জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তথ্য সাধারণ ও বেতারকে একীভূত করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কালাম মোহাম্মাদ শামসুদ্দিন এবং মহাসচিব মো. মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রণীত সংস্কার প্রতিবেদনের প্রতি বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের সদস্যদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনে ভিন্ন প্রকৃতির তিনটি গ্রুপ ‘সাধারণ’, ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’-কে একীভূত করে বাংলাদেশ তথ্য সার্ভিস নামে যে সার্ভিস গঠনের কথা বলা হয়েছে, তাতে এ ক্যাডারের সদস্যদের উদ্বেগের কারণ রয়েছে। গ্রুপ তিনটির কর্মপ্রকৃতি এতটাই ভিন্ন যে, এগুলোকে কোনো একক সার্ভিসে একীভূত করা হলে তা একটি অকার্যকর সার্ভিসে পরিণত হতে পারে।

এ বিষয়ে বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন কিছু তথ্য তুলে ধরছে। এর মধ্যে রয়েছে-

১.

তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের কাজ ‘প্রচার’; বাংলাদেশ বেতারের কাজ ‘সম্প্রচার’।

২. তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের কাজ ‘গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা’, ‘জনসংযোগ’ ও ‘গণযোগাযোগ’; বাংলাদেশ বেতারের কাজ ‘সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার’। বেতার একটি মিডিয়া হাউজ হিসেবে এ নির্দিষ্ট কাজটিই করবে, গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা বা জনসংযোগ তাদের কাজ নয়।

৩. সম্প্রচার ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট কর্মীগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হয়। এ কাজের জন্য বিশেষ ধরনের কারিগরি ব্যবস্থা অপরিহার্য। এজন্য বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ অনুবিভাগ প্রফেশনাল ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ গ্রুপকে সাধারণ ক্যাটাগরির ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তাদের কাজের প্রকৃতি ও বিষয় থেকে যায় আগের মতোই। এভাবে কাজ ও জনবলের মধ্যে ধরনগত ভিন্নতা সৃষ্টি হয়।

৪. ১৫ মার্চ ২০২১ খ্রি. তথ্য মন্ত্রণালয়ের নাম ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়’ করা হয় (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন নং এস আর ও নং ৭৬-আইন/২০২১)। এর আগে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তাগণ স্বতন্ত্র ‘সম্প্রচার ক্যাডার’ গঠনের উদ্যোগ নেন এবং সে উদ্যোগের ফলেই প্রাথমিক কাজ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তিত হয়।

৫. বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) এবং বাংলাদেশ বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ তিনটি গ্রুপের কম্পোজিশন, ক্যাডার রুলস, রিক্রুটমেন্ট রুলস্, ক্যাডার তফসিল, পদনাম ও পদসোপান, কার্যবণ্টন এবং পদোন্নতির যোগ্যতা/শর্তাবলি ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা।

৬. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ গ্রুপকে বিসিএস (সাধারণ তথ্য) ক্যাডারের সাব-ক্যাডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ক্যাডারের নাম বিসিএস (তথ্য) এবং বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) এর একটি সাব-ক্যাডার। [বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা)-সহ কোনো সাধারণ ক্যাটাগরির ক্যাডারেই ‘সাধারণ’ শব্দটি নামের অংশ নয়। বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারে ‘সাধারণ’ শব্দটি সাব-ক্যাডারের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথাগতভাবে বেতারের ‘অনুষ্ঠান’ ও ‘বার্তা’ সাব-ক্যাডার/গ্রুপের নামে সঙ্গে ‘সাধারণ’ শব্দটি ব্যবহার করা যায় না।]

বর্ণিত তথ্যাদির আলোকে, বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারের কোনো অংশকে একীভূত করা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের কাজের মান বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের কল্যাণ কিংবা জনস্বার্থ কোনোটির জন্যই যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয় না। বিদ্যমান বাস্তবতায়, কেবল বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) গ্রুপকে নিয়ে বাংলাদেশ তথ্য সার্ভিস করা যায়। পাশাপাশি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘সম্প্রচার সার্ভিস’ গঠন করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ সরকারের সুবিবেচনা প্রত্যাশা করছেন।

রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারসহ সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের সংস্কার কর্মসূচিসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদানে বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের সকল সদস্য বদ্ধপরিকর বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসান/আসাদ/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ ব স এস মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন নয়

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে বায়ুদূষণ রোধে কেন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার এই আদেশ দেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন। এর আগে তিনি ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেন।

ওই চিঠি অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পরে মনির উদ্দিন হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। রিটে বলা হয়, গত নয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের রেকর্ড হয়েছে ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায়। ওইদিন শহরের গড় বায়ুমান সূচক (AQI) ছিল ২৮৮, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পড়ে। 

রিট আবেদনে আরও বলা হয়, বায়ুমান সূচক ০-৫০ থাকলে বাতাস বিশুদ্ধ ধরা হয়, ৫১-১০০ হলে তা সহনীয় বা গ্রহণযোগ্য, ১০১-১৫০ হলে সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ২০১-৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সূচক ৩০১ বা তার বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। 

২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি উৎস হলো—ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং নির্মাণসাইটের ধুলাবালি। রিটে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, সারা বিশ্বের ১২৪টি দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকাকে দূষণের দিক থেকে প্রথম অবস্থানে দেখা যায়। ওইদিন ঢাকার গড় বায়ুমান সূচক ছিল ২৫০।

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের কবলে থাকা ঢাকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। পরিবেশগত দিক বিবেচনায় বায়ুদূষণ রোধে দ্রুত কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হতে পারে–এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রিটে বলা হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ