গাজার মানুষকে সম্মান দেখান, ট্রাম্পকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ
Published: 12th, February 2025 GMT
যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার শঙ্কার মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গাজার মানুষের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ‘গাজা দখল’ ও ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়ার হুমকির মধ্যে তিনি এ আহ্বান জানালেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অ্যালিসি প্যালেসে সিএনএনের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, আপনি ২০ লাখ মানুষকে বলতে পারেন না– ‘চলো, তুমি যাই মনে করো না কেন, তোমাকে যেতে হবে।’ এটা কোনো আবাসন ব্যবসাসংশ্লিষ্ট বিষয় নয়, এটা রাজনৈতিক বিষয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সংক্রান্ত বয়ানের একজন সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও গাজা ও লেবাননে হামলার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে আসছেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। গত অক্টোবরে ফ্রান্স ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করে।
সক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, ‘আমি সব সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে আসছি। এখনও আমি এটা মনে করি না, এত বেশি বেসামরিক লোককে লক্ষ্যবস্তু করে রক্তক্ষয়ী অভিযান চালানো সঠিক।’
ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, গাজার দ্রুত পুনর্গঠনের মানে এই নয় যে, আপনি সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করবেন।
সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসর ও জর্ডানকে গাজার বাসিন্দাদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি গাজাকে সংস্কার করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর পরিকল্পনার কথা জানান। বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাঁর বক্তব্যে জাতিগত নিধনের উস্কানি রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা গাজা ছাড়ার কথা অস্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে হামাস ও তাদের সমর্থক সংগঠনগুলো প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
আলজাজিরা জানায়, আগামী শনিবারের মধ্যে গাজায় থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি না দিলে আবারও যুদ্ধ শুরুর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এর আগে একই কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে এক ভিডিওতে নেতানিয়াহু বলেন, যদি হামাস জিম্মিদের শনিবারের মধ্যে মুক্তি না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি বাতিল হবে এবং হামাসকে পরাজিত করা পর্যন্ত আইডিএফ লড়াই চালিয়ে যাবে। নেতানিয়াহুর হুমকিকে কেন্দ্র করে নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কায় গাজায় চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।
এ অবস্থায় প্রতিরোধের বার্তা দিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুতি। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করা হলে ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য তারা প্রস্তুত। সংগঠনটির নেতা আবদেল মালিক আল হুতি এক টেলিভিশন ভাষণে মঙ্গলবার বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে যে কোনো সময় সামরিক হস্তক্ষেপে তারা প্রস্তুত আছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের হাত বন্দুকের ট্রিগারেই রয়েছে।’
বাদশাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক
মঙ্গলবার জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এ সময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য সর্বোচ্চটুকু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানকার দুই হাজার অসুস্থ শিশুকে তিনি নিজ দেশে নিয়ে চিকিৎসা দেবেন।
পরিকল্পনা হাস্যকর, বলছে উত্তর কোরিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের অন্য জায়গায় সরানোর পরিকল্পনাকে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। গতকাল বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ নিন্দা জানানো হয়। কেসিএনএ ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে লিখেছে, নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য ফিলিস্তিনিদের মনে যে ক্ষীণ আশা বেঁচে ছিল, তা ওই প্রস্তাবের কারণে ভেঙে যাচ্ছে।
পুনর্গঠনে প্রয়োজন ৫৩ বিলিয়ন ডলার
জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থের হিসাব করা হয়েছে। এতে দরকার হবে ৫৩ দশমিক ১৪২ বিলিয়ন ডলার। প্রথম তিন বছরে প্রায় ২০ দশমিক ৫৬৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ধর্ষণ’ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের মন্তব্যের নিন্দা প্রধান উপদেষ্টার
‘ধর্ষণ’ শব্দ পরিহার নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর করা মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। রবিবার (১৬ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষণ শব্দটি পরিহার নিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর করা মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। আট বছর বয়সী বা ৮০ বছর বয়সী, যার সঙ্গেই হোক না কেন—ধর্ষণ ধর্ষণই। এমন জঘন্য অপরাধকে অবশ্যই যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সহিংসতা সহ্য করবে না অন্তর্বর্তী সরকার।
উল্লেখ্য, শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সংবাদকর্মীদের সংবাদ প্রতিবেদনে ‘ধর্ষণ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘নারী নির্যাতন’ শব্দটি ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ঢাকা/হাসান/রাজীব