‘রক্ত গন্ধা জু্লাই’ দেখে কেঁদেছেন দর্শক
Published: 12th, February 2025 GMT
এক তরুণের কণ্ঠে শোনা গেল ‘এই, পানি লাগবে পানি!’ তখনই গুলির শব্দ। তারপর একসময় মঞ্চে হালকা আলোয় দেখা গেল একদল তরুণ-তরুণীকে, গায়ে তাঁদের লাল-সবুজ পতাকা। এরপর ছাত্ররা ‘পলাইয়েছে রে পলাইছে, স্বৈরাচার পলাইয়েছে। পলাইছে রে পলাইছে, খুনি হাসিনা পলাইছে’ বলে বিজয় মিছিল করেন। তখন বিজয়ের আনন্দে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে মাতোয়ারা দর্শকেরা করতালি দিতে থাকেন। মঞ্চে এ দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদেছেন অনেক দর্শকও।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌর শিশুপার্কে গত মঙ্গলবার রাতে মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘রক্ত গন্ধা জুলাই’। নাটকটি লিখেছেন লিটন আব্বাস। এতে অভিনয় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৮ জন শিক্ষার্থী।
নাটক দেখে কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক নারী বলেন, ‘ছেলে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেত। নাওয়া, খাওয়া, ঘুম ছিল না। তখন তো নিজের চোখে আন্দোলন দেখিনি। শুধু টিভিতে খবর দেখতাম। মঞ্চে যখন আবু সাঈদের ওপর নির্মমভাবে গুলি চালাল, তখন নিজের ছেলের কথা মনে হয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেছি।’
‘তারুণ্যের উৎসব’ উপলক্ষে পৌর শিশুপার্কে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসব ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমি। এ নাট্যোৎসব চলবে আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অসুস্থ হওয়ার পরও খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের কাছে মাথা নত করেননি: শামা ওবায়েদ
কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগ সরকার বিষ প্রয়োগ করেছিল বলে শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন ওনাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলেও আমরা শুনতে পেয়েছি। সেই অবস্থায় উনি আরও অসুস্থ হয়েছেন। সেই অসুস্থ হওয়ার পরেও উনি স্বৈরাচারের কাছে মাথা নত করেননি।’
ফরিদপুরে ইফতার পার্টি–পূর্ব এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন শামা ওবায়েদ। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে আজ রোববার ফরিদপুর শহরের অম্বিকা ময়দানে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আফজল হোসেন প্রমুখ।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমাদের ১৫ বছর, ১৭ বছরের যে যুদ্ধ, যে কষ্ট, যে অত্যাচার, যে অনাচার, যে ত্যাগ, যে তিতিক্ষা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ যাঁরা করেছেন, আমি বলব গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। ওনাকে একটি মিথ্যা মামলায় সম্পূর্ণ বিনা দোষে ছয় বছর জেল খাটতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওনাকে (খালেদা জিয়া) ও ওনার পরিবারকে বারবার বলা হয়েছিল যে উনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চান, তাহলে ওনাকে জামিন দেওয়া হবে। কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।’
শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি বলে উল্লেখ করে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মধ্যে ১৫ বছর যাঁরা ছিলেন না, যাঁদের আমরা দেখিনি, যাঁরা কখনো কোনো আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন না, তাঁদের ঘাড়ের ওপর সওয়ার হয়ে আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে চাচ্ছে। আমাদের সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। সব রকম ষড়যন্ত্রের ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ এখন ‘সবচেয়ে বড় বিপদ অতিক্রম করছে’ মন্তব্য করে বিএনপির নেত্রী শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সবচেয়ে ক্রান্তিকাল আমরা পার করছি। এখনো আমরা ভোটাধিকার পাইনি। আমরা এখনো একটা ভোট দিতে পারিনি। নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের এই দাবি থাকুক, হাসিনামুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আর কোনো নারী নির্যাতন চাই না। আর কোনো অত্যাচার ও অনাচার চাই না। আর কোনো ডাকাতি চাই না। আর কোনো খুন–গুম দেখতে চাই না।