এক তরুণের কণ্ঠে শোনা গেল ‘এই, পানি লাগবে পানি!’ তখনই গুলির শব্দ। তারপর একসময় মঞ্চে হালকা আলোয় দেখা গেল একদল তরুণ-তরুণীকে, গায়ে তাঁদের লাল-সবুজ পতাকা। এরপর ছাত্ররা ‘পলাইয়েছে রে পলাইছে, স্বৈরাচার পলাইয়েছে। পলাইছে রে পলাইছে, খুনি হাসিনা পলাইছে’ বলে বিজয় মিছিল করেন। তখন বিজয়ের আনন্দে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে মাতোয়ারা দর্শকেরা করতালি দিতে থাকেন। মঞ্চে এ দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদেছেন অনেক দর্শকও।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌর শিশুপার্কে গত মঙ্গলবার রাতে মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘রক্ত গন্ধা জুলাই’। নাটকটি লিখেছেন লিটন আব্বাস। এতে অভিনয় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৮ জন শিক্ষার্থী।

নাটক দেখে কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক নারী বলেন, ‘ছেলে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেত। নাওয়া, খাওয়া, ঘুম ছিল না। তখন তো নিজের চোখে আন্দোলন দেখিনি। শুধু টিভিতে খবর দেখতাম। মঞ্চে যখন আবু সাঈদের ওপর নির্মমভাবে গুলি চালাল, তখন নিজের ছেলের কথা মনে হয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেছি।’
‘তারুণ্যের উৎসব’ উপলক্ষে পৌর শিশুপার্কে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসব ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমি। এ নাট্যোৎসব চলবে আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত।

অভিনয় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৮ জন শিক্ষার্থী.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ স্থবিরের ঘটনায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্বেগ

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার সংগঠনটির সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজাহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য স্থবির হয়ে পড়েছে। যে কারণে বিচারপ্রার্থী মানুষ অবর্ণনীয় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অত্যন্ত ধৈর্য ও সতর্কতার সঙ্গে এত দিন পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে যাচ্ছে, তা সারা দেশের বিচারকদের মনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ জন্ম দিয়েছে।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আরও বলেছে, ঘটনার সূত্রপাত ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কয়েকজন আইনজীবী ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের জামিন শুনানি করেন, যা বিচারক গুণাগুণের ভিত্তিতে শুনানি নিয়ে নামঞ্জুর করেন। আদালতের আইনানুগ আদেশকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির কতিপয় আইনজীবীর ইন্ধন ও প্রত্যক্ষ মদদে কিছু আইনজীবী বিগত কয়েক দিনে যে আচরণ প্রদর্শন করেছেন, যা স্পষ্টত অসদাচরণ, বিচারকাজে বাধা সৃষ্টি, বিচারকের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ—এগুলো বিচারকের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি আরও বলেছে, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন শুরু থেকে ঘটনার শান্তিপূর্ণ ও স্থানীয়ভাবে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সুরাহার চেষ্টা করছেন। এত সব প্রচেষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতি বিচারকের অপসারণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল বর্জনের ডাক দিয়েছে। আদালতে বিচারক নিয়মিত বসবেন, এটা স্বাভাবিক, আইনজীবীরা আদালত বর্জন করতেই পারেন। কিন্তু বিচারককে আদালত থেকে নেমে যাওয়ার জন্য চাপ বা ভয়ভীতি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নূরে আলমকে প্রত্যাহারের দাবিতে এই ট্রাইব্যুনাল বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা আইনজীবী সমিতি। ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নূরে আলমের বিরুদ্ধে সাধারণ আইনজীবীদের অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকসুলভ আচরণ করছেন না। জামিন আবেদন নাকচের বিষয় নিয়ে সাধারণ আইনজীবীরা কোনোভাবে সংক্ষুব্ধ নন। কারণ, জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। মূলত বিচারকসুলভ আচরণ না করার কারণে সাধারণ আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা আইনজীবী সমিতি সাইবার ট্রাইব্যুনাল বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ