‘দেশের মানুষের জন্য কথা বলে আমি ভুল করেছি? আমার আজ দাঁড়ানোর ঘর নেই কেন? আমি তো নতুন বাংলাদেশ গড়তে জুলাই আগস্টে কথা বলেছি। সেদিন আমি তো বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছি। বাংলাদেশের মানুষের জন্য কথা বলেছি। আমি বিপ্লব করে হাসিনাকে লড়াইছি। কিন্তু হাসিনা তো এসে আমার ঘরে আগুন লাগায় নাই। আগুন তো লাগাইছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ। ঘরের বাইরে থেকে দরজা আটকে আমার বাবা-মা, ভাই, আমার চার ভাতিজি সবাইকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। আমি তাদের বিচার চাই।’ 

আজ বুধবার পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রজপাড়া গ্রামের নিজের পোড়াবাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপর বসে সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন দেশের জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নুরুজ্জামান কাফি।

নুরুজ্জামান কাফি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কথা বলেছি। মানুষের জন্য কথা বলেছি। শেখ হাসিনা বলেছে ধানমন্ডি যারা পুড়িয়েছে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে। ঠিক ধানমন্ডি ভাঙার প্রতিশোধ প্রথম নেওয়া হয়েছে আমা বাড়িঘরের ওপর। আমার বাবা ও ভাই আমার জন্য দু’বার কেঁদেছেন। জুলাই আন্দোলনকালে যখন পালিয়েছিলাম তখন একবার এবং দ্বিতীয়বার কাঁদলেন আজ পোড়া ধ্বংসস্তূপ দেখে। বাবার সন্তান হিসেবে আজ আমি লজ্জিত।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাফি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই। আগামী সাত দিনের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া ঘর নির্মাণ ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা না হলে আমি বিপ্লবী সরকারের ডাক দিমু এবং একাই রাজপথে দাঁড়ামু। আমি এখানে দাঁড়ালে টিএসসি পর্যন্ত জ্যাম লেগে যাবে।’  
  
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির কলপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া গ্রামের বসতঘরটি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘরের বাইরে থেকে দরজা আটকে আগুন লাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কাফির বাবা। আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে তিনি ঘরের একটা দরজা ভেঙে সবাইকে নিয়ে কোনো মতে বের হয়ে প্রাণে বেঁচে যান।

ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ততক্ষণে টিনশেড ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এটি নাশকতা বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। ঘটনার সময় কাফি বাড়িতে ছিলেন না, ঢাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ঘটনার পর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কলাপাড়া সার্কেল) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নুরুজ্জামান কাফির বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাত আনুমানিক আড়ইটার দিকে হঠাৎ সজাগ হয়ে দেখি ঘরের চালে ওপর আগুন। বাইরে থেকে আটকানো থাকায় দরজা খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। তখন আমরা দিশেহারা হয়ে কোনো রকম একটা দরজা ভেঙে আমরা ঘর থেকে হয়ে  প্রাণে বেঁচে গেলাম। ফায়ার সার্ভিস খবর পেয়ে আসার আগেই ঘরের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নগদ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ও জরুরী কাগজপত্রসহ ঘরের মধ্যে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়’।

প্রতিবেশি হৃদয় খান বলেন, ‘কাফি’র ঘরের সামনের ও পিছনের দরজা বাইরে থেকে আটকিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ঘরের ভিতরে তাঁর (কাফি) বাবা-মা, ভাই-ভাবী ও তাদের সন্তানরা ছিলেন। তারা দরজা ভেঙে বের হয়ে প্রাণে রক্ষা পান।’

কাফি’র মামাতো ভাই মোহাম্মদ তোহা বলেন, ‘আমরা তো দেহি নাই কে বা কারা আগুন দিছে। নৃশংসতা দেখে মনে হচ্ছে এ আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হইছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি’।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

রবিউল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ঘরটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না এটি নাশকতা নাকি অন্য কোনো ঘটনা। তবে, কাফির বাবা আমাকে বলেছেন যখন উনি আগুন দেখে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন বাইরে থেকে আটকানো ছিল। এখানে অনেক সংশয় রয়েছে। মামলা হচ্ছে, তদন্ত শেষে পুরোটা বোঝা যাবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কলাপাড়া সার্কেল) বিমল কৃষ্ণ মল্লিক জানান, কাফি’র পরিবারকে বলা হয়েছে মামলা করার জন্য। তারা এখন পর্যন্ত মামলা করেননি। তবে পুলিশ এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্টও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তারাও কাজ করছে আগুনের কারণ চিহ্নিতকরণের জন্য।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কল প ড় উপজ ল ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

জিনদের আহার্য

মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮)

আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫

তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮)

আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না।

গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮)

আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ