জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও তাঁর স্ত্রী রোকসানা কাদেরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া পুলিশের রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আবদুল বাতেন ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন আজ বুধবার এই আদেশ দেন।

মুজিবুল হক চুন্নু ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন দুদকের পরিচালক আবুল হাসনাত। আবেদনে বলা হয়, সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও তাঁর এপিএস আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার–বাণিজ্য, জমি দখলসহ দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক জানতে পেরেছে, মুজিবুল হক, তাঁর স্ত্রীসহ অন্যরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শুনানি নিয়ে আদালত মুজিবুল হক ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

সাবেক ডিআইজি বাতেনের সম্পদ ক্রোক

দুদকের তথ্য বলছে, আবদুল বাতেনের নামে থাকা রাজধানীতে দুটি ফ্ল্যাট, একটি প্লট ও ১৮৬ শতক জমি ক্রোকের আদেশ হয়েছে।

অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল বাতেনের দ্বিতীয় স্ত্রী নূরজাহান আক্তারের নামে দুটি ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেছে। সেই দুটি ফ্ল্যাটও ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবদুল বাতেনের জমির বড় একটা অংশ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় অবস্থিত। দুটি ফ্ল্যাটের একটি রমনায়, অন্যটি মগবাজারে। এ ছাড়া তাঁর নামে সাতটি ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পেয়েছে দুদক। সেগুলোয় ৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা জমা হয়। আর উত্তোলন করা হয় ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাতেনের দ্বিতীয় স্ত্রী নূরজাহানের চারটি ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা জমা হয়। আর তুলে নেওয়া হয় ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ওই সময় পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক ছিলেন মো. আবদুল বাতেন। পরে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ব ত ন ম জ ব ল হক

এছাড়াও পড়ুন:

সব গরু বিক্রি করে দিলেন সেই ডিআইজি প্রিজন

নিজের বাংলোতে গড়ে তোলা খামারের সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান। গতকাল মঙ্গলবার ১২ লাখ টাকায় তিনি খামারে থাকা গরু–বাছুর বিক্রি করে দেন। ফলে সরকারি বেতনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আর ডিআইজি প্রিজনের গরুর খামারে কাজ করতে হচ্ছে না।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রশিদ আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যারের খামারে থাকা সব গরু বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের গরুর খামারে আর কোনো কাজ নেই।’

গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘চট্টগ্রাম কারাগারে দুধ বিক্রি করছেন ডিআইজি প্রিজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাবিধি অনুযায়ী, কোনো কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দীদের কাছে কোনো সামগ্রী বিক্রি কিংবা ভাড়া দিতে পারেন না। তা ছাড়া এভাবে তরল দুধ সরবরাহ করা বন্দীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক কারা কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান চট্টগ্রামে যোগ দেন গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহ থেকে বদলি হয়ে আসার সময় গরুগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব সীমানাদেয়াল–সংলগ্ন এলাকায় নিজের কার্যালয় ও বাংলোর পাশে খামার গড়ে তোলেন তিনি। খামারে উৎপাদিত দুধ তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বিক্রি করে আসছিলেন।

কারাগারে বাইরে থেকে দুধসহ রান্না করা কোনো খাবার কারাবন্দীদের দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান সে নিয়ম মানেননি। ১০ মাস ধরে নিয়মিত তাঁর খামার থেকে গড়ে ২০ লিটার করে দুধ কারা ক্যানটিনে সরবরাহ করা হতো। বাইরে খুচরা মূল্য ৮০ টাকা লিটার, পাইকারি দর ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ডিআইজি প্রিজন কারাগারে বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা দরে। সেই হিসাবে দৈনিক ২ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করতেন তিনি।

প্রথম আলোয় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কারাগারে দুধ বিক্রি বন্ধ করে দেন ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান। এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের ৬৮ কারাগারে গরু পালনে সরকারি কর্মচারী ও অর্থ ব্যবহার না করতে নির্দেশনা জারি করেছে কারা অধিদপ্তর। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সই করা এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, কারা কর্মকর্তারা গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিবিধান অনুসরণ করছেন না। এখন থেকে গরু পালনের ক্ষেত্রে কারা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে কারা মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি মানতে হবে কিছু শর্ত। এগুলো হলো কারাগারে দুটির বেশি গরু পালন করা যাবে না, কারা এলাকায় গরু পালনের ক্ষেত্রে কারাগারের পরিবেশ কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না, গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারী নিযুক্ত করা যাবে না, ব্যয় করা যাবে না সরকারি কোনো অর্থ, ব্যক্তিগত গরু পালনের কাজে বন্দীদের ব্যবহার করা যাবে না, সরকারি কোনো স্থানে ঘাস চাষ করা যাবে না, গরু পালন কাজে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুৎ বিল ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করতে হবে, গরুর সংখ্যা দুইয়ের অধিক নেই এবং নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে—প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে লিখিত প্রত্যয়ন দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সব গরু বিক্রি করে দিলেন সেই ডিআইজি প্রিজন