গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ জাহিদুজ্জামানের মাকে মারধর, থানায় অভিযোগ
Published: 12th, February 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থী জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামানকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধর ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার বিকেলে টঙ্গীবাজার খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারধরের অভিযোগ তাঁরই (জাহিদুজ্জামান) খালা নাজমা পারভীনের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে বিলকিস জামান গত সোমবার টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁর।
জাহিদুজ্জামান তানভীন ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গত ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি আইইউটির মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২২ সালে পড়াশোনা শেষে নিজেই ড্রোন তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্টস’ (পিপিলিকা) গড়ে তোলেন। তাঁর মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান থাকেন উত্তরার কাঁচাবাজার এলাকায়। বড় বোন জেসিকা জামান স্বামীর সঙ্গে থাকেন আমেরিকায়।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে টঙ্গীর জহির মার্কেট এলাকায় তাঁর (বিলকিস জামান) ছোট বোন সালমা আক্তার মনির বাসায় বেড়াতে যান তিনি। বেড়ানো শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টঙ্গীবাজার খেয়াঘাট পার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। সেখানে হঠাৎ তাঁর পথ আটকে দাঁড়ান তাঁর আরেক ছোট বোন নাজমা পারভীন ও তাঁর স্বামী অলিউল্লাহ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি বাধা দিলে নাজমা ও তাঁর স্বামী তাঁকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি চিৎকার শুরু করলে আশাপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে তিনি উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সোমবার রাতে টঙ্গী পূর্ব থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
বিলকিস জামান জানান, তাঁরা মোট ছয় বোন এক ভাই। তাঁর বাবার বাসা টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায়। সেখানে একটি চারতলা বাড়ি আছে তাঁদের। এর মধ্যে ছোট বোন নাজমা বাড়িটির অর্ধেক মালিক দাবি করে তাঁর (বিলকিস জামান) ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া অংশ লিখে দিতে বলেন। বিলকিস কথামতো নাজমাকে তাঁর অংশ লিখে দেন। এরপর নাজমা ওয়ারিশ লিখে দিতে বিলকসকে অন্য বোনদের বলতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় নাজমা বিলকিসের ওপর ক্ষিপ্ত হন। নাজমা বিভিন্নভাবে বিলকিস ও অন্য বোনদের বিরক্ত করেন। পরে এসব নিয়ে বিলকিস ও তাঁর অন্য বোনেরা গত ৩০ ডিসেম্বর নাজমার বিরুদ্ধে টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর জেরে শনিবার টঙ্গীবাজার খেয়াঘাটে একা পেয়ে নাজমা ও তাঁর স্বামী তাঁকে হয়রানি করেন।
বিলকিস জামান বলেন, ‘আমি কেন আমার অন্য বোনদের ওয়ারিশ লিখে দিতে বলি না, এটাই ছিল আমার অপরাধ। এ কারণে নাজমা আমার আপন বোন হয়েও রাস্তায় একা পেয়ে যা–তা ব্যবহার করেছে। পরে বাধ্য হয়ে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশ আসামিদের ধরতে বাসায় গিয়েও আবার ছেড়ে দিছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নাজমা পারভীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কথা বলতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উৎপলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তের কাজ চলছে। এসব বিষয়ে সঠিক তদন্ত ছাড়া কাউকে ধরা যায় না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ য় র কর র কর ন এল ক য় তদন ত ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী
পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।
তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’ নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।
তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।
নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।
শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।
পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।
শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।