যেকোন টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছে অবধারিত প্রশ্ন, ‘লক্ষ্য কতদূর যাওয়ার?’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকেও একই প্রশ্ন শুনতে হলো। হয়তো প্রস্তুতও ছিলেন তিনি। 

উত্তর দিতে তাই দেরি কিংবা দ্বিধায় পড়তে হয়নি বাঁ-হাতি টপ অর্ডার ব্যাটারের। ইঙ্গিত করেও কিছু বলেননি শান্ত। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হতেই যাচ্ছেন তারা, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই যাচ্ছি। এখানে যে আট দল আছে, সবাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য।’ 

বাংলাদেশ ২০১৭’র সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছিল। এবার দলের ক্রিকেটাররা মনে করেন তাদের ফাইনালে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। দলের সকলে ওই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন শান্ত, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য আছে। এটা কারো জন্য চাপের নয়। দলের সকলেই বিশ্বাস করে, আমাদের ওই সক্ষমতা আছে।’ 

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে অন্য দলগুলো ওয়ানডে খেলছে। ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ খেলছে। পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তানও সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে। কেবল কোন ওয়ানডে না খেলেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

তবে ভালো উইকেটে বিপিএল খেলায় প্রস্তুতিতে ঘাটতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন শান্ত, ‘সংস্করণের দিক থেকে (বিপিএল) কিছু ভিন্নতা আছেই। উইকেট ভালো ছিল। ব্যাটাররা যেভাবে খেলেছে, ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা এর চেয়ে ভালো উইকেটে খেলব। আমাদের হাতে এখনো ছয়-সাত দিন আছে, আশা করছি, আরও গুছিয়ে নিতে পারব।’

অন্যরা বিপিএলে খেলে প্রস্তুতি সারলেও নিয়মিত খেলার সুযোগ পাননি শান্ত। তবে না খেলেও প্রাপ্তি আছে জানিয়েছেন তিনি, ‘যদিও আমি নিয়মিত ম্যাচ খেলেনি, তবে এরও কিছু ইতিবাচক দিক আছে। আমি নিয়মিত অনুশীলন করেছি এবং ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। সব ঠিক গেলে আশা করছি, টুর্নামেন্টটা আামদের জন্য ভালো যাবে।’ 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক এমপি বাহারসহ ২৬১ জনের নামে মামলা

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি-হামলার ঘটনায় ৬ মাস পর থানায় মামলা হয়েছে। এতে কুমিল্লা ৬ (সদর) আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁঞাসহ ২৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো. ইনজামুল হক রানা বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন। রানা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার শহরতলীর ডুমুরিয়া চাঁন্দপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। সমকালকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন এমপি বাহারের নির্দেশে আসামিরা গত বছরের ৩ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায়। গুলি ও হামলায় বেশ কিছু ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত জখমসহ গুরুতর আহত হয়।

মামলায় আলোচিত অপর আসামিরা হচ্ছেন, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুর রহমান জুয়েল, আহমেদ নিয়াজ পাভেল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা বকুল, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এড. ইউনুছ ভ‚ইয়া, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল মমিন ফেরদৌস, সাবেক পিপি জহিরুল ইসলাম সেলিম, কুসিকের অপসারিত প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল-আমিন সাদী, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. ফাহমিদা জেবিন, মহানগর ছাত্রলীগের  সাবেক আহ্বায়ক আবদুল আজিজ সিহানুক। মামলায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সেকশন অফিসার রেজাউল ইসলাম মাজেদ, বিল্লাল হোসেন, কুবির কর্মচারী পরিষদ সভাপতি জসিম উদ্দিন, কুবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা রেজা-ই এলাহী ও বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আইনজীবী, জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গুরুতর আহত ৫ জনকে স্বাক্ষীভুক্ত করা হয়েছে। 

কুমিল্লায় এই প্রথম জুলাই আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় সর্বাধিক সংখ্যক প্রায় দুই ডজন আইনজীবীকে এক মামলায় অভিযুক্ত করা হলো। মামলার বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, প্রায় ১৬ শ’ আইনজীবী নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি। মামলায় ঢালাওভাবে অনেক আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। যা দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের তফসিল হওয়ার ঘোষণা করার দিন ধার্য আছে। মামলার কারণে নির্বাচনেও প্রভাব পড়বে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার দিনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই আইনজীবী নেতা।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মামলার বাদী মো. ইনজামুল হক রানার মোবাইলে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছিল। আসামীদের অনেকেই সরাসরি ঘটনাস্থলে ছিলেন। অন্যদের মধ্যে কেউ কেউ অর্থ, অস্ত্র সরবরাহ ও পরিকল্পনায় ছিলেন। হামলার ভিডিও ও স্থিরচিত্র আমাদের কাছে আছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম সমকালকে জানান, বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলাটি এফআইআর (রেকর্ড) করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ