রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অজ্ঞান হয়ে গেছেন একজন নারী। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারী ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা। তিনি স্বল্প মূল্যে চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল কিনতে সকাল আটটায় সেখানে গিয়েছিলেন; কিন্তু দীর্ঘ সময় না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ও ঠেলাঠেলির কারণে এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

উপস্থিত লোকজন তাঁর মাথায় পানি দেন ও ধরাধরি করে রাস্তার পাশে বসান। এরপর বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন ওই নারী। তখন উপস্থিত লোকজনের অনুরোধে টিসিবির ট্রাক থেকে তাঁর কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। এরপর তিনি পরিচিত একজনের সঙ্গে বাসায় ফিরে যান।

উল্লিখিত নারী জানান, তাঁর স্বামী পেশায় ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। স্বামীর নামে টিসিবির একটি পরিবার কার্ড ছিল। তবে টিসিবি এখন নতুন স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দিচ্ছে; যেটি তাঁরা এখনো পাননি। এ কারণে দুই মাস ধরে টিসিবির পণ্য কিনতে পারছেন না। ফলে আজ বাধ্য হয়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

প্রথম আলোকে ওই নারী আরও বলেন, ‘আমার পাঁচজনের সংসার। এর মধ্যে দুই মেয়ে স্কুলে পড়ে। স্বামীর একজনের সীমিত আয়ে সংসার চলে না। এ জন্য বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি।’

আজ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে আরও দুই নারী অজ্ঞান হয়েছেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন জানান, তাঁরাও দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে সড়কে পড়ে যান।

বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি, ভোগান্তি

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও আধা কেজি খেজুর ৭৮ টাকায় বিক্রি করে সংস্থাটি।

টিসিবির ট্রাক থেকে এসব পণ্য কিনলে একজন ভোক্তার প্রায় ৪০০ টাকার মতো সাশ্রয় হয়। এ কারণে ট্রাকের পেছনে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে ভিড়ের সঙ্গে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও হয়রানির ঘটনা। আজ দুপুরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে দেখা যায়, পণ্য কিনতে এসে টিসিবির ট্রাকের পেছনে প্রচণ্ড হট্টগোল করছেন উপস্থিত লোকেরা; এমনকি তাঁরা নিজেদের মধ্যে মারামারিও করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধাক্কাধাক্কির কারণে মাটিতে পড়ে গেছেন বেশ কয়েকজন ক্রেতা। কারও হাত কেটেছে, কেউ পেয়েছেন পায়ে ব্যথা, জুতা ছিঁড়ে গেছে দুজনের, টাকা হারিয়েছেন একজন। এ ছাড়া ট্রাক থেকে পণ্য নিয়ে ভিড় ঠেলে বের হতে গিয়ে একজনের ব্যাগ ছিঁড়ে যায়। এতে তাঁর এক কেজি চিনির পুরোটাই রাস্তায় পড়ে যায়।

পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা বিলকিস আক্তার জানান, টিসিবির ট্রাকের সন্ধানে তিনি আজ সকাল সাড়ে সাতটায় বাসা থেকে বের হন। এরপর ফার্মগেট এলাকার তিনটি সম্ভাব্য স্থানে ঘুরে আটটার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আসেন। সেখানে আগে থেকেই ২০ জনের মতো নারী–পুরুষ দুই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বিলকিস আক্তার জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিসিবির ট্রাক এলে আগের দুই লাইন ভেঙে যায় এবং নতুন করে সাত–আটটি লাইন তৈরি হয়। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে পায়ে ব্যথা পেয়ে লাইন থেকে বের হয়ে যান তিনি। তাঁর মতো আরও কয়েকজনের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। একই ঘটনা দেখা গেছে শেওড়াপাড়ায়। আজ দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষেরা দুটি ও নারীরা পাঁচটি লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

আওতা বেড়েছে, বরাদ্দ কমেছে

এদিকে পণ্য বিতরণের আওতা বাড়িয়েছে টিসিবি। সংস্থাটি শুরুতে ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করত। এখন আটটি বিভাগীয় শহর ও কয়েকটি জনবহুল জেলা শহরে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আওতা বাড়ানোর কারণে ট্রাকপ্রতি পণ্যের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। আগে একটি ট্রাকে ২৫০ জনের জন্য পণ্য বিক্রি করা হতো। তবে গত দুই দিনে প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

এমনিতেই টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য না পেয়ে কিছু মানুষ খালি হাতে ফিরতেন। এখন পণ্যের বরাদ্দ কমায় সে ধরনের মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ছে। আজ বেলা সোয়া তিনটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে টিসিবির ট্রাকের পণ্য বিক্রি শেষ হয়। তখন সেখানে উপস্থিত অন্তত ৫৫ জন পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে বাধ্য হন। শেওড়াপাড়াতেও এভাবে ৩৮ জন খালি হাতে ফিরেছেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সকাল সাতটায় এসেও পণ্য কিনতে পারেননি লাইলী বেগম। টিসিবির ট্রাক চলে যাওয়ার পরে এক পর্যায়ে তিনি কান্না শুরু করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল সাতটায় এখানে আইছি। কিচ্ছু খাইতে পারি নাই। পরনের জুতাটাও ছিঁইড়া গেছে। এহন খালি হাতেই বাসায় যাইতে হইব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত ল ক বর দ দ কজন র

এছাড়াও পড়ুন:

হাসির জাদুঘর ‘হাহা হাউস’

আধুনিক জীবনে নেতিবাচক ঘটনার ভিড়ে অনেকেই হাসতে ভুলে গেছেন। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবে চালু হয়েছে একটি হাসির জাদুঘর। এ জাদুঘরের নাম ‘হাহা হাউস’। এটি হলো বিশ্বের প্রথম জাদুঘর, যা সম্পূর্ণরূপে দর্শনার্থীদের হাসানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।

এ জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে হাস্যরস সৃষ্টি করা। এটি তৈরিতে শিল্প এবং প্রযুক্তির সমন্বয় করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি নকশাবিদ, স্থপতি, শিল্পী এবং বিশেষজ্ঞদের একটি দল এ জাদুঘর তৈরিতে কাজ করেছেন। হাস্যরসের দিক থেকে ব্যক্তির পছন্দ যেমনই হোক না কেন, এ জাদুঘরের লক্ষ্য হলো সব বয়সের দর্শনার্থীদের হাসাতে সাহায্য করা।

হাহা হাউসে খেলাধুলা ও নানা অংশগ্রহণযোগ্য প্রদর্শনী রাখা হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা অংশগ্রহণ ও উপভোগ করতে পারেন। তবে জাদুঘরে প্রবেশের আগে তাদের একটি স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

এ সময় সাদা ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে গেলে তাঁদের উদ্বেগ দূর হতে শুরু করে। এরপর তাঁদের বড় আকারের একটি ওয়াশিং মেশিনের মধ্যে ঢোকানো হয়। একে বলা হচ্ছে ‘সেন্ট্রিফিউজ অব লাইফ’। এখান থেকে দর্শনার্থীকে সাদা বলভর্তি একটি পুকুরে ফেলা হয়। এখান থেকেই মূলত দর্শনার্থীর বিভিন্ন আনন্দদায়ক স্থানে যাত্রা শুরু হয়।

জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেয়া গোলুবিক বলেন, করোনা মহামারির সময় যখন মানুষজন উদ্বেগ, একাকিত্বে ভুগছিলেন, তখন তাঁর মাথায় এ জাদুঘর করার পরিকল্পনা আসে। ৪৩ বছর বয়সী উদ্যোক্তা আন্দ্রেয়া বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি যে আমার একটা লক্ষ্য আছে। আর তা হচ্ছে হাসি দিয়ে মানুষকে সুস্থ করা। ধারণাটি সরাসরি হৃদয় থেকে এসেছিল।’

আন্দ্রেয়া বলেন, তাঁর সাত বছর বয়সের সময়কার চিন্তামুক্ত জীবন এ জাদুঘর তৈরিতে তাঁকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথম গ্রেডে পড়ার সময়কার আমার একটি ছবি ছিল, যাতে বড় দাঁত বের করে হেসে লুটোপুটি খেতাম। আমি শিশু বেলায় সব সময় মজা করতাম।’

জাদুঘরে ঢুকে দর্শনার্থীকে একটি বোতাম চাপতে হয়, যাতে জীবনের নেতিবাচকতা থেকে তিনি মুক্তি পান। এরপর জাদুঘরে ঢুকলে আটটি আলাদা অংশগ্রহণমূলক ক্ষেত্র পাওয়া যাবে। সেখানে রাবারের মুরগি, বেতাল সুরের কারাওকে কিংবা সুমো কুস্তির মতো ব্যবস্থাও রয়েছে।

থিয়েটার, চলচ্চিত্র বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত হাস্যরসের কিছু গুরুতর ইতিহাসও জানার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এখানে নানা উপায়ে বিভিন্ন ধরনের হাস্যরসের ধরন জানার সুযোগও রয়েছে।

জাদুঘরটি কিছু পছন্দের ওয়ান-লাইনারের সাহায্যে শব্দের খেলা, চড় মারা, টয়লেট এবং অন্ধকার হাস্যরস থেকে শুরু করে ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরসের ধরনগুলোও ব্যাখ্যা করে।

আন্দ্রেয়া বলেন, শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সী লোকজনকেই আকর্ষণ করছে হাহা হাউস। বয়স্করা এখানে এসে তাঁদের ছেলেবেলা আবার খুঁজে দেখার সুযোগ পান। যাঁরা নিজেদের ভেতরের শিশুকে এখনো অনুভব করেন, তাঁরা এখান থেকে রিচার্জ হতে পারেন।

জাদুঘরে ঘুরতে আসা অবসরজীবন উপভোগ করা ব্রুনো ড্যাডিক বলেন, জাদুঘর ভ্রমণ করে তিনি অত্যন্ত খুশি। এর আগে জীবনে এত হাস্যরস আর উপভোগ করেননি। তিনি বলেন, হাস্যরস আত্মার ওষুধ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাসিনার পাশে না থাকলে ক্রসফায়ারে যেতে হত: নজরুল মজুমদার
  • দোয়া কুনুত: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার নিয়ম
  • ছবি তুলতে গেলে চটেন শম্ভু, বলেন ‘ব্যাডা, কোনো কাম নাই’
  • আবারো সেই ঘুরে দাঁড়ানো রিয়ালে ধরা ম্যানসিটি 
  • যেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এল
  • নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে রিমান্ডে 
  • সড়ক বিভাজকে ধাক্কার পর উল্টে গেল ট্রাক, মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
  • আয়মান ও মুনজেরিনের প্রেমের গল্প
  • হাসির জাদুঘর ‘হাহা হাউস’