জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থী জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামানকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধর ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার বিকেলে টঙ্গীবাজার খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারধরের অভিযোগ তাঁরই (জাহিদুজ্জামান) খালা নাজমা পারভীনের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে বিলকিস জামান গত সোমবার টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁর।

জাহিদুজ্জামান তানভীন ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গত ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি আইইউটির মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২২ সালে পড়াশোনা শেষে নিজেই ড্রোন তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্টস’ (পিপিলিকা) গড়ে তোলেন। তাঁর মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান থাকেন উত্তরার কাঁচাবাজার এলাকায়। বড় বোন জেসিকা জামান স্বামীর সঙ্গে থাকেন আমেরিকায়।

থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে টঙ্গীর জহির মার্কেট এলাকায় তাঁর (বিলকিস জামান) ছোট বোন সালমা আক্তার মনির বাসায় বেড়াতে যান তিনি। বেড়ানো শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টঙ্গীবাজার খেয়াঘাট পার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। সেখানে হঠাৎ তাঁর পথ আটকে দাঁড়ান তাঁর আরেক ছোট বোন নাজমা পারভীন ও তাঁর স্বামী অলিউল্লাহ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি বাধা দিলে নাজমা ও তাঁর স্বামী তাঁকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি চিৎকার শুরু করলে আশাপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে তিনি উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সোমবার রাতে টঙ্গী পূর্ব থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

বিলকিস জামান জানান, তাঁরা মোট ছয় বোন এক ভাই। তাঁর বাবার বাসা টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায়। সেখানে একটি চারতলা বাড়ি আছে তাঁদের। এর মধ্যে ছোট বোন নাজমা বাড়িটির অর্ধেক মালিক দাবি করে তাঁর (বিলকিস জামান) ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া অংশ লিখে দিতে বলেন। বিলকিস কথামতো নাজমাকে তাঁর অংশ লিখে দেন। এরপর নাজমা ওয়ারিশ লিখে দিতে বিলকসকে অন্য বোনদের বলতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় নাজমা বিলকিসের ওপর ক্ষিপ্ত হন। নাজমা বিভিন্নভাবে বিলকিস ও অন্য বোনদের বিরক্ত করেন। পরে এসব নিয়ে বিলকিস ও তাঁর অন্য বোনেরা গত ৩০ ডিসেম্বর নাজমার বিরুদ্ধে টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর জেরে শনিবার টঙ্গীবাজার খেয়াঘাটে একা পেয়ে নাজমা ও তাঁর স্বামী তাঁকে হয়রানি করেন।

বিলকিস জামান বলেন, ‘আমি কেন আমার অন্য বোনদের ওয়ারিশ লিখে দিতে বলি না, এটাই ছিল আমার অপরাধ। এ কারণে নাজমা আমার আপন বোন হয়েও রাস্তায় একা পেয়ে যা–তা ব্যবহার করেছে। পরে বাধ্য হয়ে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশ আসামিদের ধরতে বাসায় গিয়েও আবার ছেড়ে দিছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নাজমা পারভীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কথা বলতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে। তদন্তকাজ চলমান। আসামি ধরতে গিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আপনি তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।’

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উৎপলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তের কাজ চলছে। এসব বিষয়ে সঠিক তদন্ত ছাড়া কাউকে ধরা যায় না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ য় র কর র কর ন এল ক য় তদন ত ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ জাহিদুজ্জামানের মাকে মারধর, থানায় অভিযোগ

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থী জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামানকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধর ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার বিকেলে টঙ্গীবাজার খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারধরের অভিযোগ তাঁরই (জাহিদুজ্জামান) খালা নাজমা পারভীনের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে বিলকিস জামান গত সোমবার টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁর।

জাহিদুজ্জামান তানভীন ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গত ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি আইইউটির মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২২ সালে পড়াশোনা শেষে নিজেই ড্রোন তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্টস’ (পিপিলিকা) গড়ে তোলেন। তাঁর মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান থাকেন উত্তরার কাঁচাবাজার এলাকায়। বড় বোন জেসিকা জামান স্বামীর সঙ্গে থাকেন আমেরিকায়।

থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে টঙ্গীর জহির মার্কেট এলাকায় তাঁর (বিলকিস জামান) ছোট বোন সালমা আক্তার মনির বাসায় বেড়াতে যান তিনি। বেড়ানো শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টঙ্গীবাজার খেয়াঘাট পার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। সেখানে হঠাৎ তাঁর পথ আটকে দাঁড়ান তাঁর আরেক ছোট বোন নাজমা পারভীন ও তাঁর স্বামী অলিউল্লাহ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি বাধা দিলে নাজমা ও তাঁর স্বামী তাঁকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি চিৎকার শুরু করলে আশাপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে তিনি উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সোমবার রাতে টঙ্গী পূর্ব থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

বিলকিস জামান জানান, তাঁরা মোট ছয় বোন এক ভাই। তাঁর বাবার বাসা টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায়। সেখানে একটি চারতলা বাড়ি আছে তাঁদের। এর মধ্যে ছোট বোন নাজমা বাড়িটির অর্ধেক মালিক দাবি করে তাঁর (বিলকিস জামান) ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া অংশ লিখে দিতে বলেন। বিলকিস কথামতো নাজমাকে তাঁর অংশ লিখে দেন। এরপর নাজমা ওয়ারিশ লিখে দিতে বিলকসকে অন্য বোনদের বলতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় নাজমা বিলকিসের ওপর ক্ষিপ্ত হন। নাজমা বিভিন্নভাবে বিলকিস ও অন্য বোনদের বিরক্ত করেন। পরে এসব নিয়ে বিলকিস ও তাঁর অন্য বোনেরা গত ৩০ ডিসেম্বর নাজমার বিরুদ্ধে টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর জেরে শনিবার টঙ্গীবাজার খেয়াঘাটে একা পেয়ে নাজমা ও তাঁর স্বামী তাঁকে হয়রানি করেন।

বিলকিস জামান বলেন, ‘আমি কেন আমার অন্য বোনদের ওয়ারিশ লিখে দিতে বলি না, এটাই ছিল আমার অপরাধ। এ কারণে নাজমা আমার আপন বোন হয়েও রাস্তায় একা পেয়ে যা–তা ব্যবহার করেছে। পরে বাধ্য হয়ে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশ আসামিদের ধরতে বাসায় গিয়েও আবার ছেড়ে দিছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নাজমা পারভীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কথা বলতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে। তদন্তকাজ চলমান। আসামি ধরতে গিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আপনি তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।’

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উৎপলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তের কাজ চলছে। এসব বিষয়ে সঠিক তদন্ত ছাড়া কাউকে ধরা যায় না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ