চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রীর হাতে লাঞ্ছিত হওয়া সহকারী প্রক্টর ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলীকে কটাক্ষ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘Cu Nonpolitical Memes’ নামের একটি ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ভুক্তভোগী প্রক্টরকে ‘সহকারী পটখোর’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে।
র গায়ে থাপ্পড় দিয়ে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠেছে শেখ হাসিনা হলের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায়
গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ওই পেজটি থেকে ভুক্তভোগী প্রক্টরকে কটাক্ষ করে পোস্টটি করা হয়। এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা এনায়েত এমি তাকে লাঞ্ছিত করেন।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) লাঞ্ছিতের ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এরপর অভিযুক্ত ছাত্রী আফসানা এমির শাস্তিসহ শিক্ষককে নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো ও কটাক্ষ করার অভিযোগে ওই পেজটির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কটাক্ষ করে ওই পোস্টে বলা হয়েছে, “নিজের ব্যস্ততাকে কোরবানী করে কুরবান আলী স্যার ননপলের পাঠচক্রে সময় দেবে বলে নিশ্চিত করেছেন। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় ভিসি ভবনের ডাইনিং টেবিলে পাঠচক্রটি অনুষ্ঠিত হইবে।”
আরো বলা হয়েছে, “কীভাবে প্রতিপক্ষকে লীগের ট্যাগ দেবেন, কী কী ভাষা প্রয়োগ করবেন বিস্তারিত আলোচনা করবেন স্যার। এই পাঠচক্রে যারা আসবেন, আসার পূর্বে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হল’ গেটে তালা দিয়ে আসার অনুরোধ রইলো। তাহলে ভাগ্য ভালো হইলে ঐ রাতেই জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের ছাত্রীদের ওপর ট্যাগ প্রয়োগের প্র্যাক্টিক্যাল দেখাতে পারবেন মাননীয় ট্যাগ বিশেষজ্ঞ নিজের ব্যস্ততাকে কোরবানী দেওয়া কোরবান আলী স্যার।”
এছাড়া পোস্টে ভুক্তভোগী সহকারী প্রক্টরকে কটাক্ষ করে একটি ছবি যুক্ত করা হয়। সেখানে তাকে ‘সহকারী পটখোর’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “ট্যাগ দেওয়ার ১০১টি সহিহ উপায় শিক্ষা দিবেন তিনি।”
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের নামফলক ও হলের সামনে কংক্রিট নির্মিত নৌকা ভাঙতে যান। এ সময় সহকারী প্রক্টর ড.
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যে ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টরের গায়ে হাত তুলেছে। তার বিরুদ্ধে না বলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে লেগে যায় পেজটি। অথচ শিক্ষক ভুক্তভোগী। শিক্ষকের গায়ে থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও পরে তার একটি মন্তব্য নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানহানি করা হয়। আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এমন বয়ান তৈরি করা হচ্ছে। পেজটিতে এর আগেও বিভিন্ন সময় তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করা হয়েছে। তাই এ পেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সানু আক্তার নদী বলেন, ঘটনার পরদিন থেকে কয়েকটা গ্রুপে, বিশেষ করে নন-পলিটিক্যাল মিমস পেজে শিক্ষকদের নিয়ে যেভাবে একের পর এক কন্টেন্ট প্রচার করা হচ্ছিল, তা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য অনেক লজ্জার। ঘটনার বিস্তারিত না জেনেই এভাবে একজন শিক্ষককে হেয় করা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ পেজসহ আরো যারা এমন অপপ্রচার চালিয়েছে ও কটাক্ষ করেছে, সবাইকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।”
রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের জয়নুল আবেদীন ফাহিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে দায়িত্বরত বিভিন্ন শিক্ষককে নিয়ে ননপল পেইজের এসব কটাক্ষমূলক মন্তব্য নতুন নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ব্যক্তির মানহানির পর্যায়ে চলে যায়। হাস্য-রসাত্মক উপায়েও অন্যায়ের সমালোচনা করে থাকেন অনেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারো সহকারী প্রক্টরদের ‘পটখোর’ নামে অভিহিত করাসহ বিভিন্নভাবে ব্যক্তি আক্রমণ করে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে পেজটি বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পেইজ থেকে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক পোস্টে বলা হয়েছে, “ঘটনার সময় কুরবান আলী স্যারের ব্যবহার, ট্যাগিং দেখে তিনি যে শিক্ষক অনেকে বোঝেইনি। কেউ কেউ তাকে দারোয়ান ভেবেছে। ট্যাগিং করলে দারোয়ান ভেবে মারা জায়েজ? একদমই না। অনেক দিন আগে দুই নম্বর গেটে ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি দারোয়ানকে মেরেছিল, তখনও তার বহিষ্কার দাবি করেছিল ননপল। একই যুক্তিতে গায়ে হাত তোলার জন্য ওই মেয়েকে বহিষ্কার করা উচিৎ মনে করে ননপল।”
আরো বলা হয়েছে, “যে ইথিক্সে মেয়ের শাস্তি চায় ননপল, একই ইথিক্সে দুইজন সহকারী প্রক্টররের বডি থেকে পদত্যাগ চায়। জঘন্যভাবে এতোগুলো মেয়েকে ট্যাগিং, তুই তোকারি করার পরও তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার কোনো গ্রাউন্ড দেখি না।”
ভুক্তভোগী শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. কুরবান আলী বলেন, “আমরা প্রশাসনে এসে কারো পক্ষে কাজ করছি, এমন অভিযোগ বা প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে অনবরত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কারো প্রতিপক্ষ নই।”
তিনি বলেন, “সেদিনের ঘটনা আপনারা সরাসরি ও ভিডিওতে দেখেছেন। শুধু ওই মেয়েটিই নয়, সেখানে আরো মেয়েরা আমার উপর মারমুখী ছিল। তারা আমাকে কোন কথাই বলতে দিচ্ছিল না। তারপরও আমাকে নিয়ে নন-পলিটিক্যাল মিমস পেইজটি থেকে পরপর মিথ্যা অপপ্রচার ও ভিত্তিহীন বিষয় ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “ওই পেইজটি থেকে বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের একজন সহকারী প্রক্টরকে নিয়ে বাজে শব্দে কটাক্ষ করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
তিনি বলেন, “আমরা জানি না এ পেজটি কে বা কারা চালাচ্ছেন। পেইজের এডমিনের পরিচয় যে কেউ আমাদের জানাতে পারে। এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এম. মিজানুর রহমান, চবি 01600909656
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকক সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
১৯০ বিঘা খাস জমি দখলে নিতে সংঘর্ষ, নিহত ১
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় খাস খতিয়ানের ১৯০ বিঘা জমির দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন। এ সময় শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত মো. মদিন মোল্লা (৫৫) উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের বড় ধুনাইল গ্রামের মৃত ছকির মোল্লার ছেলে। তাঁর লাশ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সরেজমিন জানা গেছে, বড় ধুনাইল গ্রামের ১৯০ বিঘা খাস খতিয়ানের জমি নিয়ে এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় হালিম ও জাফরের পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এরই জেরে গত শনিবার দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শাহজাদপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।
রোববার সকালে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফের সংঘর্ষে জড়ায়। এতে মদিন মোল্লা নিহত হন। আহত হয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক (৪৫), ইনজামুল হক (২৬), আলতাব (৫৭), বাবলু মোল্লাসহ (৪৫) অন্তত ১০ জন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জাফরের পক্ষের মদিন মোল্লার মৃত্যুর খবরে হালিম পক্ষের লোকজন গ্রাম ছেড়ে চলে যান। এ সুযোগে জাফর পক্ষের লোকজন বিভিন্ন বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার বিষয়ে জানার চেষ্টা করেও দু’পক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
খতিয়ানের জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হালিম ও জাফর পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শাহজাদপুর থানার ওসি মো. আছলাম আলী।
তিনি বলেন, শনিবারের সংঘর্ষ পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনলেও রোববারের সংঘর্ষে মদিন মোল্লা নামে একজন নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।