ্ধ দিলেও ছাত্রী হলগুলোতে আসন খালি করা হয়নি। বরাদ্দ দেওয়ার কোন উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। পূর্বে যারা ছিলেন, তারাই স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন। পূর্বপরিচিতির মারফতে অনেকের আসনের প্রয়োজন না থাকলেও বরাদ্দ পেয়েছেন। ফলে যাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক এবং পরিবারের অবস্থানও দূরে, তারা আসন পাচ্ছেন না।” 

তিনি আরো বলেন, “অনেক ছাত্রীর পড়াশোনা শেষ হলেও তারা সিট দখল করে আছেন। এতে নবীনরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই ছাত্রী হলেও সঠিক আসন বরাদ্দ জরুরি। ৫ আগস্টের পরপরই যদি ছাত্রী হলের সমস্যা সমাধান হতো, তাহলে এখন শিক্ষক লাঞ্চনার মতো সমস্যাগুলো এড়ানো যেত।”

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী বলেন, “মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরো ভিন্নভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের পূর্বে এমন অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন, যারা রাজনৈতিক দলের প্রভাবে বা রেফারেন্সে সিট পেয়েছিলেন। তবে অফিসের সব নিয়ম মেনে হল প্রশাসন তাদের আবেদনের মাধ্যমে সাময়িক থাকার অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে বৈধতা দেয়। আগের সবাইকে রেখে কিছু সিট খালি থাকা সাপেক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়।”

রেফারেন্সে সিট দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সিট বরাদ্দের পর আমাদের হাউজ টিউটররা ব্লক পরিদর্শনের মাধ্যমে অনেকগুলো খালি সিটের তালিকা করেন। কিন্তু বরাদ্দ না দিয়ে আগের মতই রেফারেন্সে মেয়েদের হলে তুলছেন। ফলে আমরা যারা অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলাম, তাদের আর সুযোগ হচ্ছে না।”

তিনি আরো বলেন, “একদিকে আবাসন সংকট, অন্যদিকে অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আমরা চাই দ্রুত এর সমাধান হোক এবং নিয়ম মেনে সঠিকভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হোক।”

ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গাজী ইমরান বলেন, “দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর ছাত্র হলগুলোতে নতুনভাবে সিট বরাদ্দ দিলেও ছাত্রী হলে অল্পকিছু ছাড়া তেমন বরাদ্দ হয়নি। এমনটা হওয়া ঠিক হয়নি। ছাত্রীদের মধ্যে যারা স্বৈরাচারের দোসর, তারাও এখনো হলে থাকছেন। ফলে শিক্ষক, সাংবাদিকের উপর যে হামলা হয়েছে, তাতে তারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে। ছাত্রী হলেও মেধা, দূরত্ব ও আর্থিক বিবেচনায় সিট বরাদ্দ দেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক ড.

তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “মানবিক কারণ বিবেচনায় যারা আগে থেকেই হলে অবস্থান করছিল, তাদের অবস্থান ঠিক রেখে খালি থাকা আসনগুলোতে নতুন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যারা আগে থেকেই হলে ছিল, তাদের তো আমরা বের করে দিতে পারি না। ৬ মাস পরপর নতুন করে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ট বর দ দ দ ন বর দ দ দ অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে

অস্ত্র মামলায় ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝালকাঠি জেলার সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলন ওরফে সৈয়দ মিলনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। বিষয়টি নিশ্চিত করছেন ঝালকাঠির পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মাহেব হোসেন।

এর আগে, আজ ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন হাদিসুর রহমান। বিচারক আবেদনটি নাকচ করেন।  

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ায় আ.লীগ-ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মী আটক 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ হাদিসুর রহমানকে প্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। গত ১৮ মার্চ ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-০১) বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম স্বাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রায় ঘোষণার সময় হাদিসুর রহমান পলাতক ছিলেন। 

সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলন ওরফে সৈয়দ মিলন পূর্ব চাঁদকাঠি ইউসুফ আলী খান সড়কের সৈয়দ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টায় ঝালকাঠি শহরের ডাক্তার পট্টি এলাকায় হাদিসুর রহমানের মালিকানাধীন সৈয়দ টাওয়ারের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। সেখানে রান্না ঘরের তাক থেকে একটি দেশি তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ হাদিসুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৬ জানুয়ারি ঝালকাঠি সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন অস্ত্র আইনে হাদিসুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত শেষে ঝালকাঠি থানার ওসি খলিলুর রহমান একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত ৮ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌশলী পিপি মাহেব হোসেন। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মল্লিক নাসির উদ্দীন কবীর।

ঝালকাঠির পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহেব হোসেন বলেন, “আদালত সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিকে সাজাপ্রদান করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছেন। আজ হাদিসুর রহমান আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। বিচারক আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”

আসামি পক্ষের আইনজীবী মল্লিক নাসির উদ্দীন কবীর বলেন, “আসামির অনুপস্থিতিতে মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।”

ঢাকা/অলোক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পর দৃশ্যমান মাভাবিপ্রবি
  • অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে
  • পুরোদমে চলছে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, জিম্বাবুয়ে আসছে মঙ্গলবার