সব গরু বিক্রি করে দিলেন সেই ডিআইজি প্রিজন
Published: 12th, February 2025 GMT
নিজের বাংলোতে গড়ে তোলা খামারের সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান। গতকাল মঙ্গলবার ১২ লাখ টাকায় তিনি খামারে থাকা গরু–বাছুর বিক্রি করে দেন। ফলে সরকারি বেতনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আর ডিআইজি প্রিজনের গরুর খামারে কাজ করতে হচ্ছে না।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রশিদ আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যারের খামারে থাকা সব গরু বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের গরুর খামারে আর কোনো কাজ নেই।’
গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘চট্টগ্রাম কারাগারে দুধ বিক্রি করছেন ডিআইজি প্রিজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাবিধি অনুযায়ী, কোনো কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দীদের কাছে কোনো সামগ্রী বিক্রি কিংবা ভাড়া দিতে পারেন না। তা ছাড়া এভাবে তরল দুধ সরবরাহ করা বন্দীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক কারা কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান চট্টগ্রামে যোগ দেন গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহ থেকে বদলি হয়ে আসার সময় গরুগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব সীমানাদেয়াল–সংলগ্ন এলাকায় নিজের কার্যালয় ও বাংলোর পাশে খামার গড়ে তোলেন তিনি। খামারে উৎপাদিত দুধ তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বিক্রি করে আসছিলেন।
কারাগারে বাইরে থেকে দুধসহ রান্না করা কোনো খাবার কারাবন্দীদের দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান সে নিয়ম মানেননি। ১০ মাস ধরে নিয়মিত তাঁর খামার থেকে গড়ে ২০ লিটার করে দুধ কারা ক্যানটিনে সরবরাহ করা হতো। বাইরে খুচরা মূল্য ৮০ টাকা লিটার, পাইকারি দর ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ডিআইজি প্রিজন কারাগারে বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা দরে। সেই হিসাবে দৈনিক ২ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করতেন তিনি।
প্রথম আলোয় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কারাগারে দুধ বিক্রি বন্ধ করে দেন ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান। এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের ৬৮ কারাগারে গরু পালনে সরকারি কর্মচারী ও অর্থ ব্যবহার না করতে নির্দেশনা জারি করেছে কারা অধিদপ্তর। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সই করা এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, কারা কর্মকর্তারা গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিবিধান অনুসরণ করছেন না। এখন থেকে গরু পালনের ক্ষেত্রে কারা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে কারা মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি মানতে হবে কিছু শর্ত। এগুলো হলো কারাগারে দুটির বেশি গরু পালন করা যাবে না, কারা এলাকায় গরু পালনের ক্ষেত্রে কারাগারের পরিবেশ কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না, গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারী নিযুক্ত করা যাবে না, ব্যয় করা যাবে না সরকারি কোনো অর্থ, ব্যক্তিগত গরু পালনের কাজে বন্দীদের ব্যবহার করা যাবে না, সরকারি কোনো স্থানে ঘাস চাষ করা যাবে না, গরু পালন কাজে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুৎ বিল ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করতে হবে, গরুর সংখ্যা দুইয়ের অধিক নেই এবং নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে—প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে লিখিত প্রত্যয়ন দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ দ র প র জন প রথম ড আইজ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভোক্তাদের জিম্মি করা যাবে না
আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ভোজ্যতেলের দাম পড়তির দিকে, তখন বাংলাদেশে দাম বেড়ে চলেছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে পাঁচ থেকে সাত টাকা।
বাংলাদেশ ট্রেড আন্ড ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়। দেশীয় কয়েকটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে এবং তা থেকে উৎপাদিত ও পরিশোধিত তেল বাজারে বিক্রি করে।
গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৯ শতাংশ বেশি। এরপরও সয়াবিনের এই সংকট কেন?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র বহদ্দারহাটে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে ৩০টি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। কিন্তু শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র একটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন মিলেছে। ঢাকার চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। আগে যেখানে পাঁচ লিটারের বোতল কিনলে দামে ছাড় পাওয়া যেত, এখন সেখানে নির্ধারিত দরের বাড়তি মূল্য গুনতে হয় ক্রেতাদের।
পবিত্র রমজান সামনে রেখে ভোজ্যতেলের বাজারের এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনকই বটে। এর আগে আমদানিকারকেরা লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়িয়ে নেন।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আরও অনেক আমদানি পণ্যের মতো ভোজ্যতেল বা সয়াবিনের বাজারও কয়েকটি বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি। কোনো কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বলেছে, তারা নিয়মিত বাজারে সয়াবিন সরবরাহ করছে। তাহলে এই কৃত্রিম সংকটের কারণ কী? বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮৫০ টাকা। যদি পণ্য বাজারে না–ই পাওয়া যায়, তাহলে দামের বিষয়টিই অপ্রাসঙ্গিক।
অন্য একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টানা দুই মাস বাড়ার পর গত নভেম্বরের পর নিম্নমুখী হয়ে ওঠে সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে টনে ৮৪ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছে আর দেশীয় বাজারে সেটা বেড়ে যাওয়া কিংবা সরবরাহে ঘাটতি থাকা রহস্যজনক।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ‘ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধের বিষয়ে সরকারের অনতিবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ কিন্তু অন্যান্য বিষয়ের মতো বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা বলে হাওয়ায় ছড়ি ঘোরাচ্ছেন; যদিও সেই সিন্ডিকেটকে দৃশ্যমান করার কোনো উদ্যোগ নেই।
কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় খবর বের হয়েছিল, পবিত্র রমজান সমানে রেখে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে সরকার একধরনের নিশ্চিন্ত ছিল। কিন্তু ভোজ্যতেল তথা সয়াবিনের বাজার দেখলে মনে হয় নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর খবরদারি করতে পারছে না। ব্যবসায়ীরাই নানা অজুহাত দেখিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন এবং সরকারকে তা হজমও করতে হচ্ছে। রোজা সামনে রেখে সয়াবিনের ঘাটতি বাড়ার আগেই সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে একটি উপায় খুঁজে বের করা। কোনো অবস্থায় ভোক্তাদের জিম্মি করা যাবে না।