গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার জিয়াউল আহসান, তদন্ত প্রতিবেদন ২০ এপ্রিল
Published: 12th, February 2025 GMT
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে করা মামলায় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ২০ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো.
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে আজ প্রসিকিউশনের দাখিল করা অপর একটি আবেদন মঞ্জুর করে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় গণহত্যার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি করা হয়।
আরও পড়ুনদেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ জিয়াউল আহসানের২৩ জানুয়ারি ২০২৫৬ জানুয়ারি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের গ্রেপ্তার করে ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকাত অপবাদ দিয়ে তিন জেলেকে মারধর
হাতিয়ায় তিন জেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে জাহাজমারা ইউনিয়নের কাদেরিয়া স্লুইসগেট এলাকার সরকারি ব্যারাক হাউসে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীদের স্বজন জানিয়েছেন, কারামুক্ত স্থানীয় এক বিএনপি নেতার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জের ধরে অপর এক বিএনপি নেতার লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা নির্যাতনের পর তিনজনকে ডাকাত সাজিয়ে পুলিশে তুলে দেয়।
হাতিয়া থানার ওসি জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে অতীতে অপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বুধবার তিনজনকেই স্বজনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী জেলেরা হলেন– চরকাদেরিয়া গ্রামের আলী আজ্জমের ছেলে ফখরুউদ্দিন (২৮), মো. দিলুর ছেলে শাহারাজ (২৭) ও কামাল উদ্দিনের ছেলে মো. কাউসার (২৭)। তারা তিনজনই পেশায় জেলে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাদের ভাষ্য, দু-এক দিন আগে দীর্ঘ কারাভোগ শেষে এলাকায় ফেরেন জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাসান মাঝি। মঙ্গলবার অন্য কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করতে যান ফখরুদ্দিন, শাহারাজ ও কাউসার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের স্বজন জানান, জসিম উদ্দিনের লোকজন মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ফখরুদ্দিন, শাহারাজ ও কাউসারকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। কাদেরিয়া স্লুইসগেট এলাকার সরকারি ব্যারাক হাউসে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে তাদের বেধড়ক পেটায় জসিমের লোকজন। পরে তাদের কাছ থেকে জোর করে ডাকাত হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। পরে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয় মারধরকারীরা। এ সময় তাদের রক্ষায় এগিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদেরও লাঞ্ছিত করা হয়।
জসিম উদ্দিনের লোকজন ঘণ্টাখানেক তিনজনকে পেটানোর পর হাতিয়া থানায় সংবাদ দেন। পুলিশ এলে তাদের সঙ্গে একটি অস্ত্র সদৃশ বস্তু দিয়ে ডাকাত হিসেবে ধরিয়ে দেয়। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাসান মাঝি বলেন, ‘এখানে সরকারি ব্যারাকের অনেক মানুষ আমাকে দেখতে এসেছেন। এরই মধ্যে তিনজনকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।’ এ ঘটনায় তিনি নিজ দলের প্রতিপক্ষ জসিম উদ্দিনকে দায়ী করেন।
বুধবার থানার প্রধান ফটকে দেখা হয় জেলে কাউসারের মা জাহেরা খাতুনের সঙ্গে। সাংবাদিক দেখে তিনি হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন। জাহেরা বলেন, তাঁর ছেলেসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো অভিযোগ কখনও আসেনি। তারা সবসময় নদীতে থাকেন। রাতে তাদের ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় বারবার কয়েকজনের পায়ে ধরেও ছেলেকে তিনি পিটুনির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিনের মোবাইল ফোন নম্বরে দফায় দফায় কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানিয়েছে, তিনি অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন। কিন্তু তাঁর লোকজন এলাকায় রয়েছে।
জাহাজমারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, থানায় যে তিনজনকে সোপর্দ করা হয়েছে, তারা সরাসরি ডাকাতিতে জড়িত বলে কখনও শোনেননি। আগের সরকারের আমলে অপকর্মে জড়িত থাকতে পারে।
হাতিয়া থানার ওসি এ কে এম আজমল হুদা বলেন, ডাকাত হিসেবে থানায় সোপর্দ করা তিনজনের বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। তাদের অতীতের রেকর্ডে ডাকাতি বা অপরাধের প্রমাণ এখনও মেলেনি। তাদের কাছে রকেট লাঞ্চার হিসেবে যে বস্তুটি পাওয়া গেছে, সেটি সমুদ্রে ব্যবহৃত প্যারাস্যুট সিগনাল বাতি। এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তিনজনকেই বুধবার স্বজনের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে জাহাজমারা ফাঁড়ির ইনচার্জকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।