অভ্যুত্থানের বড় প্রাপ্তিগুলোর একটি গুমের শিকার মানুষদের মুক্তি: মাহফুজ আলম
Published: 12th, February 2025 GMT
গুমের শিকার মানুষদের মুক্তি অভ্যুত্থানের বড় প্রাপ্তিগুলোর একটি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আজ বুধবার ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন শেষে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, নৃশংস! এটাই আমাদের দেখা সবচেয়ে ভয়ংকর আয়নাঘর। তিন ফুট বাই এক ফুটের সেল। দুই বিঘত জায়গায় টয়লেট। বাকি দুই ফুটে হাঁটু মুড়ে বসে থাকার জায়গা। আমার মনে হয় জুলাই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিগুলোর একটি হলো গুমের শিকার মানুষদের মুক্তি। বাংলাদেশে যেন আর কখনো গুমের মতো মানবতাবিরোধী কিছু না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকার গঠনের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় গুম কমিশন গঠন করেছি, যারা দিনরাত কাজ করে নৃশংসতার বিবরণগুলো ডকুমেন্ট করেছেন। ২১ দিনের মাথায় আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী কনভেনশনে সই করেছি। আজকে মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসী দেখবেন হাসিনার নৃশংসতার কিছু নমুনা। আরও শ শ নমুনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে।
মাহফুজ আলম বলেন, গত ৬ মাস গুম কমিশন গুমের ভিক্টিমদের সাক্ষ্য নিয়ে, তদন্ত করে গুমের স্থান, কাল ও সত্যতা নিরূপণ করেছেন। সে সূত্রে আইসিটি ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। বিচারের কাজও শুরু হয়েছে। গুমের শিকার প্রতিটা মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গণঅভ্যুত্থানের সরকারের অঙ্গীকার।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ উপদ ষ ট কর ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মঞ্চে ‘রক্তগন্ধা জুলাই’ দর্শক সারিতে কান্না
নাটকের মঞ্চে এক তরুণ হাঁকছেন– ‘এই, পানি লাগবে? পানি!’ এমন সময় হঠাৎ তাদের পাশে আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণ-যুবাদের দিকে নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ ও দুর্বৃত্ত। মঞ্চের আলো ঝাপসা হয়ে যায়। সেখানে দেখা গেল লাল-সবুজের পতাকা পরা তরুণ-তরুণীদের। তারা একটু আগেই বৈষম্যের অবসান চেয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিল।
মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌর শিশুপার্কের মঞ্চে দেখা যায় এই দৃশ্য। ১০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চটিতেই ফুটিয়ে তোলা হয় গত বছরের জুলাই-আগস্টে উত্তাল বাংলাদেশকে। সেখানে তরুণ-তরুণীদের কণ্ঠে ভেসে আসে– ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে/ লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে/ রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়/ আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম/ দালালি না রাজপথ, রাজপথ-রাজপথ/ মেধা না কোটা, মেধা-মেধা/ জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এর মতো স্লোগান। তাদের অভিনয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে দেন পৌর শিশুপার্কে আসা অনেক দর্শক।
এক পর্যায়ে ছাত্ররা ‘পলাইছে রে পলাইছে, স্বৈরাচার পলাইছে/ পলাইছে রে পলাইছে, খুনি হাসিনা পলাইছে’ বলে বিজয় মিছিল শুরু করে। তখন মাতোয়ারা দর্শক করতালি দিতে থাকেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত এই নাটকের নাম ‘রক্তগন্ধা জুলাই’। এটির রচয়িতা কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস। নাটকটিতে অভিনয় করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ১৮ শিক্ষার্থী।
কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রাজশ্রী মজত সিজা মনে করেন ‘৩৬ দিনের ঘটনা তো আর ৩৬ মিনিটে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে যা কিছু পরিবেশন হয়েছে, এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রায় পুরো রূপ-চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক নারী বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেত। নাওয়া-খাওয়া, ঘুম ছিল না। তখন তো নিজ চোখে আন্দোলন দেখিনি। শুধু টিভিতে খবর দেখতাম। মঞ্চে যখন আবু সাঈদের ওপর নির্মমভাবে গুলি চালালো, তখন নিজের ছেলের কথা মনে হয়ে কেঁদে ফেলেছি।’
নাটকটি মঞ্চস্থ হয় তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসব ও গ্রামীণ মেলার অংশ হিসেবে। মঙ্গলবার সকালে এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান, যা চলবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত।
নাটকে সন্তানহারা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ফাবিহা ইবনাথ। তাঁর ভাষ্য, কীভাবে আবু সাঈদ-মুগ্ধরা শহীদ হয়েছেন; তাদের চিন্তাধারা কী ছিল; তাদের স্বজনরা কতটা শোকাহত হয়েছে– সবার মাঝে সেই চেতনা জাগ্রত করতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা থেকেই মূলত নাটকে অভিনয় করা।
পুলিশ চরিত্রে ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য আপন আহমেদ। তিনি বলেন, পুলিশের তো জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা। কিন্তু হাসিনার নির্দেশে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে তারা ছাত্রদের হত্যা করেছে। সব যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশকে জনগণের পক্ষে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন আপন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলী বলেন, এটা শুধু নাটক নয়; জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রূপ। সব অপরাধীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন বিভিন্ন মাধ্যমে চলবে।
দেশের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস নিয়ে চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন কবি ও নাট্যকর লিটন আব্বাস। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনে সারাদেশের মানুষ অন্ধকার ও আতঙ্কে ছিল। হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ ও অঙ্গহানির মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা, তা এই নাটকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে তিন দিনের নাট্যোৎসবের আয়োজন। মঙ্গলবার রাতে ‘রক্তগন্ধা জুলাই’ মঞ্চস্থের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সূচনা হয়। নাটকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। এসব দেখে অনেক দর্শক আবেগে কেঁদেছেন।