কাউন্সিলে কর্মী শিক্ষার্থীদের ভোটের মাধ্যমে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবার বেলা ১১টা থেকে জেলা ছাত্রদলের আয়োজনে কলেজটির মুক্তমঞ্চে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

ভোট গ্রহণ শেষে বিকেল চারটার দিকে ফল ঘোষণা করা হয়। এ সময় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকারসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কলেজ ছাত্রদলের কর্মী শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ২৩৯ ভোট পেয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন জামির আহম্মেদ (মসনদ)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নয়ন পেয়েছেন ১১৯ ভোট। ১৫৫ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শিমুল হোসেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সজীব পেয়েছেন ১০৫ ভোট।

কাউন্সিলে সভাপতি পদে জামির আহম্মেদ, নয়ন আলী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শিমুল হাসান, সজীব আলী ও সামি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেয়ে ও ছেলেশিক্ষার্থীরা আলাদা বুথে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ভোটারসংখ্যা ছিল ৪৬২।

কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রহমান। এ সময় কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহম্মেদ ও মোকছেদুল মোমিন উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক রাজনীতির শুভসূচনা হয়েছে। সাড়ে ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক সরকার ছিল। আমরা চাইলেও কাউন্সিল করতে পারিনি। পছন্দমতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি।’

নাছির উদ্দীন আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনা সরকারের দোসররা প্রতিটি ক্যাম্পাসে নিকৃষ্টতম মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিল। তার বিপরীতে এখন একটি ভালো সময় উপনীত হয়েছে। আমরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের ৩৮টি সাংগঠনিক টিম প্রথম পর্বের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু করেছে। যেটি দুই দিন ধরে সারা দেশে চলছে। এই পর্বে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ প্রথম।’

দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোট নিয়ে বেশ উৎসাহ দেখা গেল। মুক্তমঞ্চের সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের ভোটার নম্বর খুঁজে পেতে সহযোগিতা করছেন প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা। সবাই নতুন ভোটার এবং প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় বেশ আনন্দিত।

ভোটার শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের জীবনের প্রথম ভোট এটা। এর আগে কখনো তাঁরা ভোট দেননি। আগে দেখেছেন, নেতার পেছনে একজন দৌড়াদোড়ি করছেন, তখন তিনি পদ পেয়ে যাচ্ছেন। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছেন।

সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ বছর বয়স হলেও কোথাও ভোট দিতে পারিনি। জাতীয় নির্বাচনে তো ভোট দেওয়ার চান্সই নেই। কারণ, স্বৈরাচার হাসিনার জন্য ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্রে গেলে ভোট হয়ে গেছে কিংবা সামনে ভোট দিতে হবে বলে। তাই নিজের মতো করে ভোট দেওয়ার অপশন পাইনি। আমার নিজের কলেজে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছি। এটা আমার কাছে ভালো লাগছে।’

কাউন্সিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রহমান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রশাসনের কাঁধে পা রেখে ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম, যাদের জন্ম ২০০০ সালের পর, তারা কখনো ভোট দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতির জায়গা ভোটাধিকার। সারা বাংলাদেশের ক্যাম্পাসে নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করার মাধ্যমে তাঁদের দেখাতে চাইছেন যে ছাত্রদল গণতন্ত্র ও সঠিক নির্বাচনে বিশ্বাস করে।

এই ভোটের নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক হাসিবুর শহীদ বলেন, অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। যাঁরা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁরা এখানকার নিয়মিত ছাত্র।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বছরের প্রথম দিনেই সয়াবিন তেল কিনতে হবে ১৪ টাকা বেশিতে      

বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে আনন্দ নিয়ে ঘরে ফেরা হবে না সাধারণ মানুষের। বাজারে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়েই হোঁচট খেতে হবে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রোববার (১৩ এপ্রিল) থেকেই সয়াবিন তেলের বর্ধিত দাম কার্যকর হয়েছে।

রোববার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। 

এর আগে ভোজ্যতেল দাম বড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা সভা হয়। তবে, সে সময় দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। সরকার এবং ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দফায় দফায় দর কষাকষির পর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বর্ধিত নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে হবে ১৮৯ টাকায়, যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা।

নতুন ঘোষণা অনুসারে, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা ছিল ৮৫২ টাকা। বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা আগে ছিল ১৫৭ টাকা। 

এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটার প্রতি দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা।

ঈদুল ফিতরের আগে গত ২৭ মার্চ নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন মিলমালিকরা। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়াতে চেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন লিটারে ১৩ টাকা। ভোজ্যতেলের কর-সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরদিন ১ এপ্রিল থেকে এ দর কার্যকরের ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তারা জানান, কর সুবিধা বাতিল ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তারা দাম বাড়াতে চান। ওই দিন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল সংগঠনটি। এর পর থেকেই সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েক দফা সভা হয় এবং দর কষাকষি চলতে থাকে।

গত রমজানের আগে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্যতেলের ওপর যে শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছিল, তার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হওয়ায় দাম বাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ঈদের ছুটি শেষে গত সপ্তাহের শুরু থেকে দফায় দফায় আলোচনা হয়। তখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকার বেশি হবে নাকি কম, তা নিয়ে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা চলে। গত সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এ সভাগুলো হয়। সভায় দর কষাকষি হলেও তখন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, কারখানার মালিকদের দাবির আগেই ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কর ছাড়ের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তবে, এনবিআর এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ফলে নববর্ষের দিন বাজার করতে গিয়ে ক্রেতাদেও হোঁচট খেতে হবে সয়াবিন তেলের নতুন দাম শুনে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ