পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা জুনায়েদ হোসেন খান লেলীনকে অপসারণ এবং তাঁর শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর আজ বুধবার মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে তাঁকে অপসারণের দাবি করেছেন স্থানীয় শ্রেণি–পেশার মানুষ।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় কলাপাড়ার সর্বস্তরের সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে কলাপাড়া পৌর শহরের শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী সড়কের কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবিতে তাঁর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক, পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন পরিবেশকর্মী ইয়াকুব খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব এইচ এম মুস্তাফিজুর রহমান, উদ্যোক্তা ও সংগঠক মুহাম্মদ আল ইমরান, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র মাশরাফি কামাল, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.

খোকন হাওলাদার, কলাপাড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়ক এলাকার বাসিন্দা মো. মাহবুবুল আলম প্রমুখ।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া উপজেলার হলদিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. খোকন হাওলাদার বলেন, ‘আমার মেয়ে রিয়ামনি ছিল অন্তঃসত্ত্বা। এই চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাইতে যাইয়া আমার মেয়েকে মাইরা ফালাইছে। লেলীনের ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মারা গেছে।’

ভুল চিকিৎসায় খোকন হাওলাদারের মেয়ের মৃত্যু হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জুনায়েদ হোসেন খান বলেন, ‘একজন রোগীর চিকিৎসকের হাতে মৃত্যু হোক, এটা কোনো চিকিৎসক চায় না। ওই সময় এ রোগী আমার হাতে মারা যায়নি। এ রোগীর শরীরের অবস্থা খারাপ হলে পরিবারের লোকজন বরিশালে নিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।’
চিকিৎসক লেলীনের এমন বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে রিয়ামনির বাবা খোকন হাওলাদার বলেন, ‘আমার মেয়েকে সে তার মালিকানাধীন ক্লিনিকে বসে সন্তান প্রসব করানোর জন্য অস্ত্রোপচার করে। আমার মেয়ের শরীরে ইনজেকশন দেওয়ার পরেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই সে মারা যায়।’

উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের মাকসুদুর রহমান সিকদারের ছেলে স্বপন সিকদার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে অবহেলা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি মারা যায়। তাঁর (লেলীনের) অবহেলায় স্বপন সিকদার মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় স্বপনের চাচা মো. নুরুজ্জামান সিকদার ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিকিৎসক লেনীনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেলীন বলেন, ‘স্বপন সিকদার আমার কোনো অবহেলায় মারা যায়নি। আমি তাকে যথাযথভাবে চিকিৎসা দিয়েছিলাম। সে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মনে হয় মারা গেছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায় বদলি হন। এরপর লেলীনকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ দায়িত্বের আগপর্যন্ত তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জুনায়েদ হোসেন খান লেলীন কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। ১১ বছর ধরে তিনি কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চাকরি করছেন। এ সময়ে তিনি চিকিৎসক হিসেবে, পরবর্তী সময়ে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অবশ্য এর মধ্যে তিনি তিনবার অন্যত্র বদলি হয়েছিলেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি তদবির করে আবার কলাপাড়ায় ফিরে আসেন।

জুনায়েদ হোসেন খান লেলীনের বিরুদ্ধে চিকিৎসার নামে সনদ–বাণিজ্য, হাসপাতাল চলাকালে রোগীদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্রয়ের অভিযোগ তুলে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর কলাপাড়ার বাসিন্দা মো. বজলুর রহমান, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. আনোয়ার হোসেন খানসহ ভুক্তভোগী মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করা হয়। এ আবেদনের মাধ্যমে তাঁকে দ্রুত কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলির অনুরোধ জানানো হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা জুনায়েদ হোসেন খান লেলীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে তা মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার চিকিৎসাব্যবস্থার সফলতা দেখে হয়তো অনেকের ঈর্ষা লাগে। আমি মানুষকে সাধ্যমতো চিকিৎসা দিতে সব সময় চেষ্টা করি।’

লেলীনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে তা যদি ভুক্তভোগী মানুষ লিখিতভাবে আমাকে জানান, তখন আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে পারি। এর বাইরে আমার কিছু করার নেই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স আম র ম য় উপজ ল র চ ক ৎসক র কল প কল প ড় স বপন অবহ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভুঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন: টার্গেট চাঁদাবাজি

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নামে-বেনামের সংগঠন ও অধিকার আন্দোলন ব্যানারে চলছে সভা-সেমিনার ও মানববন্ধন। খোলা চোখে তাদের পেছনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা না গেলেও মূলত ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেই এসব আন্দোলন বা সভা সেমিনার হচ্ছে। তাদের টার্গেটে পড়ে কেউ হচ্ছেন সর্বস্বান্ত; আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী বা কোম্পানির সুনাম প্রশ্নের মুখে ফেলে আদায় হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ‘অধিকার আদায়ের’ নামে বিভিন্ন ব্যানার ব্যবহার হচ্ছে হরদম। এ ধরনের ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

`ক্ষতিগ্রস্ত ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’ এমনই এক ভুঁইফোড় সংগঠন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি চিঠি বিলি করা হয়। তাতে বলা হয়, ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন হবে। তবে মজার বিষয় হলো চিঠির তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি উল্লেখ থাকলেও গণমাধ্যমে পাঠানো হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রেরকের ঠিকানা না থাকলেও বাইপাল, আশুলিয়া, সাভারের ঠিকানায় চিঠি ছেড়েছে এই নামসর্বস্ব সংগঠন।

বিষয়টি জানতে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন প্রেরকের সঙ্গে। তিনি জানান, তাকে ওপর থেকে যেভাবে বলা হয়েছে তিনি সেটিই করেছেন। প্রশ্ন করা হয়, “আপনি চিঠির তারিখ উল্লেখ করেছেন ১০ ফেব্রুয়ারি, তাহলে ৮ ফেব্রুয়ারি অগ্রিম তারিখ দিয়ে কীভাবে স্বাক্ষর করলেন?”

জবাবে জাহাঙ্গীর আলম রাজীব নামের এই চিঠি প্রেরক বলেন, তাকে যেভাবে বলা হয়েছে তিনি সেটিই করেছেন, আর কিছু জানেন না।

যে সংগঠনের ব্যানারে চিঠি পাঠিয়েছেন, সেটির নিবন্ধন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না নেই।” তবে তাকে এই চিঠি পাঠানোর জন্য ঢাকা থেকে জনৈক এক ব্যক্তি পরামর্শ দিয়েছেন, তাই তিনি স্বাক্ষর করে সেটি পাঠিয়েছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম রাজীব।

শুধু একটি বা দুটি নয়, জানা গেছে এমন ডজনখানেক সংগঠনের খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দারা। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজির স্বার্থে এসব সংগঠনের নাম ব্যবহার করে থাকে।

জাহাঙ্গীর আলম রাজীবের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি গত এক দশক ধরে সাভারের বাইপালে স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপে কাজ করতেন। মূলত বেক্সিমকো গ্রুপের অর্থায়নে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছেন যুবলীগের এই কর্মী।

বাইপালের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল চৌধুরী। ৫ আগস্টের পর তিনি এখন অধিকার আন্দোলনের নেতা বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে লোক জড়ো করে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে শিল্পকারখানায় অস্থিরতার নেপেথ্যওে একই ধরনরে ভুঁইফোড় সংগঠন জড়িত বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুন্সীগঞ্জে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভের পর থানায় ভাঙচুর
  • বগুড়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরে অভিযুক্ত যুবদল নেতার পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন
  • রূপগঞ্জে খেলার মাঠ স্থায়ী করার দাবিতে মানববন্ধন
  • শ্রম আইনে নারী পুরুষের সম-মজুরি নিশ্চিতের দাবি
  • ভুঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন: টার্গেট চাঁদাবাজি
  • আলু সংরক্ষণ ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে টানা কর্মসূচি চলছে