চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা থেকে তাঁকে নগরের চান্দগাঁও থানার বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে এ মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফার আদালতে হাজির করা হয় সাবেক এই পুলিশ কমিশনারকে। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বর্তমান কমিশনার হাসিব আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নগরের চান্দগাঁও থানায় গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ মামলায় সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে চান্দগাঁও থানার হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে তিন দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নগরের চান্দগাঁও থানায় নিহত হৃদয় তরুয়ার বন্ধু আজিজুল হক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ২০৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছর ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া অংশ নেন। ওই দিন চান্দগাঁও এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে আহত হন হৃদয়। গত ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসামিদের অনেকে হামলায় যোগ দেন।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষার্থীসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন পাঁচ শর বেশি মানুষ। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে ৮২টির বেশি মামলা হয়। এসব মামলায় একাধিক সাবেক সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, ফজলে করিম, আবু রেজা নদভী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রচ্ছদ হলো গুলিবিদ্ধ নাফিসের সেই ছবির স্কেচ

রিকশার পা-দানিতে গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজের নিথর দেহ পড়ে থাকার স্কেচ (আঁকা ছবি) এবার স্থান পেল জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে ১২৭ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।

গত ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন গোলাম নাফিজ। ‘‘গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজ রিকশার পা-দানিতে পড়ে আছেন। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।’’

১৭ বছর বয়সি নাফিজের এ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবি দেখেই নাফিজের মা-বাবা সন্তানের খোঁজ পান। যদিও মা–বাবা নাফিজের খোঁজ যখন পান, তখন সে আর বেঁচে ছিল না।

দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজকে পুলিশ যখন রিকশার পা-দানিতে তুলে দেয়, তখনো সে রিকশার রডটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ তাকে নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের একটি হাসপাতালে ঢুকতে গেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বাধা দেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক। পরে নাফিজকে নিয়ে রিকশাচালক খামারবাড়ির দিকে চলে যান।

গোলাম নাফিজ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে গুলিতে মারা যান। তিনি রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। পরিবারসহ থাকতেন মহাখালীতে। দুই ভাইয়ের মধ্যে নাফিজ ছোট।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ