কুমিল্লা নগরের পুলিশ লাইনস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণসহ হামলার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের অধিকাংশই আ ক ম বাহাউদ্দিনের অনুসারী। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও মামলায় আসামির তালিকায় আইনজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন।

বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো.

ইনজামুল হক বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন। ইনজামুল কুমিল্লা শহরতলির ডুমুরিয়া চাঁনপুর এলাকার মো. আমির হোসেনের ছেলে। সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আ ক ম বাহাউদ্দিন কুমিল্লা-৬ (সিটি করপোরেশন-আদর্শ সদর-সেনানিবাস) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস ভূঁইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁঞা, সাবেক সভাপতি আবদুল মমিন, সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জহিরুল ইসলাম, সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল-আমিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

মামলায় সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাবেক এমপি বাহারসহ কয়েকজনের হুকুমে আসামিরা গত বছরের ৩ আগস্ট নগরের পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের সড়কে আগ্নেয়াস্ত্রসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান। তাঁরা ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণসহ এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে সাক্ষীরাসহ ২৫ থেকে ৩০ জন বুক, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক পিটিয়ে অনেকের হাড় ভাঙাসহ জখম করেন। আন্দোলনে ছাত্র-জনতার চিৎকারে এলাকাবাসীসহ কয়েকজন সাক্ষী ঘটনাস্থলে এলে নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে চাইলে আসামিরা বাধা দেন।

বাদী মো. ইনজামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছিল। এর ভিডিও ও স্থিরচিত্র তাঁদের কাছে আছে। সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সবাই ঘটনায় জড়িত। অবিলম্বে তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মহানগর শাখার সংগঠক বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লায় যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে পুলিশ লাইনস এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণসহ হামলার ঘটনাটি অনেক বেশি আলোচিত। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’

তবে মামলায় আইনজীবীদের আসামি করার বিষয়টি দুঃখজনক মন্তব্য করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়টি জেনেছি। এভাবে আইনজীবীদের নামে মামলা করার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা দাবি জানাচ্ছি, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, মামলাটি আজ বেলা আড়াইটার দিকে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলার বেশির ভাগ আসামি ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। পাশাপাশি মামলাটি ভালোভাবে তদন্ত করে দেখা হবে।

আরও পড়ুনকুমিল্লায় সাবেক এমপি বাহাউদ্দীনসহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র ওপর র রহম ন র ব ষয়ট ল ইসল ম আইনজ ব উপজ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফের ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পথচারী মো. মাসুদুর রহমান জনি হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। 

আজ সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইশতিয়াক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। 
এর আগে তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক সিকদার মহিতুল আলম। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে বলেন, উনাকে এ পর্যন্ত ৭৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে উনি যা যা বলার সব বলেছেন। আর রিমান্ডের প্রয়োজন নেই। শুনানি শেষে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

গত ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কয়েক দফা রিমান্ড শেষে পুনরায় রিমান্ডে পাঠান আদালত। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট দুপুরে মো. মাসুদুর রহমান জনি (৪০) কর্মস্থল থেকে নিজ বাড়ি ডেমরায় ফেরার পথে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন চৌরাস্তা থানার সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুলিতে আহত হন। পরে তাকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১২ আগস্ট ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে হামলার অভিযোগে বিএনপিপন্থী ১১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা
  • সাবেক এমপি বাহারসহ ২৬১ জনের নামে মামলা
  • ‘আমি অসুস্থ, রিমান্ডে দিয়েন না’, আদালতে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার
  • বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টিকে নিবন্ধন দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের
  • মাইনরিটি জনতা পার্টিকে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
  • ফার্মগেট থেকে সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ খান গ্রেফতার
  • শিক্ষক ছবিরুলকে একাডেমিক–প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে স্থগিত
  • ভয় দেখিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে জয় করতে হয়
  • ফের ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন