যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার শঙ্কার মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গাজার মানুষের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ‘গাজা দখল’ ও ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়ার হুমকির মধ্যে তিনি এ আহ্বান জানালেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অ্যালিসি প্যালেসে সিএনএনের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, আপনি ২০ লাখ মানুষকে বলতে পারেন না– ‘চলো, তুমি যাই মনে করো না কেন, তোমাকে যেতে হবে।’ এটা কোনো আবাসন ব্যবসাসংশ্লিষ্ট বিষয় নয়, এটা রাজনৈতিক বিষয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সংক্রান্ত বয়ানের একজন সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও গাজা ও লেবাননে হামলার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে আসছেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। গত অক্টোবরে ফ্রান্স ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করে। 

সক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, ‘আমি সব সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে আসছি। এখনও আমি এটা মনে করি না, এত বেশি বেসামরিক লোককে লক্ষ্যবস্তু করে রক্তক্ষয়ী অভিযান চালানো সঠিক।’

ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, গাজার দ্রুত পুনর্গঠনের মানে এই নয় যে, আপনি সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করবেন। 

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসর ও জর্ডানকে গাজার বাসিন্দাদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি গাজাকে সংস্কার করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর পরিকল্পনার কথা জানান। বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাঁর বক্তব্যে জাতিগত নিধনের উস্কানি রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা গাজা ছাড়ার কথা অস্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে হামাস ও তাদের সমর্থক সংগঠনগুলো প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

আলজাজিরা জানায়, আগামী শনিবারের মধ্যে গাজায় থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি না দিলে আবারও যুদ্ধ শুরুর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এর আগে একই কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে এক ভিডিওতে নেতানিয়াহু বলেন, যদি হামাস জিম্মিদের শনিবারের মধ্যে মুক্তি না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি বাতিল হবে এবং হামাসকে পরাজিত করা পর্যন্ত আইডিএফ লড়াই চালিয়ে যাবে। নেতানিয়াহুর হুমকিকে কেন্দ্র করে নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কায় গাজায় চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।

এ অবস্থায় প্রতিরোধের বার্তা দিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুতি। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করা হলে ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য তারা প্রস্তুত। সংগঠনটির নেতা আবদেল মালিক আল হুতি এক টেলিভিশন ভাষণে মঙ্গলবার বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে যে কোনো সময় সামরিক হস্তক্ষেপে তারা প্রস্তুত আছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের হাত বন্দুকের ট্রিগারেই রয়েছে।’  

বাদশাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক

মঙ্গলবার জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এ সময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য সর্বোচ্চটুকু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানকার দুই হাজার অসুস্থ শিশুকে তিনি নিজ দেশে নিয়ে চিকিৎসা দেবেন। 

পরিকল্পনা হাস্যকর, বলছে উত্তর কোরিয়া 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের অন্য জায়গায় সরানোর পরিকল্পনাকে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। গতকাল বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ নিন্দা জানানো হয়। কেসিএনএ ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে লিখেছে, নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য ফিলিস্তিনিদের মনে যে ক্ষীণ আশা বেঁচে ছিল, তা ওই প্রস্তাবের কারণে ভেঙে যাচ্ছে। 

পুনর্গঠনে প্রয়োজন ৫৩ বিলিয়ন ডলার

জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থের হিসাব করা হয়েছে। এতে দরকার হবে ৫৩ দশমিক ১৪২ বিলিয়ন ডলার। প্রথম তিন বছরে প্রায় ২০ দশমিক ৫৬৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে ৪৩ দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বের ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এ তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন। চূড়ান্ত প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার খসড়া প্রস্তাবে আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইয়েমেন, বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান, তুর্কমেনিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, চাদ, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডমিনিকা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালাউই, মালি, মৌরিতানিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে, ভানুয়াতু ও জিম্বাবুয়ের নাম রয়েছে।  

এসব দেশের মধ্যে ১১টি দেশকে ‘লাল’ তালিকায় অর্থাৎ সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ আওতায় আনার পরিকল্পনা হচ্ছে। এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে এসব দেশের নাগরিকেরা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না। দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেন।

১০টি দেশকে ‘কমলা’ তালিকায় রাখা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে। এই দেশগুলো হলো- বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান ও তুর্কমেনিস্তান। কমলা তালিকার অর্থ হলো, এসব দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকবে, তবে ভিসা একেবারে বন্ধ থাকবে না। এছাড়া ২২টি দেশকে ‘হলুদ’ তালিকায় রাখা হয়েছে। দেশগুলো হলো- অ্যান্ড বারবুডা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, চাদ, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডমিনিকা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালাউই, মালি, মৌরিতানিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে, ভানুয়াতু ও জিম্বাবুয়ে।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নতুন করে আরোপের ঘোষণা দেন। যদিও প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রথমে দুটি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে চাইলে আদালত তাতে বাধা দেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট একটি পুনর্লিখিত নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুমতি দিয়েছিল। আটটি দেশের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছয়টি দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। নতুন এ নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তুলনায় আরও বেশি বিস্তৃত হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ