দেয়ালে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, প্রাণ গেল ২ কিশোরের
Published: 12th, February 2025 GMT
রাজবাড়ীর পাংশায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে দুই কিশোর নিহত হয়েছে। বুধবার বিকেলে পাংশা উপজেলার মৈশালা-লাঙ্গলবাদ আঞ্চলিক সড়কের রুপিয়াট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- পাংশা উপজেলার শরিষা ইউনিয়নের জাগীর বাগলী গ্রামের মো. মিলনের ছেলে নিলয় ও শরিফুল ইসলামের ছেলে শুভ। এ ঘটনায় রিফাত নামে একজন আহত হয়েছে। হতাহতরা সবাই স্থানীয় কসবামাজাইল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুভ, নিলয় ও রিফাত তিনজন একটি মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। রুপিয়াট এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে মাদ্রাসার দেয়ালে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শুভ ও নিলয়কে মৃত ঘোষণা করেন। আহত রিফাতকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শরিষা ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য রাকিবুল জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় তারা শোকাহত।
পাংশা থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিজ্ঞানচর্চায় বাংলাদেশে নারীদের অংশগ্রহণ ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও তাঁদের অবদান ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারীর জন্য এ খাতে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান রয়েছে।
এই বিরাট নারীসত্তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য নীতিগত, সামাজিক ও শিক্ষাগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা উৎসাহব্যঞ্জক যে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে।
প্রাথমিক (৫১.২১ শতাংশ) ও মাধ্যমিক (৫৫.০৫ শতাংশ) পর্যায়ে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছাত্রদের চেয়ে বেশি। তবে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা (২৯.৫৩ শতাংশ), উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার (৩৭.৪৭ শতাংশ) ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম (ব্যানবেইস, ২০২৩)। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম) বিষয়গুলোতে নারীদের সংখ্যা সীমিত।
বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী এসটিইএম শিক্ষায় নিয়োজিত। ইউনেসকোর মতে, বিশ্বে এসটিইএম শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম। এসটিইএম স্নাতকদের মধ্যে নারীদের হার মাত্র ৩৫ শতাংশ, যা গত ১০ বছর ধরে এ সংখ্যা অপরিবর্তিত! এর ফলাফল হচ্ছে, এসটিইএম পরবর্তী ক্যারিয়ারে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি জেন্ডার অ্যাসেসমেন্ট ২০২১–এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালের প্রেক্ষাপটে এসটিইএম পেশাজীবীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ। দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় এসটিইএমে নারীর অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন এবং বাংলাদেশ একেবারে তার তলানির দিকে। এ অবস্থা যে শুধু বাংলাদেশের তা না বরং বিশ্বব্যাপী পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে, মাত্র ২৫ শতাংশ মেয়ে একজন বিজ্ঞানীর ছবি হিসেবে নারীর প্রতিকৃতি চিন্তা করে।
আরও এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ হাজার মেয়ের কাছ থেকে বিজ্ঞানীর ছবি অঙ্কন সংগ্রহ করা হয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ২৮ জন বিজ্ঞানী ছিল নারী। তবে পূর্বের এ অবস্থা অনেকটাই উন্নতি হয়েছে ও হচ্ছে। সাম্প্রতিক মেয়েদের একজন বিজ্ঞানীর ছবি আঁকতে দিলে অর্ধেকের বেশি মেয়েই একজন নারীর ছবি আঁকে।
এসটিইএম শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গড়ার সময় নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তার সরাসরি ফলাফল হলো আত্মবিশ্বাসের এই ঘাটতি। ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা জেন্ডার প্রেক্ষাপটের দ্বারা প্রভাবিত। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অধিক পরিমাণে বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী (৭৮টি দেশের মধ্যে ৭২টিতে) অথবা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে একজন পেশাদার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী।
এসটিইএমকে একটি পুরুষতান্ত্রিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা ও মেয়েরা এসটিইএমে কী করতে পারে এবং কী করা উচিত, সে সম্পর্কে সামাজিক রীতিনীতি ও ভ্রান্তধারণা শিক্ষক, পিতামাতা এবং অভিভাবকদের প্রত্যাশাকেও প্রভাবিত করে। যা পরবর্তী সময়ে এসটিইএম সম্পর্কে ও এসটিইএমের প্রতি মেয়েদের বিশ্বাস এবং মনোভাবে রূপ দেয়।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় এসটিইএম বিষয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপাতের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নারী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সামাজিক কুপ্রথা ও পারিবারিক বাধার কারণে এ খাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
সমাজের গড় মানসিকতার কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিজ্ঞানচর্চা বেছে নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। এর ফলে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি খাতে নারীদের অবদান সীমিত থেকে যায়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সমাজে এখনো নারীদের পেশাগত জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা রয়েছে।
বিজ্ঞানচর্চা ও প্রযুক্তিগত পেশাগুলোকে প্রায়ই ‘পুরুষের কাজ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের মানসিকতা নারীদের আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। তদুপরি নারীদের কাজের সময়সূচি, ভ্রমণ এবং কাজের পরিবেশ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তাঁদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে প্রবেশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য কার্যকর প্রণোদনার অভাব রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় স্কলারশিপ, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিংয়ের অপ্রতুলতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় মেয়েরা সঠিক নির্দেশনা ও সুযোগের অভাবে এ খাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার নারীদের বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি পেশায় যোগ দিতে উৎসাহিত করে না। পারিবারিক সহায়তা না পেলে নারীদের জন্য এ খাতে প্রবেশ করা এবং টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের অনেক নারী বিজ্ঞানী ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং রাখছেন। এই যেমন গবেষণায় অবদানের জন্য ২০২৩ সালের ১০০ জন ‘সেরা এবং উজ্জ্বল’ এশিয়ান বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন দুই নারী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন ডা. গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ও ডা. সেঁজুতি সাহা। এই দুজন ছাড়াও আরও অনেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তাঁদের সাফল্যের গল্প নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে।
এসব সফল নারী বিজ্ঞানীর অভিজ্ঞতা ও অর্জন সবার সামনে তুলে ধরলে অনেক মেয়ে তাদের মতো হতে আগ্রহী হবে। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্প যেমন ‘নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’ এবং ‘এসটিইএমে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ ইতিমধ্যে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু বৃত্তি ও স্কলারশিপ চালু করেছে। এসব উদ্যোগ গ্রামীণ মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এসটিইএম শিক্ষায় মেয়েদের উৎসাহিত করতে বিশেষ বৃত্তি, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম ও ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নারীদের জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করেছে। নারীদের এসটিইএম শিক্ষায় আগ্রহী করতে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে রোবোটিকস, কোডিং ও ডেটা অ্যানালিটিকসের মতো ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণ মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলছে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে এসটিইএম শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কার্যকর নীতি প্রণয়ন করা উচিত।
এতে কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। সামাজিক স্তরে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে পরিবার ও সমাজ নারীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উৎসাহিত করে। স্কুল পর্যায়ে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও অনুপ্রেরণামূলক কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে। সমাজের নেতিবাচক ধারণাগুলো দূর করতে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিতে হবে। সফল নারী বিজ্ঞানীরা নতুন প্রজন্মকে মেন্টরিংয়ের মাধ্যমে পথ দেখাতে পারেন। এতে নারীরা তাঁদের ক্যারিয়ারের প্রতি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
বিশেষত তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে মেন্টরশিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, এটি তাদের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে। নারীদের গবেষণার সুযোগ বাড়াতে ও উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করতে বিশেষ অনুদান এবং ফান্ডিং প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। গবেষণার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ালে, নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের পথ প্রসারিত হবে। বাংলাদেশে নারী এবং মেয়েদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও সমাজে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে; তবে সঠিক উদ্যোগ ও সচেতনতার মাধ্যমে এ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা সম্ভব। দেশের নারীরা যদি তাঁদের যোগ্যতা অনুসারে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রতিভা ও দক্ষতা প্রয়োগ করার সুযোগ পান, তবে তা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তাই এ বিষয়ে দেশের সব পর্যায় থেকে আশু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
মো. রমজান আলী ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফর এডুকেশন, ইউনেসকো ঢাকা অফিস।
ফাতেমা বেগম সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।