শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ)’ পদের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) গৃহীত ১০ম গ্রেডের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে সাময়িকভাবে ৮৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক সাময়িকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের পরবর্তীকালে কোনো যোগ্যতার বা কাগজপত্রাদির ঘাটতি ধরা পড়লে, দুর্নীতি, সনদ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে, অসত্য তথ্য প্রদান করলে বা কোনো উল্লেখযোগ্য ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে উক্ত প্রার্থীর সাময়িক মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে। চাকরিতে নিয়োগের পর এরূপ কোনো তথ্য প্রকাশ পেলে বা প্রমাণিত হলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। প্রকাশিত ফলাফলে কোনো উল্লেখযোগ্য ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধনের ক্ষমতা কর্ম কমিশন সংরক্ষণ করে।

রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলো হলো—

আরও পড়ুনডাক অধিদপ্তরে আবারও বড় নিয়োগ, পদ ২৫৫৬ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনপ্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বৃদ্ধি, বিদ্যালয়কে লাল–হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে ভাগ করার সুপারিশ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনবিসিএস লিখিত পরীক্ষায় গণিত বাদ দেওয়ার সুপারিশ৮ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘অপেক্ষায় থাকি, কবে দিনটি আসবে’

“পোড়াদহ মেলা আমাদের আত্মার সাথে মিশে গেছে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে আমাদের আনন্দের সীমা অতিক্রম করে যায়। কারণ, এদিন আমাদের বাড়িভর্তি আত্মীয় থাকেন। বাড়িতে রান্না হয় অনেক রকম। মাছ, মাংস, মিষ্টি, খাবার এত পরিমাণ জমা হয় যে, খেয়ে শেষ করা যায় না। এদিনটিতে আমরা ঈদের দিনের চেয়েও বেশি আনন্দ করি। কারণ, ঈদের দিনও তো এরকম সবাইকে পাওয়া যায় না। সবার মুখ দেখতে পাওয়া যায় না। আমরা অপেক্ষায় থাকি, কবে এদিনটি আসবে।” 

এভাবেই বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ৪৫০ বছরের পুরনো পোড়াদহ মেলার গুরুত্ব উপস্থাপন করছিলেন ওই উপজেলার মড়িয়া গ্রামের শাহীন আলম।

তিনি জানান, তার বাড়িতে মেয়ে জামাই, বিয়াই-বিয়ান, নাতি-নাতনী সবাই এসেছেন। তাই তিনি মেলায় এসেছিলেন মাছ কিনতে। তার ছেলেকে সাথে নিয়ে মেলা থেকে দুটো ব্রিগহেড মাছ কিনেছেন। পরে আবার মেলায় আসবেন। তখন মিষ্টি কিনবেন। তার জামাইও মেলায় ঘুরাঘুরি করছেন। সে কি কিনবে সেই ভালো জানে!

বড় বড় মাছ নিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃর্ষণের চেষ্টা বিক্রেতার

পোড়াদহ এলাকায় এই মেলার গোড়াপত্তন ঘটে প্রায় ৪৫০ বছর আগে। কথিত আছে, ওই সময় মেলা সংগঠনের স্থানে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। একদিন সেখানে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হয়। পরে দলে দলে সন্ন্যাসীরা এসে একটি আশ্রম তৈরি করেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে সেটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয়। 

পরবর্তীতে, প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে পূজার দিনটি একটি গ্রাম্য মেলার গোড়াপত্তন হয়। এক সময় সন্ন্যাসীরা স্থানটি ত্যাগ করে চলে গেলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সন্ন্যাসী পূজা বন্ধ করে দেননি। এভাবেই বাড়তে থাকে মেলার পরিচিতি।

মেলাটি প্রথা অনুযায়ী মাঘের শেষদিনের নিকটবর্তী বুধবারে ইছামতী নদীর পাড়ে আয়োজিত হয়। মেলাটি সন্ন্যাস মেলা বা মাছের মেলা নামেও পরিচিত। তবে হাল আমলে এসে মেলাটি জামাই মেলা নামে বেশি পরিচিতি পেয়েছে। যে কারণে রীতি অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে নিয়ে যেতে চলে জামাইদের মধ্যে নীরব প্রতিযোগিতা।

অন্যান্য মাছের পাশাপাশি ব্রিগহেড মাছের বেশ দাপট দেখা গেছে মেলায় 

মেলা উপলক্ষে আগের রাত থেকেই মেলাস্থলে গাড়িতে করে আনা হয় বড় বড় মাছ। মিষ্টি দোকানে ধুম পড়ে ‍নানান স্বাদের মিষ্টি বানানোর। ভোর হওয়ার সাথে সাথে শ্বশুর বাড়ির স্বজনদের নিয়ে মেলায় আসেন এলাকার জামাইয়েরা। পোড়াদহ মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল বিশাল মাছ। এর পরের আকর্ষণ মাছ এবং পাতা আকৃতির বড় বড় মিষ্টির। এই মিষ্টিগুলোর ওজনও হয় সাধারণ মিষ্টির চেয়ে অনেক বেশি, আকারও বড়। কোনটা পাঁচ কেজি আবার কোনটা ২০ থেকে ৪০ কেজিও। 

এছাড়া মেলায় কাঠের আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, কসমেটিকস, খেলনা প্রায় চার হাজার দোকানে মিলবে সংসারের যাবতীয় সবকিছু। 

মেলায় মাছ কিনতে আসা শাহাদাত হোসেন বলেন, “প্রতিবছর মেলায় মাছ কিনতে আসি। এবারো এসেছি। ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। পোড়াদহ মেলা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলায় বিগত বছরে বড় বড় মাছ উঠতো। এবারের মেলায় তুলনায় বড় মাছ ওঠেনি।” 

এসব এলাকার জামাইদের একটি অদৃশ্য প্রতিযোগীতা থাকে বড় মাছ কেনার

৯ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে প্রায় দশ কেজি ওজনের একটি বোয়াল কিনেছেন আবু তাহের বুলবুল। গত আড়াই বছর আগে তিনি গাবতলী উপজেলার কলাকোপা গ্রামে বিয়ে করেছেন। হয়েছেন এলাকার জামাই। 

তিনি বলেন, “মেলায় মাছের আমদানি কম। আরও বড় মাছ কেনার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু আমদানি তেমন না থাকায় কিনতে পারলাম না। শ্বশুরবাড়ী থেকে আমাকে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া হয়েছে। আর বাকি টাকা যা লাগছে তা দিয়ে বড় একটা মাছটা কিনেছি।”

গাবতলীর মড়িয়া গ্রামের রাফি বলেন, “মেলা উপলক্ষ্যে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা খরচ করা হয়। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ যার যত আত্মীয় স্বজন আছে প্রত্যেককেই দাওয়াত দেয়া হয়। তাই প্রতিটি পরিবার থেকেই বড় আকারের মাছ কেনার এক প্রকার প্রতিযোগিতা থাকে। এছাড়া একেকজন মিষ্টিও কেনেন ১০ থেকে ১৫ কেজি করে। যার বাড়িতে বেশি মেহমান উপস্থিত হয়, সে বাড়িতে এক মণ মিষ্টিও কেনা হয়।

মাছ ব্যবসায়ী সুজন বলেন, “আমরা প্রতি বছর সিরাজগঞ্জ থেকে যমুনা নদীর বড় বড় মাছ নিয়ে আসি। এবার মাছের দাম একটু কম। আমরা পাঙ্গাস, কাতল, চিতল, আইড়, রুই, ব্রিগহেড মাছ নিয়ে এসেছি। প্রতি বছর ১৫-২০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। এবার করতে পারব বলে আশা করছি।”

মাছের মেলাকে ঘিরে বসে মিষ্টির মেলাও, সাথে থাকে গ্রামীণ মেলার নানা উপসঙ্গ

মিষ্টি বিক্রেতা আব্দুল বারী জানান, ১০ লাখ টাকার মিষ্টি বিক্রির টার্গেট তার। তার কোন মিষ্টি ফেরত যায় না। সব বিক্রি হয়ে যায়। তার দোকানে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত মিষ্টি রয়েছে। মাছ আকৃতির মিষ্টিগুলোর ওজন ১০ কেজি থেকে ১৫ কেজি করে। এই মিষ্টিগুলোই ৫০০ টাকা কেজি। আর লাভ আকৃতির মিষ্টি ৩০০ টাকা করে কেজি।

মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, “মেলাটি মূলত মাছের। মেলায় প্রায় ৫০০টি মাছের দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোতে একদিনে পাঁচ কোটি টাকার মতো লেনদেন হবে।”

গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিক ইকবাল বলেন, “মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ